জালিয়াতির কথা স্বীকার করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন ইউনূস, যা জানা গেল
প্রকাশিত : ১৫:০২, ১৭ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ১৫:০৫, ১৭ মার্চ ২০২৫

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এখন নিজে শিকার করছে”। প্রচারিত ভিডিওটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলতে শোনা যায়, “আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি”। এছাড়াও প্রচারিত ভিডিওটিতে দাবি করা হয়, সেনাপ্রধানের নির্দেশে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাড়ে ৪ লাখের অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৩০ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে ড. ইউনূসের স্বীকারোক্তির দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যটি আদতে ড. ইউনূসের স্বীকারোক্তির নয় বরং, তার ওপর আনীত অভিযোগ উল্লেখপূর্বক ড. ইউনূসের পুরোনো একটি ভিডিওর বক্তব্য কেটে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া, ভিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক ফাইল ফুটেজ প্রচার করে সেনাপ্রধানের নির্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ড. ইউনূসের স্বীকারোক্তির দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত দৃশ্যটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৩ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ড. ইউনূসের বক্তব্যটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও হিসেবে প্রতীয়মান হলেও ড. ইউনূসের ফেসবুক পেজে উক্ত ভিডিওটির দীর্ঘ সংস্করণ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ড. ইউনূস আলোচিত মন্তব্যটি করলেও তিনি স্বীকারোক্তি হিসেবে মন্তব্যটি করেননি বরং, তার ওপর আনীত অভিযোগের উল্লেখ করতে আলোচিত মন্তব্যটি করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আজকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দুর্নীতির। আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি এ রকম বহু ভয়াবহ শব্দ আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। আপনারা আমাকে বহুদিন থেকে চেনেন, এ অপরাধগুলো আমার গায়ে লাগানোর মতো অপরাধ কিনা আপনারাই বিবেচনা করবেন। আগে যে রকম আপনারা বিবেচনা করেছেন”।
এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা’র ওয়েবসাইটে গত বছরের ০২ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২ মে ২০২৪) দুপুরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ জামিন শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সামনে ড. ইউনূস বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দুর্নীতির। আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি—এ রকম বহু ভয়াবহ শব্দ আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ড. ইউনূসের উক্ত মন্তব্যটি স্বীকারোক্তিমূলক ছিল না। বরং তিনি তার ওপর আনীত অভিযোগ উল্লেখ করছিলেন। তাছাড়া, প্রচারিত দৃশ্যটিও বিগত সরকারের আমলের।
এছাড়া, সেনাপ্রধানের নির্দেশে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন ড. ইউনূস দাবিতে প্রচারিত একটি ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ওয়েবসাইটে গত বছরের ০৬ অক্টোবরে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, “রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: আইএসপিআর”। একইভাবে অন্যান্য ছবিগুলো রিভার্স ইমেজ সার্চ করলেও আলোচিত দাবির সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, পুরোনো, বিকৃত ও অপ্রাসঙ্গিক ছবি ও ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে ড. ইউনূস অর্থ পাচার, আত্মসাৎ ও জালিয়াতি স্বীকার করেছেন ও সেনাপ্রধানের নির্দেশে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন; যা মিথ্যা।
এএইচ