ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৫৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মোগল আমলের শেষ দিক থেকে আজ পর্যন্ত স্বাদে গন্ধে অনন্য নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা তার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে। এটি নরসিংদী জেলাকে করেছে সমৃদ্ধ। ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি সনদ পেয়েছে স্বাদে গন্ধে অনন্য নরসিংদীর এ সুস্বাদু অমৃত সাগর কলা।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা’র ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। এরপর রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রী পরিষদের সভার শুরুতে নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা’র জিআই সনদ সরকার প্রধানের হাতে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও সচিব জাকিয়া সুলতানা।

নরসিংদী জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার ৫৮০ হেক্টর জমিতে নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী এ অমৃত সাগর কলার চাষাবাদ করা হয়েছে। এ কলা চাষাবাদের জন্য সাধারণত দোআঁশ মাটি, বেলে দোআঁশ মাটি অধিক উপযুক্ত। নভেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ অমৃত সাগর কলা’র চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বলে ধরা হয়।

চারা রোপণের পর থেকে ৬-৭ মাসের চাষের প্রক্রিয়া ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ ফলনে রূপ নেয় এ অমৃত সাগর কলা।

নরসিংদীর মনোহরদীতে দোআঁশ মাটি, বেলে দোআঁশ মাটির উপস্থিতি বেশি হওয়ায় এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশী অমৃত সাগর কলা’র চাষাবাদ হয়। তাছাড়া বেলাব, পলাশ উপজেলায়ও অমৃত সাগর কলা চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।

নরসিংদী জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর-এর জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ জানান, চলতি বছর ৫৮০ হেক্টর জমিতে অমৃত সাগর কলার চাষাবাদ করা হয়েছে। পানামা ও সিগাটোগা রোগের কারণে এ কলার ফলন অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। তবে কৃষকদের এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে ট্রেইনিং ও পরামর্শের মাধ্যমে ফলন আবার বাড়তে শুরু করেছে। 

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এ অমৃত সাগর কলা দেশে ও দেশের বাহিরে রপ্তানিতে ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

ই-কমার্স ডেভেলাপমেন্ট সেন্টারের (ইডিসি) প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার বলেন, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এর পুরো কৃতিত্ব ইডিসি টিম, জেলা কৃষিসম্পসারণ অধিদপ্তর, নরসিংদীর জেলা প্রশাসনসহ নরসিংদীবাসী সকলের। ইডিসি থেকে আমাদের ডকুমেন্টেশান এবং আবেদন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখার সুযোগ হয়েছে ঠিকই কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের সম্পূর্ণ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। উনারা জিআই স্বীকৃতির কাজে ইডিসিকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। 

ইডিসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয় ব্যক্তিগতভাবে আমি বলবো, নরসিংদীর মেয়ে হিসেবে নরসিংদীর অমৃত সাগর কলার জিআই স্বীকৃতিতে অবদান রাখতে পেরে ভালো লেগেছে। এ ভালোলাগা অন্যরকম যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।

এর আগে গত বছরের ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী জেলাপ্রশাসক অফিসে (তৎকালীন) জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খানের মিটিংয়ে নরসিংদীর সম্ভাব্য জিআই পণ্য নরসিংদী অমৃত সাগর কলা ও লটকন নিয়ে ইতিবাচক আলোচনার মধ্য দিয়ে ই-কমার্স ডেভেলাপমেন্ট সেন্টারের (ইডিসি) টিম ও জেলা কৃষিসম্পসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: আজিজুর রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় ই-কমার্স ডেভেলাপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি) প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন। 

পরবর্তীতে ২৯ আগস্ট ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ইডিসির সার্বিক সহযোগিতায় নরসিংদীর লটকন ও অমৃত সাগর কলা এ দুটি ফলকে নরসিংদীর ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান।

উল্লেখ্য, কোনো দেশের নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জিআই স্বীকৃতি খুব তাৎপর্যপূর্ণ।

২০০৩ সালে বাংলাদেশে এ কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে একে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) নামে অভিহিত করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের ফলে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ পাস হয়। 

এর দুই বছর পর ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়। এরপর বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ২০১৬ সালে জামদানি শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। 
সর্বশেষ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আরও চারটি জিআই পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাদে গন্ধে অনন্য খেতে স্বুসাদু নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ মোট ২৮টি  অনুমোদিত জিআই পণ্যের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি