ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

ঝর্ণা, পাহাড় ও নদীর মেলবন্ধন মিরসরাই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৪৪, ৩ মে ২০২২

পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের মোহনা, পূর্বে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থান চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা। এই জনপদে রয়েছে প্রকৃতির নান্দনিকতা। অবসর কাটাতে কিংবা ঈদের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম মিরসরাই।

এখানে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত পর্যটন স্পটগুলো। রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া বোটানিক্যাল গার্ডেন ও সেচ প্রকল্প। দেশের ষষ্ঠ সেচ ও প্রথম বিদ্যুৎ প্রকল্প মুহুরী প্রজেক্ট আট স্তর বিশিষ্ট জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও বাওয়াছড়া  প্রকল্প।

মহামায়া লেক

লেক, পাহাড় ও ঝরনা যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য মিরসরাই পর্যটন স্পটগুলো যথার্থ। এই ঈদে কোলাহল ছেড়ে একদিনের জন্য ঘুরে আসুন পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে।

মহামায়া কৃত্রিম লেক। এটি একটি সেচ প্রকল্প। রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পরে বাংলাদেশের অন্যতম লেক মহামায়া।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রবেশদ্বার মিরসরাই উপজেলার আট নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

মহামায়া প্রকল্পে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝর্না ও রাবার ড্যাম। মহামায়া লেকের আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার।

 

ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই লেক। লেকের অন্যতম আর্কষণ পাহাড়ি ঝরনা ও স্বচ্ছ পানি। মহামায়া লেকের নীল জলরাশিতে ছোট  ছোট ডিঙ্গি নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা দেখতে পাবেন। সে নৌকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরা যায়। 

নৌকাতে বসে মহামায়া লেকের চারপাশের পাহাড় ও বিশাল জলরাশি আপনাদের মুগ্ধ করে তুলবে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে  হেলে পড়ে তখন লেকের পরিবেশটি খুবই চমৎকার লাগে। তাবু টানিয়ে লেকের উপর অবস্থান করতে পারবেন রাতে। আপনাকে মুগ্ধ করবে রাতের পরিবেশ।

কিভাবে যাবেন? 

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার অনেক বাস আছে। ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, আরামবাগ, সায়েদাবাদ থেকে এসি, ননএসি যে কোনো বাসে সরাসরি ঠাকুরদীঘি বাজার অথবা মিরসরাই বাজারে নামবেন। মিরসরাই বাজার থেকে লেগুনা অথবা লোকাল উত্তরা বাসে উত্তর দিকে এসে ঠাকুরদীঘি বাজারে নামবেন। সেখানস থেকে সিএনজি-অটোরিক্সায় পূর্ব দিকে মহামায়া লেকে যেতে পারবেন। 

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

ভ্রমণপিপাসু মানুষদের জন্য অন্যতম স্থান হলো খৈয়াছড়া ঝর্না। ইতোমধ্যে এটি বাংলাদেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। সবুজের চাদরে ঢাকা, প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুমঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝর্নাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তোলে।

গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নিতে পারেন।

মিরসরাই উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝর্নার অবস্থান। এর মধ্যে কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ পায়ে হেটে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকো, ক্ষেতের আইল, আকাবাকা পাহাড়ি ঝিরি পথ, ছরা ও অন্ত চারটি পাহাড় পেরিয়ে যখন ঝর্নার স্বচ্ছ জলে গা ভেজাবেন তখন মনে হবে এ দূরত্ব খুবই সামান্য।

খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা।

মুহুরী নদী

প্রকৃতির আরেক নিদর্শন মুহুরী নদী। যেখানে আছে আলো-আঁধারির খেলা। এখানে এলে দেখবেন জীবন-জীবিকার বিভিন্ন চিত্র। এর আশেপাশে রয়েছে ছোট ছোট অনেক প্রকল্প।

নদীর এপারে মিরসরাই, ওপারে ফেনী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে। পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়ানিয়া প্রকৃতি। নৌকায় ভর করে কিছু দূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা বক।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (পুরনো) জোরারগঞ্জ বাজারে নেমে ধরতে হবে সংযোগ সড়কের পথ। জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক নামে এ সড়কে দেখা মিলবে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা।

কাবাকা সড়ক পাড়ি দিতে হবে প্রায় আট কিলোমিটার। এরপর মুহুরী প্রকল্পের বাঁধ। যেতে  যেতে দুই কিলোমিটার পরই  দেখা মিলবে আসল সৌন্দর্য।

বাওয়াছড়া লেক

মিরসরাই উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর বাওয়াছড়া পাহাড়িয়া এলাকায় যুগ যুগ ধরে এ ঝর্না প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ স্থানে ছুটে আসেন শত শত পর্যটক।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় কমলদহ বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে বাওয়াছড়া লেক অবস্থিত।

এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন উপজেলার নয়দুয়ারিয়া পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত নাপিত্তাছড়া ঝরনা ও বড়কমলদহ রূপসী ঝরনা।

প্রকৃতির ভারসাম্যতায় মানবজাতির বেঁচে থাকা। স্বস্তির শ্বাস বুকে প্রশান্তির বাতাস। তাই প্রকৃতিকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। অপচনশীল দ্রব্য এবং বোতল ফেলে প্রকৃতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবো না।

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি