টাকা-তদবির ছাড়াই এনবিআরে চাকরি পেলেন ৩৩ জন
প্রকাশিত : ১২:৩১, ২৫ জুন ২০২৩ | আপডেট: ১২:৩৫, ২৫ জুন ২০২৩
মডলে ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-১২। মাত্র নয় দিনে সব নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি। লিখিত পরীক্ষা আর তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন ৩৩ জন চাকরিপ্রার্থী। নিয়োগ পেতে তাদের অনলাইনে আবেদনের খরচ ছাড়া আর কানাকড়িও খরচ করতে হয়নি।
সরকারি চাকরি যেখানে সোনার হরিণ, সেখানে তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীর এই নিয়োগ পেতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩৩৪ টাকা। আর চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারীর খরচ হয়েছে মাত্র ২২৩ টাকা। ‘সদিচ্ছা, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকলে দক্ষ এবং মেধাবী জনবল নিয়োগ করা যায়’-এমনটাই করে দেখিয়েছেন অঞ্চল-১২ এর কর্মকর্তারা।
কর বিভাগে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নিয়োগকে ‘মডেল’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব ও উপ কর কমিশনার মেহেদী মাসুদ ফয়সাল জানান, কর অঞ্চল-১২ জনবল নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যাতে গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত নয় ক্যাটাগরিতে ৩৪ জন কর্মচারী নিয়োগ করার কথা বলা হয়। নিয়োগ প্রার্থীদের টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন করতে ‘৩০ দিন’ সময় দেয়া হয়। আবেদনের ক্ষেত্রে ১১ গ্রেডের ৩৩৪ টাকা, ১৩ থেকে ১৬ গ্রেডে ২২৩ টাকা ও ২০ গ্রেডে আবেদনে ১১২ টাকা খরচ নেয়া হয়। এর বাইরে কোন প্রার্থীকে অতিরিক্ত কোন টাকা দিতে হয়নি।
অনলাইনে আবেদন করায় প্রার্থীদের ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার দিতে হয়নি। ডাকযোগে পাঠাতে হয়নি কাগজপত্র। নয় ক্যটাগরিতে ৩৫ জনের বিপরীতে ‘৯ হাজার ৬১৫ জন’ আবেদন করেন।
তিনি আরও জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে’ রাখতে এবং স্বচ্ছভাবে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদানে কঠোর নির্দেশনা দেন কমিশনার। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ কমিটি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেন। যার ফলে নিয়োগটি মডেল নিয়োগ হিসেবে কর বিভাগে আলোচিত হয়েছে।
লিখিত পরীক্ষার কোডিং করা খাতা মূল্যায়নের পর ডিকোড না করেই উত্তীর্ণ প্রার্থীদের খাতাগুলো আলাদা করা হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সংখ্যা নিশ্চিত করার পর ফলাফল প্রকাশের জন্য ডিকোড করে সাথে সাথেই খাতাগুলো সিলগালা করা হয়। যা মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সময় সিলগালা খাম খোলা হয়। সারারাত লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখে সকালে ফলাফল প্রকাশ করার পর কর্মকর্তারা বাসা গিয়েছেন। প্রতিদিনের ভাইভা নেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
মেহেদী মাসুদ ফয়সাল জানান, ৩১ মে ও ১ জুন তৃতীয় শ্রেণির এবং ৩ জুন চতুর্থ শ্রেণির ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রতিদিন যেই পরীক্ষা হতো, তাতে যারা উত্তীর্ণ হতো ওইদিন উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হতো। মৌখিক পরীক্ষা শেষে সব ধরণের কোটা অনুসরণ করে ৩৩ জনকে চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ কর অঞ্চলের ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তিনি আরও জানান, এত অল্প সময়ে একটি ভালো নিয়োগ উপহার দিতে টানা ৬০ ঘণ্টা নির্ঘূম ছিলাম। কোন ধরণের প্রভাব, তদবির ছাড়াই একদল মেধাবীকে ডিপার্টমেন্টে নিয়োগ দিয়ে টাকা ছাড়াই কর বিভাগে যে যোগ্যতার মাপকাঠিতে চাকরি পাওয়া সম্ভব, পরীক্ষার্থীদের মনে এই আস্থা অর্জন করাতে পারায় আমরা খুশি।
আগামী ১২ জুলাই কাজে যোগদান করবেন ভাগ্যবান এই ৩৩ জন।
এএইচ
আরও পড়ুন