ঢাকা, বুধবার   ২২ জানুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ: কেমন হতে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ বিশ্ব ব্যবস্থা?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৮, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ২০:৫৮, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা ও ভীতির দোলাচলে পড়েছে বিশ্ব রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ভূমিকা বিশ্বব্যবস্থার বর্তমান রীতিনীতি পাল্টে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখছেন অনেকে।

দর্শক, একুশে টেলিভিশনের বিশ্লেষণধর্মী আয়োজন ইটিভি ইনসাইটে আজ থাকছে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে - কেমন হতে যাচ্ছে বিশ্ব ব্যবস্থা, তার বিশ্লেষণ।

ট্রাম্প এমন এক সময় ক্ষমতায় আসছেন যখন কংগ্রেসের উভয় কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে অতিরক্ষণশীলদের শক্ত অবস্থান। তবুও ট্রাম্প নরমে গরমে শাসন করতে চাচ্ছেন। তিনি প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সমঝোতার রাজনীতিতে সরে আসার ইঙ্গিত দিলেন। 

ট্রাম্পের আগামীর শাসনকে বুঝতে হলে প্রথমে মাথায় রাখতে হবে ট্রাম্পের দৃষ্টি ভঙ্গি। বিশ্ব গণমাধ্যম একাধিক তাত্ত্বিক ট্রাম্পের বিদেশ নীতিকে তুলনা করছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ম্যাডম্যান ডিপ্লোম্যাসির সাথে। নিক্সনও ছিলেন ট্রাম্পের  রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত।

ট্রাম্পের নতুন মেয়াদ শুরুর আগেই যেভাবে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের মাঠে স্টিভেন উইটকফকে পাঠিয়ে রাতারাতি গাজায় যুদ্ধ বিরতিতে ইসরায়েলকে একপ্রকার বাধ্য করলেন তা অনেকে কাছে ম্যাডম্যান ডিপ্লোম্যাসি ছাড়া অন্য কিছুই নয়। ট্রাম্পের সামনের দিনগুলোতেও ট্রাম্পের বিদেশ নীতিতে এই ধরণের আচরণের প্রতিফলন থাকবে।

তিনি রাতারাতি অনেকটা হুমকি দিয়ে হলেও অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।
তবে ট্রাম্প যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা থেকে বোঝা যায়, তিনি বাইডেনের ইসরায়েলী আগ্রাসনের প্রতি শর্তহীন সমর্থনকেও ছাড়িয়ে যেতে চান। গাজায় গণহত্যা, ভূমি দখল, জাতিগত নিধন অভিযান এবং দখল করা পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের সম্প্রসারণ এবং বেআইনি সহিংসতা চলতে থাকলেও ট্রাম্প এই সমর্থন কমাবেন না।

ট্রাম্প ও তার মিত্ররা ইচ্ছামতো রাজনৈতিক নিয়োগ এবং অসংযত মন্তব্যের মাধ্যমে দৃশ্যত গাজায় ঝামেলা শেষ করতে চান। আর এই ঝামেলা শেষ করা মানে কেবল ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলা। তবে তাদের এই পদক্ষের আরবের জনগণকে আরও ফিলিস্তিনের পক্ষে নিয়ে আসবে।

এছাড়া ট্রাম্প তার শপথ নেয়ার পর থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের রাশ টানবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন ট্রাম্প তার ক্ষমতায় প্রথম ১০০ দিনে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারলেও ১৮০ দিনেই এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার আশা করা যায়। ট্রাম্প ইতোমধ্যে তার প্রথম মেয়াদে ডিল অফ দ্যা সেঞ্চুরির মতো কিছু নজির দেখিয়েছেন।

এদিকে চীনের সাথে ট্রাম্পের দ্বন্দ পুরোনো। তিনি ইতোমধ্যে চীনের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তার ভয় হচ্ছে, চীন সামনে আমেরিকার চেয়েও বড় অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ১ বছরে যত স্টিল ব্যবহার করে তার চেয়ে ৮ গুণ বেশি স্টিল ব্যবহার করে চীন। এদিকে ইলেকট্রিক কার উৎপাদনের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল চীনের নিয়ন্ত্রণে। 
ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক পূর্বাভাস করেছেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনের অর্থনীতির আকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ হবে।

এদিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের বিভিন্ন দেশের উপর তার শাস্তিমূলক পদক্ষেপ দেখা যেতে পারে। তার পরিকল্পনায় কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে চীনা পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের কথাও।

ট্রাম্প ইতোমধ্যে কানাডাকে আমেরিকার ৫০তম অঙ্গরাজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ ঘটনাপ্রবাহের জেরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। তাছাড়া গ্রীনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা কয়েকবার ব্যক্ত করেছেন। প্রয়োজনে আঙুল বাঁকিয়ে হলেও তিনি গ্রীনল্যান্ড নিতে চান। তাছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ জলপথ পানামা খাল দখলেরও প্রকাশ্য বাসনা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।

এদিকে ট্রাম্প তার নিজ দেশের অভিবাসীদের প্রতি মারাত্মক বিরূপ অবস্থান নিয়েছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ট্রাম্প ধীরে ধীরে আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশকে দেশ ছাড়া করার শপথ নিয়েছেন। তার এমন পদক্ষেপের ঘোষণায় আমেরিকানরা খুশি হলেও ১৩ মিলিয়ন অভিবাসী আমেরিকান জনগোষ্ঠীর কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। 

এদিকে আগামীতে চরম-শত্রু ইসরায়েল ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প ও তাঁর দল আন্তর্জাতিকতাবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প অতিরিক্ত জাতীয়তাবাদী এবং দেওয়া-নেওয়ার বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে কট্টর সমর্থন দেখিয়ে আসছেন।

ট্রাম্প বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোকে তাচ্ছিল্য করেন। দুনিয়াব্যাপী প্রকট হওয়া সমস্যাগুলোর সমাধানের প্রতি তাঁর বিশেষ কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তন বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়েও তিনি মাথা ঘামাতে আগ্রহী নন।

এভাবে চললে ট্রাম্পের আমলে জাতিসংঘ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়বে বলে অনেক বিশ্লেষক ধারণা করছেন। 

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে দীর্ঘস্থায়ীভাবে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা, বিশেষত আফগানিস্তানে কয়েক দশক ধরে মার্কিন উপস্থিতির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন। তার দোহা চুক্তির ফলাফল স্বরূপ আজ আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায়। 

তাই ট্রাম্পের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আমেরিকার স্বার্থ তথা United States Interest বজার রাখার প্রতি অধিক মনোযোগ দিবেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে যুদ্ধ না বাধিয়ে বরং কিভাবে মার্কিন স্বার্থ উদ্ধার করা যায় তার প্রতি হয়তো ট্রাম্পের আগ্রহ বেশি থাকবে। তবে চঞ্চল স্বভাবের ট্রাম্পের হুমকি যদি কোনো দেশ অবজ্ঞা করে তাকে চটিয়ে দেন, তাহলে কী ঘটবে তা বলা মুশকিল।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি