ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় করণীয়
প্রকাশিত : ১২:৪৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯
ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগের জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ধরন পাল্টাচ্ছে। চলতি শীত মৌসুমে জটিল ধরনের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রে এ সব রোগ সম্পর্কে সচেতনতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শীতের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশু ও বয়স্করা। তাদের ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যদের বেশি সজাগ থাকতে হবে।
সতর্ক থাকতে হবে ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে। জীবাণু ও ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনও রোগের উপসর্গ দেখা দিলে নিজে থেকে কোনও ওষুধ গ্রহণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এবং ওই পরামর্শ মেনে ওষুধ নেওয়ার বিকল্প নেই।
জটিল রোগের কোনোটি ভাইরাস আবার কোনোটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে মানবদেহে বাসা বাঁধে। সর্দি, ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস, মধ্য কর্ণের প্রদাহ, সাইনাসের প্রদাহ, নিউমোনিয়া, চিলব্লেইন্স, ঠোঁট ফেটে যাওয়া, সিজনাল এফেক্টিভ ডিস-অর্ডার, আর্থ্রাইটিস, হাড় জোড়ায় ব্যথা, এনসেফালাইটিস ইত্যাদি রোগ শীত মৌসুমে বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া হৃদরোগীর ক্ষেত্রে বেশি ঠাণ্ডা অনেক সময় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মনে রাখতে হবে, শীতে বিশেষভাবে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়। শুষ্ক আবহাওয়া বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা, শুষ্ক বাতাস হাঁপানি রোগীর শ্বাসনালি সরু করে দেয়। ফলে হাঁপানির টান বেড়ে যায়। এ ছাড়া ঠাণ্ডায় গলাব্যথা, গলায় খুসখুস ভাব ও শুকনো কাশি দেখা দেয়। নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে এবং ঘন ঘন হাঁচি আসে। হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, দুর্বল ভাব ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কোনও কোনও রোগ একজন থেকে আরেকজনের মধ্যেও ছড়ায়। সে দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী যারা আক্রান্ত, তাদের অবশ্যই বাসায় রাখতে হবে। বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঠাণ্ডায় ফুসফুস, সাইনাস, কান এবং টনসিলের প্রদাহও বাড়ে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে অ্যান্টিবায়োটিক কেবল ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করবে। ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিকে কোনও কাজ দেবে না। ফলে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে কেবল ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়েই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
শীতের সময়টাতে ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা, কুসুম গরম পানি পান করা, হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা, প্রয়োজনমতো গরম কাপড় পরা, কান-ঢাকা টুপি পরা, গলায় মাফলার ব্যবহার করা, ধুলাবালি এড়িয়ে চলা, ধূমপান পরিহার করা, ঘরের দরজা-জানালা সব সময় বন্ধ না রেখে মুক্ত ও নির্মল বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, হাঁপানির রোগীরা শীত শুরুর আগেই চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রতিরোধমূলক ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা, যাদের অনেক দিনের শ্বাসজনিত কষ্ট আছে, তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোকক্কাস নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া, তাজা ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
শীতকালে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুঘটিত, ভাইরাসজনিত, ছত্রাক বা ফাঙ্গাসসংক্রান্ত কারণে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়াটা জরুরি।
লেখক: সাবেক ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।