ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে মন খারাপ!

প্রকাশিত : ১৩:৩৬, ২৩ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১৪:০০, ২৩ মার্চ ২০১৯

বারেক সাহেবের মনটা খারাপ। ‘এ কেমন কথা? মাত্র এই কয়টা ভোট! এটা কোন কিছু হলো?’ কিছুতেই হিসাব মিলে না বারেক সাহেবের। তার দলের যে ছাত্র সংগঠন এক সময় দেশ দাপিয়ে-কাপিয়ে বেড়াতো আজ তার একি পরিনতি। বারেক সাহেবের বারবার মনে পড়ছে পিছনে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বেজে উঠলো ‘গন্ডগোলের’ দামামা। কি দরকার ছিল কে জানে? খামাখা ভিমরুলের চাকে ঢিল ছুড়ে বসলেন শেখ মুজিবুর রহমান আর আওয়ামী লীগ। ছেড়ে কথা বলবে কেন পাকিস্তানিরা? একেতো পৃথিবীর চার নম্বর সেনাবাহিনী, তার উপর দেখতে হবে না কারা যোগ দেয় সেই বাহিনীতে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অফিসার মানেইতো উচ্চবংশীয় পাঞ্জাবী আর সাচ্চা পাঠানরা। গ্রামের মাঠে-ঘাটে দৌড়ে, পুকুরে ডুব দিয়ে বেড়ে উঠা বাঙ্গালীদের ঠাই নাই সেখানে। এখনো পাকিস্তানি অফিসারদের কথা মনে পড়লে চোখ জুড়িয়ে আসে বারেক সাহেবের। ‘আহা জেনারেল নিয়াজী! আহা জেনারেল জানজুয়া!’ কি ফিগার এক একজনের। অমিতাভ, অভিষেক, সালমান, শাহারুখ সব ফেল। কাজেই ইট খেলে তারা যে পাটকেলটি ছুড়বে তাতে আর অবাক হবার কি? বরং বারেক সাহেবের মাঝে মাঝে মনে হয় পাকিস্তানিরা মাঝে একটু বেশিই ঢিলা দিয়ে দিয়েছিল। একাত্তরে তারা যে ভাবে মার দিতে শুরু করেছিল সেটা আরেকটু ভালোভাবে চালিয়ে গেলে তার মত সাচ্চা পাকিস্তান প্রেমিদের এত বেকায়দায় থাকতে হতো না।

একাত্তরে অবশ্য ভালই ছিলেন বারেক সাহেবেরা। বাবা ছিলেন এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। কাছেই ছিল পাকিস্তান আর্মির ক্যাম্প। মেজর সাহেব প্রায়ই দলবল নিয়ে তাদের বাসায় আতিথীয়তা গ্রহন করতেন। বাসা পাহাড়া দেয়ার জন্য ছিল রাজাকারদের একটি দল। ভালই পিকনিক-পিকনিক আমেজে একাত্তরের গন্ডগোলের সময়টা কেটেছে বারেক সাহেবের। ছোটখাট ঝুট ঝামেলা যে হয়নি তা নয়। একবার দু-তিনটা মুক্তিযোদ্ধা বৃষ্টির মধ্যে রাতের বেলা বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল। একজনকে ধরে ফেলেছিল রাজাকাররা। চাবুক পেটা করে বাজারের কাছে বড় বটগাছটায় পা বেধে ঝুলিয়ে রেখেছিল। ভাবলে বারেক সাহেবের এখনো অবাক লাগে - ধুকে-ধুকে মরেছে লোকটা, তারপরও একটি বারের জন্য ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলেনি!

বারেক সাহেবদের সময়টা খারাপ গেছে ৭২ থেকে ৭৫। তারপরতো আবার তাদেরই দিন। যাকে বলে ‘উ...লা...লা’! তবে রাজত্ব করেছে তার নতুন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা। দাবড়ে বেড়েছে দেশের প্রত্যেকটা ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে তাদের কথাই ছিল ‘ফরজে আইন’! হিজবুল বাহার জাহাজে চড়ে তারা প্রমোদ বিহারে যেত সিঙ্গাপুর। আর এইতো সেদিন - ডাকসু নির্বাচনে তার দলের ছাত্র সংগঠনের প্যানেলের মিছিল থেকে কি ‘রাম ধোলাইটাই’ না দেয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় ৭২’র পর আর ছাত্র রাজনীতি করা হয়ে উঠেনি বারেক সাহেবের। যোগ দিয়েছিলেন জামাতি-বামাতিদের নিয়ে জেনারেল সাহেবের হাতে গড়া নতুন ‘খিচুরী’ দলে। নাম লেখাতে হয়েছিল মূল সংগঠনে। ৭৫’র পর ছাত্র রাজনীতি করতে না পারার দুঃখটা রয়ে গেছে তার। এখনো হিংসা হয় সে সময়কার তার দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের তাফালিংয়ের কথা মনে পড়লে।

অথচ সেই ছাত্র সংগঠনের আজ কি দুর্দশা। কেন্দ্রীয় আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সব নেতারাই ‘আদু ভাই’। ছাত্রত্ব নাই বলে এবারের ডাকসু নির্বাচনে দাড়াতে পারেনি এই ‘বুড়ো খোকারা’।  ভাড়াটে চ্যাংড়া ছেলেপুলে দিয়ে নির্বাচনে একটি পদেও জিতাতো দুরে থাক জিতা-জিতির ধারে কাছেও যেতে পারেনি একজনও।

ফেস বুকে একটা পোষ্ট দেখে মজা পেয়েছেন বারেক সাহেব। মানুষ নাকি তিন প্রকার - নর, নারী আর নুরু। আর এরাই শেষ-মেষ কিনা করলো হনুমানের কাজ। ‘লংকার পতন’ কিনা হলো এদের হাতেই। আর এ-ই যদি হবার ছিল তাহলে এদেরকেই নিজেদের প্যানেল থেকেই কেন মনোনয়ন দেয়া হলোনা সেটাও মাথায় ঢোকেনা বারেক সাহেবের। আচ্ছা অন্তত এই জগা-খিচুড়ী প্যানেলটাকে সমর্থন দিয়ে নিজেদের প্যানেলটা না দেয়াও কি বুদ্ধিমানের কাজ হতো? ‘কেন এই কদিন আগেও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অদ্ভুতুরে আন্দোলন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়ি পোড়ানোয় ঠিকই সমর্থন দিয়েছিল তার দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা’। এজন্য ছাত্র রাজনীতিতে তার যেখানে হাতে খড়ি সেই ছাত্র সংঘের উত্তরসুরি আজকের ছাত্র শিবিরেরই ফ্যান বারেক সাহেব। কি সুন্দর প্রেস রিলিজ দিয়ে ‘হনুমান বাহিনীকে’ সমর্থন দিয়ে তাদের দু’একজনকে ঠিকই জিতিয়ে এনেছে তারা।

ডাকসুতে আলাদা প্যানেল দিয়ে নিজেদের ছাত্র সংগঠনের ‘ইজ্জতের অমন ফালুদা’ বানানোর দরকারটা কি  ছিল কিছুতেই মাথায় ঢোকেনা বারেক সাহেবের। ‘যাই ফালুদাই খেয়ে আসি, বহুদিন স্টারের ফালুদা খাওয়া হয় না’। ড্রাইভারকে গাড়ি ঘোরাতে বলে ঠোটে আলতো করে ঝুলানো বেনসনটায় আনমনে আগুন ধরান বারেক সাহেব।  

লেখক: হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি