ডাকাত যখন ধর্মযাজক
প্রকাশিত : ১৪:৫৮, ২৮ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৩:০৪, ২৯ মে ২০১৮
তাতসুয়া সিন্দো । জাপানে ডাকাত সিন্দো নামেই বেশি পরিচিত তিনি। মদের ব্যবসা ছেড়ে তিনি এখন পুরোদমে ধর্মগুরু।এমন কি তার মদের বারটি এখন প্রার্থনা কক্ষ।
জাপানের রাজধানী টোকিওর ছোট্ট শহর কাওয়াগুচি। শহরের এক প্রান্তের একটি মদের বারের দরজায় লেখা ‘জুন ব্রাইড’। পঁচিশ বছর ধরে এ অঞ্চলের অধিবাসীর কাছে নিরিবিলি সময় কাটানোর এটাই একমাত্র স্থান।
দীর্ঘদিনের পরিচিত বারটির বাইরে তেমন পরিবর্তন না এলেও এর ভেতরে এসেছে আমূল পরিবর্তন। বার ও মঞ্চের জায়গায় এখন ভিন্নধর্মী আসবাবপত্র। কারণ জুন ব্রাইড আর এখন মদ বিক্রির দোকান নয়, এটি বর্তমানে একটি উপাসনালয়।
জুন ব্রাইডের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকেই সেনসি তাতসুয়া সিন্দো দু’হাত তুলে সবার জন্য প্রার্থনা করেন- এমন দৃশ্য এখন নিত্যদিনের। ৪৪ বছরের সিন্দোকে দেখলে এখনও তরুণ মনে হয়।
সিন্দোর চারপাশে এখন যারা ভিড় করে ধর্মকথা শুনছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের সঙ্গে অতীতে তার শত্রুতা ছিল।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে মাফিয়া গ্যাং ইয়াকুজাতে যোগ দিয়েছিলেন সিন্দো।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিবছর দশ হাজারেরও বেশি জাপানি তরুণ ইয়াকুজাতে যোগ দেয়।
সিন্দোর মতে, `কম বয়সী তরুণদের অধিকাংশই আসে ঝামেলাপূর্ণ পরিবারগুলো থেকে। আনুগত্য আর বিশ্বাস হল ইয়াকুজা পরিবারের অন্যতম ভিত্তি। কিন্তু সিন্দো যতই এই আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ভেতরে প্রবেশ করতে লাগলেন ততই বুঝতে পারলেন রক্তের মূল্য কতটা।
সিন্দো জানান তার খারাপ অনুভূতির কথা। তিনি বলেন,‘ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে আমার বসকে হত্যা করা হয়েছিল। মানুষের পায়ে গুলি করে অকেজো করে দেওয়া হয়েছিল।
আমার সঙ্গেই যে মানুষটি মাদক সেবন করত, সে বিষক্রিয়ায় মারা যায়। আত্মহত্যাও করেছে অনেকে।সামনে থেকে অনেক মৃত্যু দেখেছি আমি। যে মানুষটি অন্যকে হত্যার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিল তাকেও ছুরিকাঘাতে মরতে দেখেছি।’
সিন্দোর পুরো শরীরে তার অতীত জীবনের স্মৃতিচিহ্ন আজও রয়ে গেছে। তার বুক ও হাত দুটো ভারি ট্যাটু দিয়ে ভর্তি । জাপানে মাফিয়াদের সদস্য হলে এমন ট্যাটু এঁকে দেওয়া হয়।এই ট্যাটু লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়।
কিন্তু যখন অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে লড়াই বাঁধে তখন সবাই তাদের গায়ের পোশাক খুলে ফেলেন। মোট সাতবার গ্রেপ্তার হন সিন্দো। বয়স ২২ হওয়ার আগেই তিনি তিনবার কারাবরণ করেন।
৩২ বছর হওয়ার আগেই জীবনের প্রায় দশ বছর কারাগারে কাটিয়ে দেওয়ার পর ইয়াকুজার আরও ভেতরে চলে যান তিনি। কিন্তু কারাগারে থাকার সময়ে তার মধ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটে।
সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি মাফিয়া জগৎকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানান। একজন ধর্মযাজক হিসেবে জীবন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
কেআই/ এআর