ডেঙ্গুর মহামারি থেকে বাঁচতে চাই সবার সচেতনতা
প্রকাশিত : ১৪:২৪, ৪ আগস্ট ২০১৯
দেশে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে। যা আরও মাহমারি আকার ধারণ করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন জনসচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সামগ্রীকভাবে সকলের সহযোগীতা। অর্থাৎ গোটা দেশের মানুষকে এক সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। তবেই এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে। কমে আসবে মৃত্যুর ঝুঁকি।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞারা জানান, প্রত্যেককে তার নিজ নিজ ঘর, বাড়ি, এলাকা পরিস্কার রাখতে হবে। পাড়া মহল্লায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করতে হবে। অপরদিকে যারা রোগী তাদের সুস্থতার জন্যও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ডেঙ্গু জ্বর যখন একজন মানুষকে খুব বেশি অসুস্থ করে তোলে তখন তার রক্তের প্রয়োজন হয়। কারণ খুব সহজে প্লাটিলেট পাওয়া না গেলে মানুষ মারা যেতে পারে। আমরা যারা সুস্থ তাদের শরীরে রয়েছে অতিরিক্ত রক্ত, যা আমরা চাইলেই একজনকে ডোনেট করতে পারি।
প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, সব ডেঙ্গু জ্বরে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গুর প্রকোপের চেয়ে যেন আতঙ্কই বেশি। নরমাল জ্বরেও সবাই ছুটছেন হাসপাতালে। ফলে রাজধানীর সব হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে। তাই জ্বর হলেই হাসপাতালে ভিড় জমানোর প্রয়োজন নেই। প্লাটিলেট অতিরিক্ত কমে না আসলে এবং রক্তক্ষরণ না হলে বাসায় বসে ডেঙ্গুর ট্রিটমেন্ট নেওয়া সম্ভব। তিনি জানান, যদি ডায়াবেটিস, প্রেসার, কিডনি, হার্ট ও স্ট্রোকের রোগীদের ডেঙ্গু জ্বর হয় তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা নিতে হবে। এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।
এবিষয়ে অধ্যাপক ড. ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, প্রথম দিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা অবহেলা করেছেন তারা বেশ বিপদে পড়েছেন। নূন্যতম জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডেঙ্গ বাংলাদেশে আসে ২০০০ সালে। এবং এতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০০২ সালে। দক্ষিণ এশিয়ায় ডেঙ্গু প্রভাব একটু বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে এর প্রকোপ বেশি। এ বছর ডেঙ্গু প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গুর কারনে এবার মৃত্যুর হার বেশি। এর মাঝে আবার ২০১৭ সালে চিকুনগুনিয়া দেখা যায়।
প্রতি বছর ডেঙ্গুর যে লক্ষণ চিকিৎসকরা দেখতে পান তা এ বছর দেখা যাচ্ছে না। এ বছর ডেঙ্গু অনেকটা নিরবে শরীরি ভর করছে। ডেঙ্গুর চারটা প্রকারভেদ আছে। এটাকে বলে ডেঙ্গু সেরোটাইপ। ঘুরে ফিরে এ চারটাকেই বাংলাদেশে দেখা যায়।
কোনো বছর চারটি, কোনো বছর তিনটি,কোনো বছর দুইটা আমাদের দেশে দেখা যায়। ডেঙ্গুর স্বল্পমাত্রার লক্ষণটা যা দেখা যায়, এতে আক্রান্ত হলে সাধারণত কেউ চিকিৎসকের কাছে যান না। তারা মনে করেন এগুলো খুবই কম ক্ষতিকর। এর জন্য দোকান থেকে কিছু ঔষুধ এনে সেবন করে ভাবেন এটা স্বাভাবিক জ্বর। তারা ভাবেনই না যে, ডেঙ্গু হয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মেহেরজাদী সাব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, ঢাকা থেকে যারা যাবেন তাদের মধ্যে একটা অংশ কোনো না কোনো ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, কিন্তু এদের মধ্যে কারও হয়তো জ্বর থাকবে, আবার কারও হয়তো তখনো জ্বর নেই কিন্তু পরে জ্বর হতে পারে। ‘তাই এটা প্রতিরোধে, কারও যদি জ্বর থাকে তাহলে তিনি যেন ভ্রমণ না করেন। জ্বর থাকলে যেন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে এটা ডেঙ্গু কি-না’।
মেহেরজাদী সাব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আবার কারও কারও হয়তো জ্বর তখন হয়নি কিন্তু তার মধ্যে ইনফেকশন ঢুকে আছে। কিন্তু জ্বর না হওয়ায় তিনি টের পাননি। তিনি হয়তো চলে যাবেন। এভাবে ভাইরাস দেশের অন্য অঞ্চলে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) বলেন, ‘মশার সঙ্গে যুদ্ধে এই একবিংশ শতাব্দিতে মানুষ হেরে যাবে তা তো হতে পারে না। নমরূদের যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এডিস মশা প্রতিরোধের ওষুধের জন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বসে থাকলে চলবে না। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিলে স্বল্প সময়েই তা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে টাকার কথা ভাবলে চলবে না। সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। নিজ নিজ বাসা, বাড়ি ও তার আশপাশে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ডেঙ্গু সৃষ্টিকারি মশার জন্মস্থল ধ্বংস করতে পারলে মশক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হবে। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু মফস্বল শহর ও গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে এই যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি জনগণ সতর্ক হলে মানুষের অবশ্যই জয় হবে, মশক বাহিনীর নয়।’
টিআর/