ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই

প্রকাশিত : ১৯:১৪, ২১ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ১৯:২১, ২১ এপ্রিল ২০১৯

দেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের (জনসংখ্যার বোনাসকাল) মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাবে এই জন সম্পদকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুবিধা কাজে লাগাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।

রোববার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) যৌথ আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইআরএফের কার্যালয়ে আয়োজিত এই কর্মশালার বিষয় বস্তু ছিল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যান্ড বাংলাদেশ। ইআরএফের সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইএফসির সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. মাসরুর রিয়াজ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, বিশ্বব্যাংকের বেসরকারিখাত বিশেষজ্ঞ নুসরাত নাহিদ ববি, এনবিআরের কাস্টমস মর্ডানাইজেশন অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. গিয়াস কামাল এবং ইউকে এইডের প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভাইজর মুশফিক ইবনে আকবর।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কর্মশালাটি রোববার উদ্ধোধন হল। আগামীতে কয়েকটি পর্বে এটি চলতে থাকবে। দ্বিতীয় পর্বের বিষয় বস্তু হল দেশের বাণিজ্য নীতি। এছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হবে এই কর্মশালায়।

ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের (জনসংখ্যার বোনাসকাল) মধ্যদিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর বাংলাদেশে ২০ লাখ শ্রমবাজারে আসছে। কিন্তু ওইভাবে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হয়, এই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে না পারলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট দায় হয়ে দাড়াঁবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর আরও বেশি গতি আগাচ্ছে।

তিনি বলেন, একটি বিষয়ে লক্ষ্যনীয় বাংলাদেশে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আছে, সেগুলো ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে না। প্রতিবছর ১ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার সরারসি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে, কিন্তু এর অধিকাংশই পুণ:বিনিয়োগ। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ আসছে না। রফতানি বেড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যার দেশে আরও বৃদ্ধি জরুরি।

মাসরুর রিয়াজ বলেন ইআরএফের সদস্যদের সঙ্গে এই ধরনের কর্মশালা অব্যাহতভাবে চলবে। কারণ এরফলে আইএফসি এবং ইআরএফ উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক বাড়বে। পাশাপাশি ইএরএফ সদস্যদের দক্ষতা বাড়বে। এছাড়াও আইএফসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই মানুষের তাদের কর্মসূচী পৌঁছাতে পারবে।

খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা সহজ করতে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, কাস্টমস থেকে কত সহজে পণ্য খালাস করা যায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। আমাদের প্রত্যাশা দ্রুতই একাজে সফলতা আসবে।

আবুল কাশেম বলেন, সহজে ব্যবসা করার সুচকে অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশ^ব্যাংকের ইজ অব ডুইং বীজনেস রিপোর্টে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬। কিন্ত ২০০৫-২০০৬ সালে ৬৫তম। বাংলাদেশ এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হল আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়েছে। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ সবকিছুতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে। এরপরও মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের আরও আগানো দরকার। কারণ আমাদের প্রতিযোগীরা বেশি গতিতে আগাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আশে পাশের দেশগুলোর মধ্যে বন্দরের জটিলতায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশে আমদানি করা পণ্য কাস্টমসে খালাস করতে ৩৬০ ঘটনা সময় লাগে। আর রফতানি করা পণ্য জাহাজীকরণে সময় লাগে ৩১৫ ঘন্ট। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াতে আমদানি পণ্য ৭ ঘন্টা এবং রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে মাত্র ১৪ ঘন্টা সময় লাগে। ভিয়েতনামে আমদানি ১৩২ এবং রফতানিতে ১০৫ ঘন্টা সময় লাগে। তারা বলেন, পণ্য আমদানি রফতানির অনুমোদনে মোট ৩৯টি সংস্থা রয়েছে। প্রতিটি আমদানি রফতানিতে গড়ে ৭ থেকে ৮টি সংস্থার অনুমোদন লাগে। এগুলো প্রক্রিয়া দীর্ঘ। ফলে বন্দরে অনেক বেশি সময় লাগে।

সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, সদস্যদের দক্ষতা বাড়াতে ইআরএফের এই ধরনের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। এ সময়ে কর্মশালায় সহায়তা করায় আইএফসি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

রাশিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মোট অর্থনীতির বড় অংশই বিশ্ব বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এই বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে কর্মশালার বিষয় বস্তু নির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, আজ সংক্রান্ত কর্মশালা উদ্ধোধন হল। এরপর আইএফসির সঙ্গে যৌথভাবে আরও ৪টি কর্মশালা করবে ইআরএফ। এ সময়ে কর্মশালায় সহযোগিতার জন্য আইএফসি, এনবিআর এবং ইউকে এইডকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

কর্মশালায় ইআরএফের ৮০জন সদস্য অংশ নিয়েছেন। চার ঘন্টা ব্যাপি এ কর্মশালায় দেশের অর্থনীতি, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য এবং কাস্টমসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি