ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

তথ্য সংগ্রহের নামে ফাইল চুরি কি ঠিক?

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

প্রকাশিত : ১৭:৩২, ২০ মে ২০২১

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

একটি দেশের জনগণের মৌলিক স্বার্থে নিজস্ব গোপনীয়তা বজায় থাকা বাঞ্ছনীয়। কেননা কোভিডকালীন পরিস্থিতিতে নানা দেশে নতুন করে সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। আমাদের দেশে একটি কার্যকর পদক্ষেপ রাখার স্বার্থে অবশ্যই রাষ্ট্রের করণীয় কাজে অনেক ক্ষেত্রেই গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহ এবং অপরের সহায়তায় যদি তথ্য চুরি করা হয়- এ দু’টোকে একসাথে গুলিয়ে ফেলা কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য হানিকর বটে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ ধারায় বলা আছে (১) চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে মুক্ততা এবং তার নিশ্চয়তা, (২) তবে প্রায়োগিক কৌশলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র, বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুস্থানীয় সম্পর্ক, সরকারি নির্দেশনা, শালীনতা কিংবা নৈতিকতা অথবা কোর্টের অবমাননা হয়, মানহানীর সৃষ্টি করে, অপরাধ প্ররোচিত করে থাকে- (ক) যা প্রতিটি নাগরিকের নিজস্ব বক্তব্য এবং প্রকাশ এবং (খ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে গ্যারান্টি দেয়া আছে। তবে, একথা ভুললে চলবে না- যখন কেউ তথ্য সংগ্রহ করতে যায়, তখন তাকে অবশ্যই প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। এ জন্যে কোন ধরনের অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা মোটেই উচিত নয়। 

তথ্য সংগ্রহের বিভিন্ন উপাদান বিদ্যমান দেশের প্রচলিত নিয়ম কানুনের মধ্যেই রয়েছে- সরকারের কাছ থেকে কোন তথ্য পেতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার প্রয়োজন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি সে আবেদনের জবাব না দেয়, তবে তথ্য কমিশনে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোভিডকালীন জরুরি সমস্যা সমাধানকল্পে দিন-রাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে এবং দেশের মানুষ যাতে সুস্থ থাকে সেজন্যে বিভিন্ন ধরনের বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সমঝোতা যা গোপনীয়তার সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তার জন্যে কাজ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে অবিমৃষ্যকারিতার সাথে কেউ যদি ফাইল চুরি করে তা কোন পক্ষের স্বার্থ দেখছেন কিনা, যেটি জনস্বার্থ-বিরোধী এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বিরোধী এবং বন্ধু দেশসমূহের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে- এমন সমস্ত ক্ষেত্রে আসলে রাষ্ট্রের, সমাজের জন্যে একটি নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনে। কেননা মানুষের জীবন ও জীবিকার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে সরকার প্রধান প্রচুর পরিশ্রম করে চলেছেন। অথচ হঠাৎ করে কেউ যদি ফাইল হস্তগত করে সেটি আদৌ কোন সংবাদপত্রে প্রকাশের বা বিশেষ কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে নিচ্ছে কিনা- সেটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রতীয়মান হবে। আইনের গতিকে আইনের আওতায় চলতে দেয়া বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে কেউ যদি অযথা ভুল বুঝে তবে সেটিও পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে নিরসন করা যেতে পারে। 

বর্তমান সরকারের আমলে সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে সরকার প্রধান যথেষ্ট মাত্রায় তাদের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে থাকেন। তার মানে এই নয় যে, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চুরি করে বা ছবি তুলে নিয়ে যাবেন- যাতে এটি রাষ্ট্রের জন্যে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে কাজ করলে, তবে তা ভালো হতো। এমনিতেই ভ্যাকসিনের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি পর্যায়ক্রমে করা হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মিথ্যে অহমিকার বশবর্তী হয়ে রাষ্ট্রের জন্যে একটি শান্তিকালীন অথচ যুদ্ধাবস্থার মত ভাইরাসে যখন প্রতিনিয়ত মানুষ মরে চলেছে ও আক্রান্ত হচ্ছে এবং বাধ্য হয়ে লকডাউন বৃদ্ধি করতে হচ্ছে, তখন চৌর্যবৃত্তি করে যে কাজ করা হচ্ছে তাতে বরং রাষ্ট্রের মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কি হনুরে না হয়ে বিনয়ীভাবে তথ্য যদি চাওয়া হতো এবং সে অনুপাতে তথ্য সংগ্রহ করা হতো তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রচলিত ধাপগুলো মেনে চলায় কোন ধরনের অভিযোগ করতে পারতো না। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ফাইল চুরির অপবাদ এসেছে। এটি যদি সঠিক হয়, তাহলে অবশ্যই তা জনকল্যাণ বিমুখ এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতরিয়ে বিশেষ ফায়দা লোটার প্রয়াস। এক্ষেত্রে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলা বাঞ্ছনীয়। কেননা সাধারণ অবস্থা আর বিশেষ অবস্থার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। দেশ যখন সংক্রামক ব্যাধিতে জরাগ্রস্ত, সেখানে নানা কৌশলে আমাদের কৃষিকে মূল উপজীব্য করে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস নেয়া হয়েছে- যাতে মানুষ অনাহারী না থাকে। 

তবে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টিকা সংগ্রহ। এ টিকা সংগ্রহের কোন বিকল্প নেই। আমরা যদি সে অর্থে নিজস্ব উপাদানে টিকা উৎপাদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে সক্ষম হতাম তবে সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আইনের আওতায় যখন কোন কিছু এসে যায় অর্থাৎ ফাইল চুরি করে তথ্য সংগ্রহ তা যদি দেশের স্বার্থ-বিরোধী কাজে লাগানো হয়, তবে এটি রাষ্ট্রের জন্যে ক্ষতিকারক হয়। তবে অবশ্যই প্রচলিত বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয়। সর্বাগ্রে আজ আমাদের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে দেশের মঙ্গল কামনা করা দরকার। সরকার যেখানে রাইট টু ইনফরমেশানের ব্যবস্থা করেছেন, সেখানে ধাপ না মেনে কেউ যদি হঠকারী কোন কাজ করে তবে তার মাশুল তাকে নিজের কার্যকরণের জন্যে দিতে হবে। এ জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর উপর রাগ করার কিছু নেই। কেনেনা মন্ত্রীদের অবশ্যই সরকার প্রধান থেকে নিয়োগ দেয়া হয়, দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে কাজ করার জন্যে। এক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়- আগেভাগে কোন দেশই কোভিডের আক্রমণের জন্যে প্রস্তুতি ছিল না। এক্ষেত্রে এই ধরনের হঠকারী ভাইরাস আমাদের স্বাভাবিক কর্ম পদ্ধতিকে অচল করে দিচ্ছে। আমরা যদি সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই টিকা লাগবে, তার জন্যে সরকারকে গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে হবে। এই কাজের মধ্যে কেউ যদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে তা দেশের জন্যে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। আর এ বয়ে না আনার জন্যে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাকে আইনগত মোকাবেলা করতে দেয়া হোক। বিচ্ছিন্নভাবে কারোর ব্যক্তিগত দায় তিনি যত বড়ই সাংবাদিক হোন না কেন, তাকে আইনের মধ্যে থেকেই ন্যায্য বিচার পেতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যারা খেপিয়ে তুলছে, তারা আসলে কাজটি ঠিক করছেন কিনা সেটি একমাত্র তারাই জানেন। রোজিনা ইসলাম একজন পেশাদার, দক্ষ সাংবাদিক- তিনি কেন যে ধাপ অনুসরণ না করে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলেন, কেন তিনি ফাইল চুরি বা ফটো করে নিচ্ছিলেন একমাত্র তার সদুত্তর তিনি দিতে পারবেন। এটি একটি ভাল হয়েছে যে, ডিবি তদন্ত করে সত্য অনুসন্ধান করে আমাদের মত সাধারণ জনগণকে আগামীতে জানাবেন। যতক্ষণ না অনুসন্ধান কাজ শেষ হবে, ততোক্ষণ কিন্তু আমরা পুরোপুরি সত্য জানতে পারবো না। যেদিন ভ্যাকসিন নিলেন, সেদিনই তাকে তথ্য সংগ্রহের নামে ফাইল চুরির কর্মকাণ্ড করতে যেতে হলো- এটি আসলে বুঝতে পারছিনে। পর্দার অন্তরালে কি হচ্ছে! আবার ফাইল কিভাবে উনি নিয়ে ধরা পড়ার পর কেন এতক্ষণে সচিবালয়ে না থেকে সাথে সাথে থানায় পাঠানো হলো- হয়ত সাংবাদিকরা এত মনঃক্ষুণ্ন হতেন না। আসলে সবকিছু তদন্ত করে দেখার জন্যে ডিবি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করি। 

প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসবে। একজন আমজনতা হিসাবে মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্ব কোভিডকালীন সময়ে আরও জনগণের আস্থা বেড়েছে। কেউ ইচ্ছে করে রোজিনাকে ফাঁদে ফেলেছে কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়। তবে রোজিনা ইসলামের মত একজন সাংবাদিক যেভাবে তথ্য সংগ্রহের নামে তথ্য চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন সেখানে ধারণা করতে পারি, এমন কেউ হয়তো সচিবালয়ে রয়েছে, যারা নিজেদের সুবিধা আদায় করতে গিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করেছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। আইনকে আইনের গতিতে চলতে দেয়ার জন্যে অবশ্যই কোন ধরনের চাপ দেয়া উচিত নয়। সত্য আমরা তখনই জানতে পারবো, যখন তদন্ত শেষ হবে। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এনেছে। এ অভিযোগগুলো খণ্ডনের পাশাপাশি কেউ তার প্রতি অন্যায় করে থাকলে সেটির পর্দা উন্মোচনের দায়িত্ব গোয়েন্দাদের। অযথা চাপ সৃষ্টি করাটা ঠিক নয়, কেননা আইনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয় এমন কিছু দক্ষ সাংবাদিকদের করাটা উচিত নয়। অবশ্যই নারী ও অসুস্থ হিসাবে তিনি নানাবিধ সমস্যায় আছেন। তার সুস্থতা এবং সুন্দর পেশাদারিত্ব জীবনে হঠাৎ কেন যে এমন করতে গেলেন এটিও বোধগম্য নয়। একজন সাংবাদিক দীর্ঘদিন এ পেশায় থাকার পর যদি দুটোকে গুলিয়ে পেলেন- তথ্য চুরি ও সংগ্রহের মধ্যে তাহলে নবীনদের কাছে তার ইতঃপূর্বেকার অনুসন্ধানী রিপোর্টগুলো কি উদাহরণ হিসাবে থাকবে? প্রয়োজনে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় বা স্বাস্থ্য সচিবের কাছ থেকে তার জানার কিছু থাকলে নিউজ কাভারের সময়ে অথবা এসপয়েন্টমেন্ট নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতেন। এমনিতেই করোনাকালে সাংবাদিকের অনেক কষ্ট করে কাজ করছেন- যে কারণে জনগণ তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাদের কষ্টের অবস্থা লাঘবের জন্যে দশ কোটি টাকার সহায়তার কথা ঘোষণা করেছেন। একটি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন ধরনের মন-মানসিকতার মানুষ থাকেন। কেউ চক্রান্ত করে একজন প্রাজ্ঞ সাংবাদিককে ভুল পথে পরিচালিত করেছে কিনা সেটি রোজিনা ইসলামের পূর্ব থেকে অনুধাবন করা উচিত ছিল। আজ ওনার ভুলের জন্যে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে মনে হয় সাংবাদিকেরা তাদের রাগ প্রশমন করে ভেবে দেখা দরকার, কেননা দোষেগুণে মানুষ। যতক্ষণ সত্যটি উদঘাটিত না হবে, ততোক্ষণ অবশ্যই ন্যায়ের স্বার্থে ধৈর্য্য ধারণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব সম্মান আছে কেউ কাউকে খাটো করে, মিথ্যে প্রবঞ্চা দিয়ে ভাল থাকতে পারে না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক, সত্য ও ন্যায় উদঘাটিত হোক, দোষ করে থাকলে শাস্তি পাক, আর কেউ যদি হয়রানি করে থাকে বা ফাঁসিয়ে থাকে, সেটিও উদঘাটিত হোক। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইতিমধ্যে বলেছেন যে, রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন। আর এ ন্যায়বিচারের জন্যে কোন ধরনের বাড়তি চাপ জনগণ প্রত্যাশা করে না। বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক বান্ধব। করোনাকালে তার নেতৃত্বে যেভাবে কাজ করছে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সেটি প্রশংসনীয়। সাংবাদিকদের সাথে কারোর মুখোমুখি করানো এবং সে বিশেষ দিনটিতে যেদিন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন- সেদিন কোন ঘাপটি মারা কেউ মন্ত্রণালয়ের বাইরে বা ভেতরে চক্রান্ত করে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল কিনা সেটিও ভেবে দেখা দরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলেও তার অধীনে সবাই যে, বর্তমান সরকারের অনুগত কিনা এবং সঠিক তথ্য দিয়ে সরকারকে সাহায্য করছেন না কি তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাইরে তথ্য বিকল্প পথে পাচার করছেন সেটি একমাত্র গোয়েন্দারাই বলতে পারবেন। তবে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সময়ে মোশতাক-জিয়ার পাশাপাশি আমলা মাহবুব আলম চাষী ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তখনকার পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। কেন তবে একজন ঝানু সাংবাদিক নিয়ম লংঘন করে ফাইলের ছবি তুলেছেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করেছেন সেটি আমাদের দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভেবে দেখবেন বলে আশা করি। আসলে উভয়পক্ষের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যটি উদঘাটিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ জন্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ যারা করেছেন, জনগণ তাদের কথাও শুনতে চায়। তারা বিজ্ঞাপন আকারে সেটি অবশ্য পরে প্রকাশও করেছেন। 

আশা করবো রাষ্ট্রের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্যে যদি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করা হয়, তদন্ত করে সেটি বের করা হবে, সাথে যারা ছিলেন তাদের কর্মকাণ্ডও খতিয়ে দেখতে হবে। মানুষের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে কোন অনাবশ্যক প্রতিবন্ধকতা মোটেই কাম্য নয়। আবার অভিযুক্তরও আইনের আওতায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে সেটিকে কার্যকর করতে হবে। এমনিতেই করোনাকালীন সময়ে সাংবাদিকেরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করছেন কিন্তু কেউ যদি ভুল করে হঠাৎ পঁচা শামুকে পা কাটেন- এটা ঠিক নয়। আর তাও যেমন সহমর্মিতার সাথে সরকারের প্রতি আস্থাশীল, তেমনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে মনে করি অহং বা ইগো প্রবলেমের কারণে কেউ যেন এমন কিছু করে না বসে যাতে জাতি হিসাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। আইনের স্বাভাবিক নিয়মে স্বাভাবিক গতিতে চলুক- পক্ষপাতহীন ন্যায়বিচারই আমাদের কাম্য। মুক্ত ও স্বাধীন তদন্ত এবং অভিযুক্ত, অভিযোগকারী এবং দেশের গোপনীয়তা বিনষ্টকারী- সবপক্ষকেই গোয়েন্দা তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসুক। যারা উন্মুক্ত স্থানে নথি রেখে দেয় তাদেরও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আশা করবো সরকার যে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন জননেত্রীর অসীম সুন্দর নীতিমালায় তা অব্যাহত থাকবে। দেশে সবাইকে নিয়ে করোনাযুদ্ধ মোকাবেলা করতে হবে। 

লেখক: ফিন্যান্সিয়াল ইকোনোমিস্ট, আইটি এক্সপার্ট (pipulbd@gmail.com)

এসি
 


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি