তবু চলে যেতে হয়...
প্রকাশিত : ২৩:৩৭, ৩০ অক্টোবর ২০১৯
উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে রীতিমতো একটা যুদ্ধ পার করে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই শুরু হয়ে যায় অন্য আরেকটি জীবন। বলা যায় আরেকটা যুদ্ধ ক্ষেত্র। কিন্তু এ যুদ্ধ ক্ষেত্রের মাঝেই থাকে জীবনের অনাবিল সুখ-দুঃখ, হাসি, তামাশা আরও কতো কি। বলছি স্নাতকের শিক্ষা জীবনের কাটানো চারটি বছরের কথা। কিভাবে যে এ চারটি বছর কেটে যায় তা কেউ বুঝতে পারে না।
ঠিক এভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনার্স প্রায় শেষের দিকে। বাকি আর মাত্র দুইটি মাস। ২০১৬ সালে প্রথম ব্যাচের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট। অনার্স জীবন হাসি-তামাশা, মান-অভিমান, আড্ডা ইত্যাদির মধ্যেই কেটে যায় আর তা উপলব্ধি করা যায় একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে। ইতোমধ্যেই প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের র্যাগ ডে উদযাপন করেছে। ইতি টানতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার সর্বশেষ ধাপ।
এবিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. মনিরা জাহান বলেন, ‘সঠিক সময়ে আমি আমার ইন্সটিটিউটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের চার বছরের বি. এড প্রোগ্রাম (অনার্স) শেষ করতে পেরেছি এটা আমার জন্য অনেক আনন্দদায়ক। যা সম্ভব হয়েছে শুধু আমার একার পক্ষে না আমার পুরা টিমের সহযোগিতা ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। একজন নেতা হিসেবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি। যখন প্রথম ব্যাচের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট যাত্রা শুরু হয় তখন আমি একাই ছিলাম। শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তি হয়েছিল তখন তারা অনেক ছোট ছোট ছিলো। এখন তারা অনার্স শেষ করেছে অনেক বড় হয়েছে। তারা আমার ইন্সটিটিউট ছেড়ে চলে যাবে।’
‘এটা ভাবতেও খারাপ লাগছে। আবার এই খারাপের মাঝেও একটা ভালো লাগা কাজ করছে যে তারা দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবে, জীবনকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিতে পারবে। সর্বোপরি প্রথম ব্যাচের সবার জন্য রইল আমার দোয়া ও ভালবাসা।’ বললেন তিনি।
এই বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী টিটু খান বলেন, ‘আই.ই.আর’এ ভর্তি হওয়ার আগে আই.ই.আর সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না। জানতাম না এখানে কি পড়ানো হবে, কে পড়াবে? ৪ বছর শেষে আই.ই.আর থেকে অনেক কিছুই জেনেছি, অনেক কিছুই শিখেছি। পুঁথিগত বিদ্যা কতটুকু শিখতে পেরেছি জানিনা তবে শিক্ষার্থীদের কিভাবে ভালবাসতে হয় তা আমার শিক্ষকদের কাছ থেকে শিখেছি। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, সিনিয়র-জুনিয়রের সম্পর্ক কেমন জানিনা তবে আই.ই.আর’
টিটু বলেন, ‘এ সম্পর্কগুলো অতুলনীয়। নতুন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে আমাদের অনেক কিছুরই অভাব ছিল কিন্তু ভালবাসার অভাব ছিল না। এই চার বছরে বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন উৎসব পালন, ঘোরাঘুরি, সারারাত ক্যাম্পাসে আড্ডা, ঝগড়াঝাটি সবগুলো ছিল স্বপ্নের মত। চারটা বছর কিভাবে যে কেটে গেল বুঝতেই পারছি না। ধীরে ধীরে সবাই জীবন যুদ্ধে ব্যস্ত হয়ে যাব। হয়তো কিছুদিন পর আর প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাওয়া লাগবে না, চাইলেও সবাই এক হওয়া যাবে না, রাত-বিরাতে আড্ডা দেয়া যাবে না এসব ভাবতেই এখন কষ্ট হয়।’
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজিলা বৈশাখী বলেন, ‘দেখতে দেখতে কেটে গেলো চারটি বছর। মনে হলো এই তো সেদিন নবীনবরণের মাধ্যমে শুরু হয় আই.ই.আর’র প্রথম ব্যাচের যাত্রা। প্রথম ব্যাচ হওয়ার কারণে হয়তো আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু শিক্ষক, সহপাঠীদের আন্তরিকতা ও ভালবাসা, সহযোগিতা ছিল পরিপূর্ণ। আই.ই.আর’র আরও সম্পূর্ণ হয়েছে নতুন নতুন ব্যাচের ছোট ভাই বোনের আগমনে। এই চার বছরে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে কেটেছে আমাদের। শেষ দিনের আনন্দে মাঝে কিছুটা মন খারাপ হয়েছে এই ভেবে যে, এমন ভাবে হয়ত সবাইকে এক সাথে পাবো না। তাতে কি! মনের কোনো একটা জায়গা থেকে যাবে সবাই।’
শাহজালাল শুভ বলেন, ‘২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারিতে আই.ই.আরে প্রথম পদার্পণ করেছিলাম। আর গত ২৪ অক্টোবর ২০১৯-এ র্যাগ ডে পালন করলাম। এই সুদীর্ঘ সময়ে অনেক স্মৃতি মনের মনিকোঠায় জমা পড়েছে। তার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আই.ই.আর’র রানার্সআপ হওয়াটা অন্যতম। গত ২৪ অক্টোবর কেক কাটা ও র্যালির মাধ্যমে আমাদের র্যাগ ডে শুরু হয় এবং শেষ হয় রং মাখামাখির মাধ্যমে। এর মধ্যে ফ্লাশমুভ, নাচ, গান সবই হয়েছিলো। টিচার এবং অন্যান্য ব্যাচ মিলে এই দিনে অনেক মজা করেছি। এ রকম দিন হয়ত আর আসবে না এবং এভাবে সবাইকে হয়ত আর পাওয়া হবে না তাই মনটা সেদিন বার বার খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তবে যাই হোক না কেনো আই.ই.আর’র জন্য অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো।’
ইন্সটিটিউটের বড়-ভাইবোনদের বিদায় বেলায় ব্যথিত হয় জুনিয়রাও। সিনিয়র-জুনিয়রদের সম্পর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তেমনিভাবে বড় ভাই-বোনদের বিদায় বেলায় ব্যথিত হৃদয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথম ব্যাচের বিদায় সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে মনটা ব্যথিত হয়ে যায়। আই,ই,আর’এ ভর্তি হবার পর থেকেই সিনিয়র ভাই-বোনেরা আমাদের যেভাবে আগলে রেখেছে তা কখনো ভুলার নয়। যখন যেভাবে বড় ভাই-বোনদেরকে চেয়েছি ঠিক সেভাবেই আমরা তাদেরকে পেয়েছি। তারা আমাদের সাহায্য করেছেন কখনো আদর, স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে কখনো উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে। শীঘ্রই তাদের অনার্স লাইফের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতেই হয়, ‘যেতে নাহি দিব! হায়, তবু যেতে দিতে হয়। তবু চলে যায়।’ বাস্তবতা মেনে সবাইকেই চলে যেতে হয়, তাদেরও চলে যেতে হচ্ছে তবে আশা রাখছি আমাদের সম্পর্কগুলা থাকবে অটুট।’
এমএস/এসি
আরও পড়ুন