ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র তুলে ধরছে ‘লালজমিন’

প্রকাশিত : ১৫:৩৮, ১১ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:০২, ১২ অক্টোবর ২০১৭

‘যুদ্ধের কথা অনেক বলেছি, শুনেছি; আজই প্রথম অনুভব করলাম। তারাই তো বীর যাদের কারণে আজ আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।’ ‘আবার নতুন করে ’৭১ দেখলাম। দুর্দান্ত কিশোরীর চঞ্চল চরিত্রায়ন অসাধারণ লেগেছে। ‘লালজমিন’ সত্যিই বাস্তব গল্প মনে হয়েছে। সত্যিই অসাধারণ, দুর্দান্ত, সাহসিকতাপূর্ণ।’

এমন হাজারও অনুভুতি প্রকাশ পেয়েছে তরুণ শিক্ষার্থীদের। একটি একক মঞ্চ নাটক দেখে এই অভিব্যাক্তি ব্যক্ত করে তারা। কেউ দাঁড়িয়ে স্যালুট দেয়। আবার কেউ নাটক শেষে মঞ্চে এসে অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত একক মঞ্চ নাটক ‘লালজমিন’র সার্থকতা এখানেই।

মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এক নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্য প্রকাশ ‘লালজমিন’। ৭১এর স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ ন’মাস। এই সময়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের খন্ডখন্ড চিত্রগুলো একটি কাতারে এনে বিরতীহীনভাবে তুলে ধরে দর্শক শ্রোতাকে কাঁদিয়ে ইতিহাসের কথা জানাচ্ছেন নাট্যাভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী

‘লালজমিন’ নাটকটি স্বাধীনতার কথা বলে। স্বাধীনতাবিরোধীদের বর্বরোচিত ঘটনার কথা বলে। নাটকের গল্পে দেখা যায় তের ডিঙিয়ে চৌদ্দ বছর ছুঁইছুঁই এক কিশোরীকন্যার গল্প। কিশোরীর দুচোখ জুড়ে মানিকবিলের আটক লালপদ্মের জন্য প্রেম। তার কৈশরেই শোনে বাবা মায়ের মধ্যরাতের গুঞ্জন। শুধু দু’টি শব্দ কিশোরীর মস্তকে আর মনে জেগে রয়, মুক্তি- স্বাধীনতা। ওই বয়সে কিশোরী এক ছায়ার কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পায়। বাবা যুদ্ধে চলে যায়, অগোচরে- কিশোরী নানা কৌশলে যুদ্ধ যাওয়ার আয়োজন করে,সশস্ত্রযুদ্ধ। বয়স তাকে অনুমোদন দেয় না। এবার কিশোরীর সেই ছায়া-প্রেম সামনে দাঁড়ায়, কিশোরী তার সেনাপতিকে চিনতে পারে। তারপর যুদ্ধ যাত্রা।

লক্ষ্যে পৌঁছার আগেই পুরুষ যোদ্ধারা কেউ শহীদ হন,কেউ নদীর জলে হারিয়ে যান। পাঁচ তরুণীসহ যুদ্ধযাত্রী এই কিশোরীর জীবনে ঘটে নানা ঘটনা। চৌদ্দ বছরের কিশোরীর ধবধবে সাদাজমিন যুদ্ধকালীন নয় মাসে রক্তরাঙা লাল হয়ে উঠে। লালজমিন কিশোরীর রক্তরাঙা অভিজ্ঞতার মুক্তিযুদ্ধও যুদ্ধোত্তর এই নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্যপ্রকাশ।

মান্নার হীরার রচনা, সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনা, জুলফিকার চঞ্চল ও রহিম রাজুর সঙ্গীতপরিকল্পনা, বারীসিদ্দিকী, রামিজ রাজু, নীলাসাহার কন্ঠের গানে এই লালজমিনকে সাজানো হয়। ২০১১সালের ১৯মে লালজমিন প্রথম মঞ্চায়ন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমন্ডলে। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২৫টি প্রদর্শনী হয়েছে লালজমিনের। সেই ধারাবাহিকতায় লালজমিন দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। শিল্পবোদ্ধাদের কাছেও নাটকটি অনেক প্রশংসিত হয়েছে।

অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনকে  বলেন, নাটকটির পেছনে অনেক শ্রম, মেধা, সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। শুরুর দিকে কারোরই সহযোগিতা ছিলো না। তখন ২০টি শো হবে কিনা তা নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু লালজমিন এমন একটি নাটক যার সংলাপ, অভিনয়, সঙ্গীত, মিউজিক, লাইটিং, কোরিওগ্রাফী সবকিছুই শতভাগ উপস্থাপন হয়েছে। হয়তো এ জন্যই দর্শক নাটকটিকে গ্রহণ করেছে। এছাড়া এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তরুণ প্রজন্মের একটি আগ্রহ থেকেই যায়।

তিনি বলেন, বর্তমানে নাটকটি বিভিন্ন কলেজে প্রদর্শিত হচ্ছে। যাতে সহযোগিতা করছে- বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্র ও কিছু নাটকপ্রেমী মানুষ। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার নাটকটি দেখে ঘোষণা দিলেন যে, এটি স্কুল-কলেজে প্রদর্শিত হওয়া উচিত। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এখন বিভিন্ন কলেজে নাটকটির প্রদর্শনী করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার নাটক দেখে একজন নারী চিকিৎসক, একজন শিক্ষক অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতে চাইলেন। ওই শিক্ষকের কথা না বলে পারছি না। তিনি আমাকে বললেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। এখন ইচ্ছে থাকলেও তা সম্ভব না। আমি মুক্তিযুদ্ধকে বুকের মধ্যে লালন করি। এ নাটকটি মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছে। যা সবার দেখা জরুরী। তাই একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি চাই নাটকটির অসংখ্য প্রদর্শনী হোক। আর এই প্রদর্শনীতে যে খরচ হয় তার একটি অংশ আমি দিয়ে থাকি। দিতে চাই এই কারণে যে আমি এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলাম।

মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে লালজমিন এতোটাই দর্শকদের ভেতরে দেশপ্রেম বোধ জাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে যার উদাহরণ সাধারণ মানুষও। সুদীপ্ত সাহা নামে এক দর্শক বলেন, অসাধারণ উপস্থাপনা। নাটক হলেও মনে হয়েছে যেনো সত্যি ঘটনা নিজের চোখের সামনে দেখছি। আর সেইসঙ্গে যেমনটা শ্রদ্ধা ভালোবাসা বেড়েছে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তেমনি আগের থেকে আরও আগ্রহী হয়েছি নাট্যশিল্পের প্রতি। সত্যি অসাধারণ।

এ বিষয়ে মোমেনা চৌধুরী বলেন, আমি নাটকটি করে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তারা নাটকটিকে গ্রহণ করেছেন, এটা দেখেই আমি তৃপ্ত।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমি যখন সিরাজগঞ্জে লালজমিনের শো করলাম তখন একজন রিক্সা চালক ভাই আমাকে তার সারাদিনের আয় ১৭৫ টাকা হাতে দিয়ে বললেন, আপু আপনার নাটক দেখে আমি মুগ্ধ। আমার সারাদিনের পরিশ্রমের সব টাকা সম্মানী হিসেবে আপনাকে দিতে চাই। তিনি আমাকে হাতে গুজে দিলেন।

একইভাবে বর্তমানে যে বিভিন্ন কলেজে প্রদর্শনী করছি সেখানেও তরুণ প্রজন্ম নাটক শেষে তাদের অনুভুতিগুলো চিরকুটে আমাদের লিখে দেয়। সেসব অনুভুতিগুলো সত্যিই প্রেরণা জোগায়।

মোমেনা চৌধুরী আরও বলেন, এরইমধ্যে আমরা ১২৫টি প্রদর্শনী করেছি। দেশের বেশ কিছু জেলায় প্রদর্শনী হয়েছে। বিদেশেও হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্র ও আমাদের সংগঠন শূন্যনবিভিন্ন কলেজে প্রদর্শনী করছে। নতুন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আরও ৪৪টি জেলা ও উপজেলায় প্রদর্শনীর জন্য সহযোগিতা করছে।

//এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি