তামার পাত্রে পানি পানের উপকারীতা
প্রকাশিত : ১২:২৫, ২ ডিসেম্বর ২০২১
পানির অপর নাম জীবন। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পানি অপরিহার্য। পানি ছাড়া আমাদের চলেনা এক মুহূর্তও। কিন্তু এই পানিই কি আমরা ঠিক উপায়ে খাচ্ছি?
বর্তমানে প্লাস্টিকের বোতলে পানি খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে অনেক। কিন্তু এটিই ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে তামা বা কাঁশার পাত্রে পানি পান করলে তা শরীরের জন্য ভালো।
তবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার পানি রাখার জন্য সেরা পাত্র হল মাটি কিংবা তামার। সারারাত তামার পাত্রে রাখা পানি, খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে তামার পাত্রে পানি খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। আর এই অভ্যাস আবার ফিরিয়ে আনতে পারলে অবশ্যই উপকার হবে।
তামাতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এটি টক্সিন অপসারণ করতেও সাহায্য করে।
তবে দেখে নেওয়া যাক, তামার পাত্রে পানি পান করার বেশ কিছু উপকারিতা –
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
তামা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত, যা ফ্রি ব়্যাডিকালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফ্রি ব়্যাডিকেল এবং তাদের ক্ষতিকর প্রভাবই মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির মূল কারণ। তামা মেলানিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বক এবং চোখকে বর্ণ দেওয়ার পাশাপাশি, সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও রক্ষা করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতানুসারে, তামা কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করতে অত্যন্ত সহায়ক। শৈশব থেকেই যদি শরীরে কপারের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে তা হাইপোটেনশন বিকাশের দিকে পরিচালিত করে, তবে প্রাপ্তবয়স্করা যদি তামার ঘাটতিতে ভোগেন, তাহলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে:
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামা থাইরয়েড গ্রন্থির অসঙ্গতি ব্যালেন্স রাখতে পারে, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে ভালভাবে কাজ করার জন্য শক্তি জোগায়, পাশাপাশি এটি থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অত্যধিক ক্ষরণের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে। তামার অভাবের ফলে থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তবে এটাও সত্য যে, অত্যধিক তামার মাত্রা থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মহীনতা সৃষ্টি করে, যার ফলে রোগীর মধ্যে হাইপার বা হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দেয়।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে:
তামা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে আয়রন শোষণ করতেও সহায়তা করে, এর অভাব হলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। তাছাড়া, মানবদেহে তামার ঘাটতির ফলে বিরল হেমাটোলজিকাল ডিসঅর্ডার হতে পারে, যার ফলে শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়।
আর্থ্রাইটিস ও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে:
তামাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য বর্তমান। তামা দ্রুত ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতেও সহায়তা করে। এছাড়া, আর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের স্বস্তি প্রদান করে। তামা হাড় মজবুত করতেও সহায়তা করে।
হজমে সহায়ক:
প্রাচীন রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে, ভারতীয় আয়ুর্বেদে পর্যন্ত তামার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন রোমান গ্রন্থগুলিতে, পেটের জীবাণু মেরে ফেলার জন্য তামা-ভিত্তিক ওষুধের কথা বলা আছে। আয়ুর্বেদ মতে, তামার পাত্রে পানি পান করলে পেট ডিটক্সিফাই এবং পরিষ্কার হয়। তামায় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বর্তমান, যা পেরিস্টালসিসকে উদ্দীপিত করে, পেটের আস্তরণের প্রদাহকে কমায় এবং হজম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়া, তামা পেটের আলসার, বদহজম এবং পাকস্থলীর সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চমৎকার প্রতিকার।
কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে সহায়তা করে:
তামা হার্টের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করতে এবং প্লাক পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, তামার ঘাটতির ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলি কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। যার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে।
ওজন হ্রাস করে তামা:
শরীরের অতিরিক্ত চর্বিকে দ্রবীভূত করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। মানব শরীর যখন বিশ্রাম গ্রহণ করে, তখনও তামা শরীরে অতিরিক্ত চর্বিকে দহন করতে সহায়তা করে। তবে শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় তামার উপস্থিতি, শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
আরএমএ