তারেক-হারিছ-কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন
প্রকাশিত : ১২:২৩, ১০ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১১:৪৪, ১১ অক্টোবর ২০১৮
বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় পড়া শুরু করেছেন আদালত। মামলার প্রধান আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আরো রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কুমিল্লার সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। এ দু’জনই বিদেশে পলাতক।
এ মামলায় ফাঁসির আদেশ হয়েছে মামলার প্রধান আসামি লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টুর। এ দু’জন রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন।
বহুল আলোচিত এ মামলায় ৩৮ জনের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জনের ফাঁসি ও ১৯ জনের যাবজ্জীবন হয়েছে। এছাড়া আরো ১১ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা রোডের বিশেষ আদালত আজ বুধবার এ রায় দেন। মামলার বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বেলা ১২ টার দিকে এ রায় দেন।
রায়ের সময় লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ এ মামলার ১৮ আসামি পলাতক রয়েছেন।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিচারক রায় পড়ছিলেন।
এর আগে পুলিশি পাহারায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন নাজিমুদ্দিন রোডের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন। আদালতে এসে তিনি প্রথমে খাস কামরায় যায়। কিছুক্ষণ পর তিনি এজলাসে উঠেন। বেলা ১২ টায় রায় পড়া শুরু করেন আদালত।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের বিশেষ নিরাপত্তায় আলিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারসহ কাশিমপুর ১ ও ২ নম্বর কারাগার থেকে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩১ আসামিকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
সকাল ১১টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চলে এসেছেন। এখন এজলাসে বসলেই বিচার কাজ শুরু হবে।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী কিছুটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালে যে বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণণা করার ভাষা আমাদের জানা নেই। গত ১৪ বছর পর আজ সেই কাঙ্ক্ষিত রায়ের দিন এসেছে। আজ আকাশও কাঁদছে। আমরা অপেক্ষা করছি, কারণ ২৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করে দেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের নির্দেশে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছিল। মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে বাবর, পিন্টু, মুফতি হান্নানের সহযোগিতায় এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের চক্রান্ত করা হয়েছিল। আজ সে সেসব নৃশংস ঘটনার রায় আসছে। আমরা অপেক্ষা করছি রায়ের।
১৪ বছর আগের নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও হামলার সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা লুৎফুজ্জামান বাবর।
এই মামলার ৩১ আসামি হলেন— স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম, পুলিশের সাবেক আইজি শহিদুল হক, খোদা বক্স ও আশরাফুল হুদা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, ঢাকা সিটি করপোরেশেনের সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম আরিফ, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তার মুন্সী আতিকুর রহমান, আব্দুর রশীদ ও রুহুল আমিন, পাকিস্তানি নাগরিক আব্দুল মজিদ ওরফে ইউসুফ ভাট ওরফে আব্দুল মাজেদ ভাট, হরকাতুল জিহাদ ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নেতা মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে জিএম, মাওলানা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আব্দুর রউফ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার আবু জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, উজ্জ্বল ওরফে রতন ও আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে দলীয় সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। নারকীয় ওই হামলায় আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তাকে বাঁচাতে মানববর্ম তৈরি করে আওয়ামী লীগ নেতারা। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডে স্লিন্টারে হারান এক কানের শ্রবণশক্তি।
এ সংক্রান্ত আরো খবর
আরও পড়ুন