ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

তিন ধরণের চিকিৎসায় ঘুচবে বন্ধ্যাত্ব: ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩৪, ৮ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৪:৪৩, ১০ জুলাই ২০১৮

বন্ধ্যাত্ব আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত সমস্যা। নারী-পুরুষ উভয়েই এই রোগে ভুগতে পারেন। আমাদের কাছে কোনো দম্পতি যখন বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য আসেন তখন আমরা ধাপে ধাপে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

এখন মানুষ অনেক সচেতন। বিশেস করে টিনএজ থেকে যেসব তরুণীদের মাসিকে সমস্যা হয় তারা বিয়ের পর প্রথম বছরেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন। অনেকে আসেন, যাদের স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তারা সুস্থ। তারপরও ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কারণ, তারা তাড়াতাড়ি বাচ্চা চান। আবার কেউ কেউ আছেন বছর খানেক চেষ্টা করে তারপরে আসেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা যে রোগীগুলো পাই তাদের আসল সমস্যা হলো, ডিম্বানু তৈরি না হওয়া। আমাদের দেশে এটার চিকিৎসা খুবই কার‌্যকর। অনেক সময় সামান্য চিকিৎসায়ই এসব রোগীদের সারিয়ে তোলা সম্ভব।

আমাদের দেশে Polycystic Overian Syndrome এর চিকিৎসা খুবই ভালো। কোনো দম্পতির যদি প্রাথমিক চেষ্টায় বাচ্চা না আসে আমরা প্রথমে দেখি তার ডিম্বানু ফোটে কিনা? যদি ডিম্বানু না ফোটে তাহলে ডিম্বানু ফোটার ওষুধ দিতে শুরু করি। ডিম্বানু ফোটার ওষুধ আমরা টানা কয়েকমাস দিই। অন্তত ছয় মাস এ চিকিৎসা দিতে পারি।

ডিম্বানু ফোটেছে কিনা সেটা জানার জন্য মাসিকের দ্বিতীয় দিনে দেখি ডিম্বানুর পরিমাণ কেমন। যদি দেখি ডিম্বানু সঠিক আকৃতিতে আছে তাহলে ডিম পরিস্ফুটনের ইনজেকশান দিই। কয়েকটা ধাপে এই চিকিৎসা সম্ভব হয়। সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব হয় না।

এজন্য যে সব দম্পতি চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়। ইনজেকশনে যদি সন্তান না আসে তাহলে ইনজেকশনের পরিমাণ বাড়াই। তারপরে স্বামীর বীর্যটাকে পরিশোধন করে স্ত্রীর জরায়ুর মুখে দিয়ে দিই। এটাকে আমরা বলি, IUI. এটাও কয়েকটা ধাপে করা হয়।

IUI করে যদি ফল না পাওয়া যায় তখন আমরা IVF করি। এটাও কৃত্রিম পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে স্বামীর শুক্রানু আলাদা করে সংগ্রহ করা হয়। এবং স্ত্রীর ডিম্বানুটাও আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেটাকে বড় করে শরীরের বাইরে নিষিক্ত করা হয় ও জাইগোট তৈরি করা হয়। সেই জাইগোটটি পরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে জরায়ুর ভেতরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এটা হচ্ছে IVF।

অনেক সময় দেখা যায় যাদের বীর্যের ঘনত্ব কম আছে, স্পার্মের পরিমাণ কম তাদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত IUI করতে হয়। কিন্তু যাদের খুবই কম তাদের ক্ষেত্রে আমরা IUI করতে পারি না। তখন ICSI করতে হয়। যদি দেখা যায় তার স্পার্ম একেবারেই নেই, তখন তার টেস্টিস থেকে একটা হলেও স্পার্ম সংগ্রহের মাধ্যমে ভ্রুণ তৈরি করে জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিগুলো খুবই ব্যায়বহুল।

শুধুমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট সেন্টারে এটি করা হয়। যেসব কেন্দ্রে করা হয় তা বেসরকারি। সরকারীভাবে কোনো কেন্দ্রে তা করা হয়না। IUI পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনা আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হয়। IVF ও ICSY এগুলো সরকারিভাবে করা হয় না ও খুব ব্যায় বহুল হলেও যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য এগুলো ব্যায়বহুল মনে হয় না।

লেখক: প্রসূতি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন। তিনি শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং শমরিতা হাসপাতালে কর্মরত।

অনুলেখক: আলী আদনান।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি