তিল ধরার ঠাঁই নেই বাণিজ্য মেলায়
প্রকাশিত : ১৯:২৪, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২২:৩৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮
ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল নেমেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। মেলার বাইরে কাউন্টারগুলোতে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। মেলার অভ্যন্তরের গলিগুলোও কানায় কানায় পূর্ণ। লোকে লোকারণ্য এ মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে দাঁড়ানোই কষ্টসাধ্য। ভীড় সামলাতে বিক্রেতা হিমশিম খাচ্ছেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরাও হচ্ছেন গলদঘর্ম। মেলায় উপচে পড়া এ ভীড়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের মুখে হাঁসি ফুটেছে। আয়োজক ও দর্শনার্থীরাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। আজ শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁও ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ১৯তম দিনে এ চিত্র দেখা যায়।
মেলা শুরুর তৃতীয় শুক্রবার হওয়ায় এদিন সকাল থেকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর আগমন শুরু হয়। বেলা যত বাড়তে থাকে এ আগমন তত বাড়তে থাকে। বিকাল পাঁচটার দিকে মেলায় আগমন অনেক বেড়ে যায়। যা সন্ধ্যার দিকে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মানুষের ভিড়ে মেলার চারপাশের রাস্তায় ছিল প্রচণ্ড যানজট। এই যানজট ফার্মগেট, আসাদগেট, আগারগাঁও পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এসব এলাকার যানবাহনগুলো কোথাও কোথাও স্থির হয়ে যায়। এতে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়। এক থেকে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে মেলায় প্রবেশ করতে হয়। মানুষের চাপে সংসদ ভবন থেকে আগারগাঁও মুখী মেইন রোড থেকে মেলার টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত হেটে চলাও দুষ্কর হয়ে উঠেছিল।
এদিন মেলার প্রবেশ পথেও ছিল প্রচণ্ড ভিড়। এ ছাড়া পার্কিং স্থানে ছিল অতিরিক্ত গাড়ির চাপ। মেলা থেকে বারবার ঘোষনা দেওয়া হচ্ছিল আপনার গাড়ী তিন ঘণ্টার বেশি রাখতে পারবেন না। রাখলে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে মেলার শেষার্ধে এসে বেশি মূল্যছাড় আর বিশেষ গিফট অফার থাকায় স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে দরকারি কেনাকাটা করে সন্তুষ্ট ক্রেতারাও। মেলায় এতোদিন গৃহস্থালি আর পোশাক-প্রসাধনী পণ্যের স্টলগুলোতে ক্রেতা সমাগম বেশি থাকলেও আজ দেশি-বিদেশি সব স্টল-প্যাভিলিয়নে ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রয়োজনীয় কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকেই বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজনদের সাথে আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গণে।
রাজধানীর আরামবাগ এলাকা থেকে সস্ত্রীক মেলাতে আসা সাফিন আহম্মেদ জানান, আমি পরিবারসহ মেলাতে এসেছি। ঘুরে দেখলাম অনেক ভালো লেগেছে। আমার ভয় ছিল শীতের দিনে মেলায় গেলে ঠান্ডা লাগবে কী না। কিন্তু মেলায় এসে দেখলাম এ শীতের দিনে মেলায় মানুষের চাপে শীত পালিয়েছে। তিনি বলেন, আমি একটি ব্লেজার ও একটি শাড়ি কিনেছি। যার দাম যথাক্রমে ২ হাজার ও ৫ হাজার টাকা লেগেছে। আমার মনে হয়েছে দাম বাহিরের তুলনায় মেলায় একটু কমই আছে।
মেলায় দেখা হয় মিরপুর থেকে আসা ৫ বন্ধু রনি, পাভেল, লিঙ্কন, টুটুল ও সাওনের সঙ্গে। তারা জানায়, আজ শুক্রবার হওয়ায় তারা মেলায় এসেছে। মেলায় তারা বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়ন, সুন্দরবন ইকোপার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশী বিদেশি প্যাভেলিয়ন ঘুরে দেখেছে। তারা কিছু কিনবে না। তবে সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে খাবে বলে জানায়।
মেলায় দেশী সূতি নামের স্টলের বিক্রেতা আরাফাত রহমান বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে এ মেলায় অংশ নিচ্ছি। এবার অন্যবারের তুলনায় বেচা-বিক্রি বেশিই মনে হচ্ছে। অন্যবার আবহাওয়া খারাপ ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় লোকসমাগম কম হয়। এবার কোন সমস্যা নেই। তাই লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তিনি জানান, রাজধানীর এ নগর জীবনে বাণিজ্য মেলা একটা উৎসবের মতো হয়ে উঠেছে। তাই যারা একটু ঘোরার ফুরসত পায় না। তারাও এখানে ঘুরতে বা দেখতে আসেন।
মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র মেলা কমিটির সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, মাসব্যাপী এ মেলার পর্দা নামবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। সে হিসেবে মেলার সময় আছে মাত্র ১১ দিন। শেষার্ধ হওয়ায় এখন মেলায় উপচে পড়া ভীড় দেখা যাচ্ছে। আয়োজক হিসেবে আমরা মেলায় এমন উৎবমুখর পরিবেশ সৃস্টি করতে পেরে নিজেদের সফল হিসেবে দেখছি।
আরকে/টিকে
আরও পড়ুন