আকরাম খান দুলালের ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা
তুমি রবে নীরবে
প্রকাশিত : ১৭:৩৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৮:০১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, নিউটেক্স গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়াত আকরাম খান দুলাল এর আজ ১ম মৃত্যুবার্ষিকী।
তিনি গত বছরের এই দিনে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পর দেশ মাতৃকার টানে তিনি স্বাধীনতা যু্দ্ধে ঝাপিয়ে পরেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি চট্টগ্রামে ১নং সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলাম বীর প্রতিকের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে জীবন জীবিকার তাগিদে জার্মান পাড়ি দেন। দেশে ফিরে এসে রাজধানী ঢাকায় নিউটেক্স গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে সন্দ্বীপের অসংখ্য বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন।
সন্দ্বীপের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন নিখাদ সমাজসেবক হিসেবে সমধিক পরিচিত। নিজ জন্মস্থান সন্দ্বীপের দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিউটেক্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণে সারা জীবন নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। যার ফলে এই কর্মবীরকে সন্দ্বীপের মানুষ শ্রদ্বাভরে স্মরণ করবে।
আকরাম খান দুলাল নিউটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইমপ্রেস নিউটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পরপর দু`বার সিআইপি মর্যাদা পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ টেক্সাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) দু`বার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিজিএমইএ ডিরেক্টর, ঢাকা এফ এম (৯০.৪) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক, সন্দ্বীপ পাবলিক হাই স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, শেখ জামাল ক্লাব, ধানমন্ডি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি পূর্ব সন্দ্বীপ ইসলামীয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে সন্দ্বীপে বিএনপি জামায়াতের তান্ডবে হাজার হাজার নেতা কর্মী সন্দ্বীপ ছাড়তে বাধ্য হয়। ওই সময় অনেকে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো। সে সময় তিনি অসহায় নেতা কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এছাড়া তিনি রাজনৈতিক প্রতিকূলতার ভেতরে তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
২০১৫ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভিত্তিক আকরাম খান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সন্দ্বীপের ক্রীড়াঙ্গনে অসাধারন অবদান রেখেছেন। এছাড়া সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্রিয়া গঠনগুলোর সাথে তিনি আমৃত্যু সম্পর্ক রেখেছেন। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় চট্টগ্রামের বিশ্বদরবারের সুফী সাধকের সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন তিনি।
মরহুম আকরাম খান দুলাল সম্পর্কে সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন-"একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি ছিলেন দেশ ও দশের অকৃত্তিম বন্ধু। সন্দ্বীপে রাজনৈতিক দুঃসময়ে তিনি ছিলেন নেতা কর্মীদের আস্থার জায়গা। এছাড়াও, আমার বাবা দ্বীপবন্ধু মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে ছিলো তাঁর হৃদ্যতার সম্পর্ক। তিনি আমাকে সন্তানের মতই জানতেন। তাঁর ভালোবাসার স্মৃতিগুলো আমি এখনো মিস করি। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন এই কামনা করছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বি এ বলেন- ``মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সম্মুখ বীরযোদ্ধাকে আমরা হারিয়েছি। শুধু আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হিসেবে নয়, তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য সব সময় বটবৃক্ষ ছিলেন। যেকোনো সংকটে তিনি নেতা কর্মীদের সহযোগিতা করেছেন। কখনো নেতৃত্বের মোহে কাজ করে নাম চাননি, মানুষের জন্য অকাতরে দিয়ে গেছেন। এছাড়াও তিনি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সফল সংগঠক ছিলেন। সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কাজ করেছেন নিভৃতে। মানবিক কাজে সন্দ্বীপের মানুষের জন্য তিনি একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন।সন্দ্বীপে ক্রিয়াঙ্গনে খেলোয়াড় সৃষ্টির জন্য নিজ অর্থায়নে টুর্নামেন্ট চালু করেছিলেন । আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’’
পৌর মেয়র জাফর উল্লাহ টিটু বলেন, সন্দ্বীপের মানুষের কাছে তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া ২০০১ সালের জোট সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে নেতা কর্মীদের অভিভাবকের ন্যায় দেখভাল করেছেন। শিল্প কারখানা করে সন্দ্বীপের অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর। তিনি আমাকে সন্তানের মতো জানতেন। তাঁর স্মৃতিগুলো এখনো কষ্ট দেয়। নিঃসন্দেহে তিনি আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন।’’
মুক্তিযোদ্বা কমান্ডার এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্বা আকরাম খান দুলাল এর মতো এমন মানুষ আমরা আর দ্বিতীয়টি পাবো কি না জানি না। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সব সময় এগিয়ে আসতেন। তাঁর মতো উদার মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। তাঁর শূণ্যস্থান পূরণ হবার নয়।
আকরাম খান দুলাল এর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসুচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যেগে আজ বিকেল ৩ টায় স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল।
এছাড়া সন্দ্বীপ উপজেলা মুক্তিযোদ্বা সংসদ এর উদ্যেগে সকাল ১০ টায় উপজেলা কমপ্লেক্সে শোক র্যালী ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সন্দ্বীপ পাবলিক হাই স্কুলে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর নিজ পরিবার, কর্মস্থল ঢাকায় নিউটেক্স গ্রুপে, তাঁর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, সন্দ্বীপের এই কৃতিসন্তান ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি মগধরা ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন।
এই মহান কর্মবীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তি জীবনে শুধুমাত্র একজন শিল্পপতি ছিলেন না।
তাঁর কর্মের আলোক ছটায় তিনি বহুদিন বেঁচে থাকবেন সমাজে ও রাষ্ট্রে। তাঁর ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তাঁকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।