থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দিক নির্দেশনায় মিলনমেলার আয়োজন
প্রকাশিত : ১৩:০৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বিনোদন এবং সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগী ও অভিভাবকদের উদ্যোগে দিনব্যাপী মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতি বছরের মত এবারও এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া বিশষেজ্ঞগণের উপস্থিতি ও মূল্যবান পরার্মশ থাকবে। সেই সাথে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সাইন্টিফিক সেমিনার, মধ্যাহ্নভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন রয়েছে।
আগামী ৮ মার্চ (শুক্রবার) বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন থ্যালাসেমিয়া সেন্টার, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল এন্ড ইন্সটিটউটের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ওয়াকার আহমেদ খান, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন এন্ড হেমাটোলজি -অনকোলজি, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল এন্ড ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান পেডিয়াট্রিক মেডিসিন এন্ড হেমাটোলজি -অনকোলজি, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল এন্ড ইন্সটিটিউটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, আজগর আলী হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন এন্ড ক্লিনিক্যাল হেমাটোলজি কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. মনজুর মোর্শেদ, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের চাইল্ড ক্যান্সার ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কর্ণেল (অবসর প্রাপ্ত) ডা. শারমিন আরা ফেরদৌসী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তাসনিম আরা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের
ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা, এনার্জি এন্ড ফুড বিজনেস, ইটোচু কর্পোরেশনের ইনচার্জ মোঃ শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মেডিক্যাল অফিসার ডা. জাহিদুর রহমান, আইইউবির সহযোগী অধ্যাপক ও বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন সহ অনেকে।
থ্যালাসেমিয়া রোগী ও অভিভাবকদের সংগঠন উই আর নট এলোন " WANA" শিঘ্রই বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস এন্ড প্যারেন্টস’ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন হিসেবে নিবন্ধিত হবে। সারা বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং অভিভাবকগণ এই পরিবারের সাথে সংযুক্ত। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সার্বিক সহযোগিতা, থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ, রোগীদের শারীরকি ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
থ্যালাসেমিয়া একটি জটিল অনিরাময় যোগ্য বংশগত রক্তরোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে একজন রোগীকে সারাজীবন রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হয়। যার ফলে একটি পরিবার পারিবারিক, সামাজিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে অনেক সমস্যা-সংকটের মধ্যে পড়ে। এসব অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-
> এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণমূলক অলাভজনক অরাজনৈতিক সংস্থা।
> নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন: সমগ্র বাংলাদেশে যেন নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করা।
> সরকারি রেজিস্ট্রেশন এবং পরিচয় পত্র প্রদান: থ্যালাসেমিয়া রোগীদেরকে রেজিস্ট্রেশন এর আওতাভুক্ত করা এবং পরিচয়পত্র প্রদান করার লক্ষ্যে কাজ করা।
> থ্যালাসেমিয়া কর্ণার: প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে অন্তত ২টি বেড সহযোগে থ্যালাসেমিয়া কর্ণার স্থাপন এবং নিয়মিত কাউন্সেলিং সেবার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য কাজ করা।
> থ্যালাসেমিয়ার ঔষধ: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে অথবা ভর্তুকি-মূল্যে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সব জেলায় ঔষধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।
> বাহক পরীক্ষা করা এবং বাহকে-বাহকে বিবাহ বন্ধ করা বা নিরুৎসাহিত করা: দেশের সকল জনগণকে বাহক টেষ্ট অর্থাৎ Hemoglobin Electrophoresis পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করা।
> মানসিক স্বাস্থ্য: থ্যালাসেমিয়া রোগীরা দীর্ঘদিন একটা জটিল রোগ শরীরে বহন করার ফলে মানসিকভাবে যেন ভেঙ্গে না পড়ে, তাদের মনোবল অটুট রাখার জন্য সবসময় কাউন্সেলিং সেবা অব্যহত রাখা।
> কর্মসংস্থান: থ্যালাসেমিয়া রোগীদের 'ডিসএবিলিটি অ্যাক্ট ২০১৩/ প্রতিবন্ধী আইন’ এ অন্তর্ভুক্তকরণের মাধ্যমে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কাজ করা।
> সচেতনতা বৃদ্ধি: থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সবার মাঝে এখনো অনেক নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে, গঠণমূলক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করা।
> ডাক্তার এবং রোগীদের নেটওয়ার্ক: সারা বাংলাদেশের সকল থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং ডাক্তারদের মাঝে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করতে কাজ করা।
> ডিএনএ ল্যাব প্রতিষ্ঠা: প্রতিটি জেলা শহরে অথবা অন্তত বিভাগীয় শহরগুলোতে ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করার লক্ষ্যে কাজ করা, যেন দুজন বাহকের মধ্যে বিবাহ হয়ে গেলেও তাদের অনাগত সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নিতে না পারে সেজন্য 'প্রি-ন্যাটাল ডায়াগনোসিস' -পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হতে পারে।
> বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে এ্যাডভোকেসি করা যেন তারা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসতে পারে এবং সমগ্র বাংলাদেশে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে।
> দেশের গাইনোকোলজিস্টগণের সাথে নিয়মিত লিয়াজোঁ রক্ষা করে গর্ভবতী নারী এবং তার স্বামীদের প্রথমবার ভিজিটের সময় বাকি সব পরীক্ষা নিরীক্ষার সাথে Hemoglobin Electrophoresis পরীক্ষা যেন নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করা।
> ৩ মাস, ৬ মাস অথবা বাৎসরিক বিভিন্ন ইভেন্ট এর আয়োজন করা যেন থ্যালাসেমিয়া রোগীরা তাদের দক্ষতা ও প্রতিভাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে পারে।
> থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য করার জন্য বেসরকারি পর্যায়েও নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করা।
থ্যালাসেমিয়া কী?
থ্যালাসেমিয়া একটি মারাত্মক বংশগত রক্তের রোগ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন পর্যাপ্ত হয় না বলে রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙে যায়। যার ফলশ্রুতিতে রোগীর দেহে মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রতিমাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কষ্টকর।
কীভাবে একজন মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়?
থ্যালাসেমিয়া কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, কেবলমাত্র বাবা-মা উভয়েই এই রোগের বাহক (Carrier) হলে সন্তান এই রোগ নিয়ে জন্ম নিতে পারে। বাহকরা পুরোপুরি সুস্থ থাকে এবং এদের কোনো বাহ্যিক লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না, তবে ক্ষেত্রবিশেষে বাহকদের কারো কারো স্বল্প রক্তশূন্যতা দেখা যেতে পারে।
থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ:
ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, জন্ডিস ভাব, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, খিটমিটে মেজাজ, ঘন ঘন ইনফেকশন, মাথা/মুখের হাঁড়ের বিকৃতি।
প্রতিরোধের উপায়:
বাহকে-বাহকে বিবাহ নিরুৎসাহিত করা গেলে থ্যালাসেমিয়া শিশু জন্মানো প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য বিয়ের আগে আপনি বা আপনার হবু স্বামী/স্ত্রী থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা অবশ্যই জেনে নিন। কোন অবস্থায়ই একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক অপর একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহককে বিয়ে করবেন না। কারণ তা আপনার সারা জীবনে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা:
বাংলাদেশে শতকরা ১০ ভাগের অধিক জনসংখ্যা (প্রায় দুই কোটি মানুষ) থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক, যারা আসলে রোগী না এবং যাদের বাইরে থেকে দেখে বোঝারও কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ হাজারের অধিক শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে বাংলাদশে থ্যালাসমেয়িা রোগীর সংখ্যা ৭০ হাজাররেও বেশি
চিকিৎসা:
নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করা এবং তার ফলে দেহে জমে যাওয়া মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ঔষধের মাধ্যমে নিষ্কাশন করা, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য সারাজীবনব্যাপী এই কষ্টকর প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
থ্যালাসেমিয়া রোগী ও বাহক নির্ণয়ের উপায়:
Hemoglobin Electrophoresis পরীক্ষার মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বা রোগী কিনা তা নির্ণয় করা যায়।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জনপ্রতি রেজিস্ট্রেশন ফি ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। ফেব্রুয়ারী মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন করতে 01712515077- (কামরুন নাহার মুকুল) এই নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।
এমএম//