ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

দখলদারদের কবলে জোহরপুর বিট খাটাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২০, ৩ আগস্ট ২০১৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার জোহরপুর সীমান্ত ফাঁড়ি সংলগ্ন বিট খাটালটি জবর দখল করে পরিচালনা করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চলমান খাটালে হাজার হাজার গরু প্রবেশ করছে। এ খাটালটির পরিচালনায় থাকা অবৈধ দখলদাররা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খাটাল সংস্লিষ্টরা বলছেন , স্থানীয় প্রশাসন আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় খাটালটি অবৈধ দখল করে চাঁদাবাজি করছে একটি দখলদার সিন্ডিকেট। ফলে জোহরপুর সীমান্তপথে আসা ভারতীয় গরু-মহিষ নিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, জেলা চোরাচালান প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটি সুপারিশ না করায় হাইকোর্টে ৬১৬১ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন নারায়নপুর গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল হান্নান। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ আব্দুল হান্নান কে খাটাল পরিচালনার নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ থাকায় আব্দুল হান্নানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেই স্থানীয় প্রশাসন । এর পর নারায়নপুর ঘোষপাড়া গ্রামের মৃত মহবুল হকের ছেলে আবু বাক্কার হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীম কোর্টে ২৮৩৪/২১৮ নং আপিল আবেদন করেন। আব্দুল হান্নানের পক্ষে হওয়া হাইকোর্টের সব আদেশ ১২ জুলাই থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত ও বিট খাটাল পরিচালনার সকল কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুপ্রীম কোর্ট।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই ২৮৩৪/২০১৮ নং আপিল আবেদনের রায়ে স্থগিতাদেশ এর কপি বিজিবি-৫৩ বরাবর পাঠানো হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে আদালতের আদেশে খাটাল পরিচালনার অনুমতি দিলেও স্থগিতাদেশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

কাগজপত্র পর্যালচনায় দেখা গেছে, গত বাংলা ১৪২৩ বঙ্গাব্দে এ খাটালটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পান কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার এলঙ্গী গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে আব্দুস সামাদ । চলতি বছরেও নীতিমালা অনুযায়ী নবায়নের জন্য আবেদন করেন তিনি । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া শেষে গত ২২ মে হাইকোর্টে ৬৭৪৯/২০১৮ নং রিট ফাইল দায়ের করেন আব্দুস সামাদ। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হাইদার ও জাফর আহমেদ এর স্বমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তার পক্ষে রায় প্রদান করেন। হাইকোর্ট বিভাগ- স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, রিজিয়ন কমান্ডার বরাবর সীমান্ত-২ থেকে গবাদি পশুর বিট খাটাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইন সচিব-১ আদালতের রায় ও সংস্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই বাচাই শেষে জেলা চোরাচালান প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটিকে রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত-২ অধিশাখার উপসচিব আলমগীর হোসেন সাক্ষরিত এক চিঠিতে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন এবং সরকার পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। এই আদেশের অনুলিপি মহাপরিচালক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও রিজিয়ন কমান্ডার বর্ডার গার্ড রংপুর বরাবর প্রেরণ করেন।
এছাড়াও আব্দুস সামাদ তার অনুকূলে রায় পাবার পর খাটালটির মালিকানা বুঝে পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। আবেদনে, হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত-২ এর নির্দেশ পত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আদালতের আদেশ অমান্যকারী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ দাবী করেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেইনি। ফলে এখনও অবৈধ দখলদারদের মাধ্যমে এ খাটাল দিয়ে হাজার হাজার গরু প্রবেশ করছে।
গরু ব্যবসায়ী আবুল বাসার জানায়, একটি ভারতীয় গরু করিডর মূল্য সরকারীভাবে ৫০০ টাকা ধার্য করা হলেও প্রতিজোড়া গরু-মহিষে আদায় করা হচ্ছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যা আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি চাপ ছাড়া কিছুই না।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি