ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

দর্জির কাজ ও টিউশনি করিয়েও এ প্লাস পেল সুমাইয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৪:৫১, ৩ আগস্ট ২০২৩

অদম্য ইচ্ছের কাছে দারিদ্র্যতা যে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা তা আবারও দেখিয়ে দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। অভাব অনটনের সংসারে মায়ের সাথে দর্জির কাজ, কাঁথা সেলাই ও প্রাইভেট পড়ানোর ফাঁকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন ‘এ’ প্লাস।

তার এ সফলতায় গর্বিত এলাকাবাসীও। তবে আর্থিক অনটনের কারণে সুমাইয়ার উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর শহরের সুহাতা এলাকার জীবন মিয়া ও পারভিন আক্তারের বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার। সে এ বছর উপজেলার ভোলাচং হাই স্কুল থেকে মানবিক শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ প্লাস পেয়েছে। তবে তার এ সফলতা আর দশজনের মত মোটেই সহজ ছিলনা। অভাবের সংসারে অটোচালক বাবার আয় যথেষ্ট না হওয়ায় মা কাঁথা সেলাই করে সংসারের ঘানি টানেন। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেননি সুমাইয়া। তাইতো মায়ের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন দর্জি ও কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করে। আবার করাতেন টিউশনিও। 

এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাননি সুমাইয়া। নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি মায়ের সাথে প্রতিদিন কাঁথা সেলাই ও দর্জির কাজ করতেন। দিনভর কঠোর পরিশ্রম শেষে ছোট্ট আটসাট ঘরে পড়ার জায়গা হতো না। তাই চাচা স্বপন মিয়ার প্রতিষ্ঠিত গুঞ্জন পাঠাগারে বসে চালিয়ে যেতেন পড়ালেখা। 

তার এ অদম্য ইচ্ছার কারণে শিক্ষকরাও তাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়াতেন, পাশাপাশি এলাকাবাসী তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করত। এর সফলতাস্বরূপ সুমাইয়া অর্জন করে এ প্লাস। 

এলাকাবাসী জানায়, দারিদ্রতা যে কেবল মাত্র অজুহাত, তা যেন আবারও প্রমাণ করে দিলেন সুমাইয়া। সেই ছোট্টবেলা থেকেই মেয়েটা অনেক কষ্ট করে জীবনটা চালিয়ে নিচ্ছে। তবে লেখাপড়ার প্রতি তার অন্যরকম একটা আগ্রহ রয়েছে। গ্রামের সিনিয়র শিক্ষার্থীরাও তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে। তার এ সফলতা সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। তার এগিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী সব সময়ই পাশে থাকবে। 

সুমাইয়ার বাবা-মা বলেন, অভাবের সংসারে একটা সময় সুমাইয়াকে তার দাদির কাছে রেখে আমরা জীবিকার তাগিদে ছোট মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে চলে গিয়েছিলাম। তখন সুমাইয়া দাদির কাছে থেকেই নিজরে মত করে পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। সে তখন ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আমরা যখন ফের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়িতে ফিরে আসি তখন সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। 

তারা আরও বলেন, সুমাইয়া লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি, দর্জির কাজ এবং কাঁথা সেলাই করে সংসারের খরচ চালাতে অবদান রাখছে। সে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করাতে আমরা খুশি। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্নই দেখি তবে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে দারিদ্রতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুমাইয়ার উচ্চ শিক্ষাসহ লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারবো কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। 

মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানান, সকলের সহযোগিতায় ভাল ফলাফল নিয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডির পার হয়েছি। আর এর পেছনে আমার চাচা স্বপন মিয়া ও ৩ জন শিক্ষক যারা আমাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়িয়েছেন তাদের অবদান রয়েছে। তবে অভাবের সংসার হওয়ায় সামনের শিক্ষা জীবন কিভাবে চালিয়ে নেব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। 

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ একরামুল সিদ্দিক বলেন, সুমাইয়ার ভবিষ্যত শিক্ষা জীবন আরও মসৃন করতে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে। শীঘ্রই তার পরিবারের সাথে দেখা করে সংগ্রামী এই শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষাসহ পড়ালেখা চালিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি