ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত

প্রকাশিত : ১৪:৫৪, ১৪ মে ২০১৯

ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মহানবী (সা.) মদিনায় একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সেখানে যাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তিনি যাকাত আদায় ও তা বিতরণের জন্য কর্মচারি নিয়োগ করতেন। যাকাতের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার ফলশ্রুতিতে সেখানে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তা কিছু সম্পদশালী লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজের পিছিয়ে পড়া অভাবগ্রস্থদের মধ্যেও বণ্টিত ও আবর্তিত হতে থাকে।

খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে হযরত আবু বকর (রা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা জোরদার করেন। হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক অবস্থার এতটা উন্নতি হয়েছিল যে, যাকাতের সম্পদ বিতরণের জন্য প্রাপক (মুসতাহিক) পাওয়া যাচ্ছিল না। ইয়েমেনের গভর্নর সংগ্রহীত যাকাত সম্পদ মদিনাতে পাঠাতে চাইলে খলিফা তাকে তা সেখানেই বিতরণের নির্দেশ দেন। কিন্তু গভর্নর জানান যে, ইয়েমেনে যাকাতের সম্পদ বিতরণের জন্য প্রাপক পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে উমর ইবনে আবদুল আযিযের সময়ে মিসরের গভর্নর জানান যে, সেখানে যাকাতের সম্পদ বিতরণের জন্য উপযুক্ত প্রাপক নেই। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যাকাত দারিদ্র্য বিমোচনে বিরাট অবদান রাখতে পারে এবং ইসলামের ইতিহাসে তার নজির রয়েছে। যাকাতের পাশাপাশি উশর, ওয়াকফ, ফিতর, সদাকা, কর্জে হাসানা ইত্যাদি ব্যবস্থাও ইসলামী সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে বিশেষ অবদান রাখে। ইসলামের যাকাত ব্যবস্থা ছিল একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত স্বর্ণালী সম্পদ।

খোলাফায়ে রাশেদীনের পরে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ইসলামী নীতির বিকৃতি ঘটলেও উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলেও যাকাত আদায় ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হতো; যদিও বিতরণ ব্যবস্থায় কিছু ব্যত্যয় ও অনিয়ম দেখা দিয়েছিল। খিলাফত ব্যবস্থার পতন ও ঔপনিবেশিক শাসনের ফলশ্রুতিতে মুসলিম বিশ্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত ব্যবস্থাপনার অবসান ঘটে। ঔপনিবেশিক শাসনে পুঁজিবাদের ভয়াল আগ্রাসন মুসলিম সমাজকে একেবারে পঙ্গু করে দেয়। ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে মুক্তির পর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের এরূপ সুন্দর ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আজ মুসলিম সমাজে এর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা যেন সেই ‘ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণালী সম্পদ’ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা এখন ‘সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য’ পাশ্চাত্য বিশেষজ্ঞদের কাছে উপদেশ খুঁজে বেড়াচ্ছি। এখন বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পরামর্শ ও চাপ দিচ্ছে। অনেক মুসলিম দেশের সরকার রাজস্ব তহবিলে সম্পদের ঘাটতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।

আজকে হাতেগোনা কয়েকটি দেশ বাদ দিলে অধিকাংশ মুসলিম দেশের সরকারের অর্থনৈতিক পলিসি ডকুমেন্টে যাকাত আর্থিক ও রাজস্ব খাত হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে না। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তারা বিদেশের কাছে অনুদান ও ঋণের জন্য ধর্ণা দিচ্ছে; অথচ যাকাতের মত লুকায়িত বিশাল সম্পদের দিকে নজর দিচ্ছে না। দুঃখজনক যে, অধিকাংশ মুসলিম দেশেই আল্লাহ নির্দেশিত বাধ্যতামূলক এই ইবাদতটি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না।

(সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম)

এএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি