দিরাইয়ে প্রকাশ্যে একরার বাহিনীর অস্ত্রের মহড়া
প্রকাশিত : ১৫:৫৯, ৩১ মার্চ ২০২৪
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে আবারও বন্দুক নিয়ে মহড়া দিয়েছে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরার হোসেনের লোকজন। এ নিয়ে টানা তিনবার প্রকাশ্যে অস্ত্রের প্রদর্শন করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি দেখালেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বন্দুক নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর একরার বাহিনী হামলায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে ওসমানী হাসপাতালে রওনা দেন। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়।
বিকাল সাড়ে ৪টায় আতঙ্কিত মানুষের ফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্দুকের মহড়ার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে দিরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে বারবার অস্ত্র প্রদর্শন করার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে গ্রামের লোকজন।
এদিকে, চেয়ারম্যান একরার হোসেন জানিয়েছেন এগুলো কাঠের ডামি অস্ত্র ও পাইপ।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্ব নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান একরার হোসেনের সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গ্রামবাসীর বিরোধ চলছে। একরার হোসেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ঘটনায় বোর্ড তদন্ত করে অনিয়মের অভিযোগে তার কমিটি বাতিল করে দেয়। ফলে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তার।
এর জের ধরে গত ৯ ডিসেম্বর সিলেট শিক্ষাবোর্ডে কমিটি বাতিলের কাগজ নিয়ে আসার পথে বোর্ড ক্যাম্পাসেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ লোক শামীম আহমদ হঠাৎ হামলা করে শিক্ষকের ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। মোগলবাজার থানায় অভিযোগটি দায়ের করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে অভিযুক্ত শামীম আহমদ জোরপূর্বক স্কুল ক্যাম্পাসে ঢুকে সংবাদ সম্মেলন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মো. আনিস আহমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন। এ ঘটনায় আনিসুর রহমান সিলেটে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। গত ৯ মার্চ চেয়ারম্যানের লোকজন শিক্ষক আনিসুর রহমানের ওপর হামলা করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে এখন সিলেটে চিকিৎসাধীন।
এর প্রতিবাদে স্কুল শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী মানববন্ধন করার সময় তার সমর্থক একজন বন্দুক নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে তেড়ে যায়। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে একরার হোসেন, তার ভাই কামরুল হোসেন ও ঘনিষ্ঠ সমর্থক রাজু আহমদসহ কয়েকজন অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করতে গেলে স্থানীয়রা রুখে দাঁড়ায়।
এই দুই ঘটনায় অস্ত্র প্রদর্শনের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, শুক্রবার (২৯ মার্চ) জুমার নামাজের সময় একরার হোসেনের চাচাতো ভাই ফজলু মিয়ার সঙ্গে গ্রামের প্রতিপক্ষের তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। মাগরিবের নামাজের সময়ও তার ভাতিজার সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এর জের ধরে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় একরার হোসেনের লোকজন ও গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় একরার হোসেনের ভাই ও ভাতিজারা বন্দুকের গুলি ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। বন্দুকের গুলিতে প্রতিপক্ষের রফু মিয়া, এওয়ার মিয়া, সমসু মিয়া আহত হন। সংঘর্ষে একরার হোসেনের পক্ষের রাজিব হোসেন, সেবুল, সুবাসসহ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দিরাই থানার ওসি (তদন্ত) রতন দেবনাথ বলেন, ‘খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ পাঠানো হয়। এ ঘটনায় অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এএইচ
আরও পড়ুন