ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দুঃখ সওয়া জীবনে বাংলার মানুষই তাঁর আপনজন

দেবাশীষ রায়

প্রকাশিত : ২০:১১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ২১:০৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Ekushey Television Ltd.

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর জন্ম। বেড়ে ওঠেন মধুমতিপাড়ের শান্ত, সুনীল গ্রামটিতে।

রাজনীতিক বাবাকে খুব বেশি কাছে পেতেন না শেখ হাসিনা। ১৯৫৪ সালে পরিবারের সাথে ঢাকা আসেন। আজিমপুর গার্লস বালিকা বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন ১৯৬৫ সালে। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়। বাবাকে কাছে পেতেন না। পাবেনই বা কিভাবে? ছোটো ভাই রাসেলের কাছে বাবার বাড়িতো ছিল ওই কারাগার। পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে বাবা-মার আদরের হাসু থাকতেন মিছিলের সামনের কাতারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বিশিষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিয়ে হয় শেখ হাসিনার। 

২৫ মার্চ কাল রাত, স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে রাখা হলো পাকিস্তানের কারাগারে। কামাল, জামাল দুই ভাই গেলেন মুক্তিযুদ্ধে। মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বোন রেহানা ও ছোট্ট রাসেলসহ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি শেখ হাসিনা। বন্দি অবস্থায় পুত্র সন্তানের জন্ম। বাবার দেয়া নামে ছেলের নাম রাখলেন জয়। দেশ স্বাধীন হলো। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানিদের পুড়িয়ে দেয়া প্রিয় স্বদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চাইলেন। ভালো রাখতে চাইলেন বাংলার মানুষকে। সদ্য স্বাধীন দেশে ষড়যন্ত্রও শুরু হলো। পঁচাত্তরে শেখ হাসিনা স্বামীর সাথে গেলেন জার্মানিতে। সাথে নিয়ে গেলেন ছোটো বোন রেহানাকে। 

সেখানে থাকা অবস্থায় খবর পেলেন বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের সবাইকে যে খুনিরা নৃশংসভাবে খুন করেছে তা জানতে আরো বেশ কিছু সময় গেছে। এরপর নির্বাসিত জীবন। শেখ হাসিনা ফিরলেন ১৯৮১ তে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে। বুকে পাথর চাপা শোক। সারাবাংলা ঘুরে বাঙালির মাঝেই খুঁজেছেন বাবা, মা আর ভাইদের। এবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্বেই কেঁপেছে রাজপথ। স্বৈরাচারের পতনের পর গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। ক্ষমতায় যেতে না পারলেও থামেনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, থামেনি ভোট ভাতের লড়াই। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আনেন শেখ হাসিনা। সবহারা একজন শেখ হাসিনা বাবার মতোই বাংলার মানুষের ভাগ্যেন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করতে থাকেন। সব সূচকে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। আবারো ছন্দপতন। ২০০১ সালে সূক্ষ ষড়যন্ত্রে ক্ষমতায় বিএনপি-জামাত জোট। সারাদেশে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব। আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসে নির্যাতন নীপিড়ন। পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগান শেখ হাসিনা। 

বোমা বন্দুকে পিছু হটেননি কখনো। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পোতা হয় ৯৬ কেজির বোমা। হাওয়া ভবনের ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। এভাবে ১৯ বার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার চেষ্টা করেছে স্বাধীনতাবিরোধী খুনি চক্র। ২০০৮ সালে আবারো ক্ষমতায় ফেরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। এবার বঙ্গবন্ধু কন্যার অন্যরকম লড়াই। রাজনীতির অভিধানে যুক্ত করলেন উন্নয়নের গণতন্ত্র। জাতির পিতার স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগী শেখ হাসিনা। অর্থনীতির সব সূচকে এগিয়ে চলে বাংলাদেশ। সেখানেও বাধা। আগুন সন্ত্রাস, হেফাজতি তাণ্ডব মোকাবেলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতির পিতার খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে বাঙালিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। 

শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের মূলে বাংলার মানুষ। কারণ বাবার মতো বাংলার মানুষই যে তাঁর আপনজন। পদ্মাসেতু, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল- এসব কথা বা নাই বললাম। এই বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে মানুষ না খেয়ে মরে না, পেট পুরে খায়। একজন মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে সে স্বপ্নও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তিনি। 

করোনার থাবায় যখন গোটা বিশ্ব পর্যুদস্ত তখন শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তে শিল্প বাঁচলো, মানুষ বাঁচলো। শুরুতে কিছুটা খামতি থাকলেও হাসপাতালগুলোকে কোভিড চিকিৎসার উপযোগী করা হলো, বাড়ানো হলো করোনা টেস্টের সংখ্যা। যখন উন্নত দেশগুলো টিকা পায়নি তখন অনেক আগেই বাংলাদেশ টিকার ব্যবস্থা করে ফেলে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিশ্বব্যপী টিকার সংকট দেখা দিলেও বসে থাকেননি শেখ হাসিনা। সব ব্যবস্থায় তিনি করেছেন। করোনা বিধ্বস্ত করতে পারেনি বাংলা ও বাংলার মানুষকে। সাহসী আর সময়োপোযোগী সিদ্ধান্তের জন্যইতো শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব নেতা। আর তাঁর উন্নয়ন দর্শনে বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’।  

এতো এতো সাফল্যের পরে অতৃপ্তির জায়গা যে একেবারে নেই তা কিন্তু নয়। সেই জায়গাগুলোতেই নজর দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ছোঁয়ায় এই বাংলা হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। এই বাংলাদেশই হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। কারণ আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। জন্মদিনে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই ‘থ্যাঙ্ক ইউ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’ 

লেখক: সাংবাদিক

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি