ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দুর্গাপূজার ইতিকথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দুর্গা পৌরাণিক দেবী। তিনি আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা ইত্যাদি নামে অভিহিত হন। দুর্গা বা দুর্গম নামক দৈত্যকে বধ করায় তাঁর নাম দুর্গা। আবার জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলে তাঁকে বলা হয় দুর্গতিনাশিনী দুর্গা।

ব্রহ্মার বরে পুরুষের অবধ্য মহিষাসুর নামে এক দানব স্বর্গরাজ্য দখল করলে রাজ্যহারা দেবতারা বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বিষ্ণুর নির্দেশে তখন সব দেবতার তেজঃপুঞ্জ থেকে দুর্গার জন্ম হয়।

দেবতাদের শক্তিতে শক্তিময়ী এবং বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে তিনি যুদ্ধে মহিষাসুরকে বধ করেন। এ থেকে তাঁর আরেক নাম হয় মহিষমর্দিনী। পুরাণমতে, দুর্গা মহাদেব বা শিবের স্ত্রী। তাঁর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো সোনালি হলুদ। তিনি দশভুজা ও ত্রিনয়নী। তাঁর বাহন সিংহ। দেবীপুরাণ, দেবী ভাগবত, কালিকাপূরাণ, দুর্গোৎসববিবেক, দুর্গোৎসবতত্ত্ব প্রভূতি গ্রন্থে দুর্গা সম্পর্কে বর্ণনা আছে।

পুরাণে উল্লিখিত আছে যে, পুরাকালে রাজ্যহারা রাজা সুরথ এবং স্বজনপ্রতারিত বৈশ্য সমাধি মেধস মুনির আশ্রমে উপস্থিত হলে তাঁর পরামর্শে উভয়েই দেবী দুর্গা বা ভগবতীর পূজা করেন। পূজায় তুষ্ট হয়ে তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন।

কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুসারে রামচন্দ্র রাবণবধের জন্য অকালে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন বলে এর নাম হয় অকালবোধন বা শারদীয় দুর্গাপূজা। লঙ্কারাজ রাবণ চৈত্র মাসে দুর্গাপূজা করতেন। বসন্তকালে দূর্গাপুজা হলে তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা।

বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ সর্বত্র বাঙালিরা সাধারণত শরৎকালেই দুর্গাপূজা করে। বাসন্তী পূজা হয় চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে, আর শারদীয়া পূজা হয় আশ্বিন বা কার্তিকের শুক্লক্ষে। শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধন হয় এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে (মহানবমী) পূজা দিয়ে দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

ওই দিন কোথাও কোথাও দশোহরার মেলা হয়। পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নতুন পোশাক পরে। তাছাড়া আলিঙ্গন, প্রণাম, আশীর্বাদ ইত্যাদির মাধ্যমে তারা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে।

দশোহরার মেলার দিন নৌকাবাইচ হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অবাঙালিরাও ভিন্ন ভিন্ন নামে, যেমন- কাশ্মীর ও দাক্ষিণাত্যে অম্বা ও অম্বিকা, গুজরাটে হিঙ্গুলা ও রুদ্রাণী, কান্যকুব্জে কল্যাণী, মিথিলায় উমা প্রভূতি নামে দেবী দুর্গার পূজা হয়।

দুর্যোধনঃ মহাভারতে বর্ণিত অন্ধ রাজা ধূতরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র। মাতা গান্ধারী। এক শ ভ্রাতার মধ্যে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ। ভীম ও দুর্যোধন একই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। যুধিষ্ঠিরসহ পাণ্ডব ভ্রাতাদের সঙ্গে দুর্যোধন ও তাঁর কৌরব ভ্রাতারা একই সঙ্গে প্রতিপালিত হন। দ্রোণাচার্য ও শ্রীকৃষ্ণের ভ্রাতা বলরামের কাছে তিনি অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা লাভ করেন এবং গদাযুদ্ধে বিশেষ পারদর্শী হন।

পাণ্ডব ভ্রাতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে শত্রুতা সৃষ্টি হলে তিনি পাণ্ডবদের জতুগৃহে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করেন। তাতে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি যুধিষ্ঠিরকে পাশাখেলায় আহ্বান করেন। খেলায় কূটবু্দ্ধি প্রয়োগ করে তিনি যুধিষ্ঠিরকে পরাস্ত করেন। শর্তানুযায়ী পাণ্ডব ভ্রাতারা বনবাসে যেতে বাধ্য হন।

বনবাস থেকে ফিরে অসার পর পাণ্ডবদের রাজ্যের অংশ দিতে দুর্যোধন অস্বীকৃতি জানান।

এ থেকেই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। দুর্যোধন ছিলেন যুদ্ধে কৌরবপক্ষের প্রধান সেনাপতি। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি প্রথমে আত্মগোপন করেন ও পরে ভীমের সঙ্গে গদাযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। যুদ্ধকালে কৃষ্ণের ইঙ্গিতে ভীম যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করে দুর্যোধনের ঊরুতে আঘাত করেন। ফলে ঊরুভগ্ন হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি