ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দুর্গার আদ্যাশক্তির রূপ নারীশক্তি

অর্নিতা দাস অর্নি

প্রকাশিত : ১৪:৩৮, ২২ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ১৪:৩৮, ২২ অক্টোবর ২০২০

অর্নিতা দাস অর্নি

অর্নিতা দাস অর্নি

Ekushey Television Ltd.

‘৯ বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার, শ্বাসরোধ করে হত্যা’, ‘মাদ্রাসার শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রীর যৌন হয়রানি’, ‘গণধর্ষণের পর মা ও মেয়েকে মাথা মুড়িয়ে গ্রামে ঘুরিয়েছে এলাকার নেতারা’ সংবাদগুলো কি খুব অপরিচিত লাগছে? না, মোটেই না। খবরের পাতা উল্টালেই বা টিভি খুললেই যে শব্দ প্রথমের চোখ পড়ে তা হলো ‘ধর্ষণ’। 

বর্তমান সময়ের সব থেকে আলোচিত এবং সমালোচিত ঘটনা হচ্ছে যৌন হয়রানি। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউই বাদ যায় না নরপিশাচদের ভয়াল থাবা থেকে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছর সারা দেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ১ হাজার ৪১৩ নারী ও শিশু। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ৭৩২। অর্থাৎ, গতবছরের তুলনায় ধর্ষণের হার দ্বিগুণ, যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। 

২০২০ সালে কোভিড মহামারি চলাকালীন সময়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা আরও বেড়ে গেছে। দিন দিন শুধু বেড়েই চলছে তবে নারীরাও আর নির্বাক নেই। এখনই সময় সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার, ভেতরের নারীশক্তিকে জাগ্রত করে অপশক্তিকে প্রতিহত করার।

নারীশক্তিকে মা দুর্গার আদ্যাশক্তির রূপ হিসেবে উপমা দেয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মমতে, ‘দুর্গা দূর্গতীনাশিনী’। এই দূর্গতিনাশ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা কোনো গোষ্ঠীর নয়, সমগ্র জাতির অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির লড়াই। নারীরা মা দুর্গার মতো দশ হাতে যেমন ঘরে বাইরে সমান তালে সামলায় ঠিক তেমনি সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইও করতে পারে। 

তাই নারীর প্রতি এমন সহিংসতাকে নির্বাকভাবে আর সহ্য নয়, সময় এসেছে আওয়াজ তুলে প্রতিবাদ করার। যদি কেউ প্রতিবাদ না করে তাহলে যৌন হয়রানি দিন দিন বেড়েই যাবে।

কিছুদিন আগে নোয়াখালীতে এক মধ্য বয়স্ক নারীর সাথে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় সমস্ত জাতি আঁতকে উঠেছে। এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ঘটছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গড়ে প্রতিনিয়ত ৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়, যার হয়তো সবগুলো বিচারের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে মানুষরূপী পশুদের বর্বরতা বেড়েই চলেছে। 

এখন প্রশ্ন এর শেষ কোথায়? 
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যদি নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, তাহলে দেশের উন্নয়ন কার হাত ধরে এগোবে? এই সুপ্ত প্রশ্ন প্রতিটি শিশু মনে, নারীর মনে এবং সন্তানের বাবা মায়ের মনে। 

শুধুমাত্র নারীদের চলাফেরা, জীবনযাপন, পোশাক-পরিচ্ছদের দোষ দিয়ে তো ধর্ষণের দায় এড়ানো সম্ভব নয়। দিন দিন মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে ফলে বিভিন্ন দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। নারী সমাজকে গৃহবন্দি করে রোকেয়ার কালো যুগে চলে গেলেই এর সমাধান মিলবে না। কারণ ৬ মাসের বাচ্চা থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধাও হয়রানির শিকার হয়।

সুতরাং শিশুদের ছোট থেকেই মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নৈতিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমের অভিভূক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নারীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও দেয়া উচিত যেন যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়। আর নারী পুরুষ সমান অধিকার শুধুমাত্র নথিভুক্ত করলেই চলবে না ব্যক্তি জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে শিশুদের ছোট থেকেই শিক্ষা দিতে হবে।   

সময় এখন প্রত্যেক নারীর সহিংসতার বিরুদ্ধে মুখ খোলার, ভেতরের নারী শক্তিকে জাগ্রত করে সমাজের মানুষরূপী জানোয়ারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের আগামী নারী প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

লেখক: শিক্ষার্থী

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি