সৈয়দ আশরাফ
দুঃসময়ের ভ্যানগার্ড
প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৫৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৯
১/১১’র সময় যখন রাজনীতির টালমাটাল অবস্থা। আওয়ামী লীগে যখন ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে ওঠে, দল থেকে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে দলের কিছু ‘সিনিয়র নেতা’ ষড়যন্ত্রের পন্থা অবলোপন করেছিলেন তখন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও সৈয়দ আশরাফই আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন।
২০১১ সালে সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশোধন, ১৯৭২-এর মূলনীতি পুনর্বহাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ, ১/১১ পরবর্তী দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৯০ দিনের অধিক ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি প্রমার্জ্জনা, নারীদের জন্য সংসদে ৫০ টি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়। বিএনপি, জামায়াত তখন এটা নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করে রাখে। তখন সৈয়দ আশরাফ সংশোধনীর আইনি ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলেন। বিরোধীদের আপত্তি চুপসে যায়।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীদের নগ্ন উল্লাসে রাজধানী ঢাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়েই রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নিয়ে মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু দৃঢ় কয়েকটা কথা হেফাজতের তান্ডবলীলায় পানি ঢেলে দিয়েছিল। এভাবেই সৈয়দ আশরাফ শেখ হাসিনা ও দলের প্রশ্নে সারাজীবন আপোষহীনভাবে কাজ করে গেছেন।
অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সৈয়দ আশরাফ প্রায়ই বলতেন, ‘আমার কাজ দুইটি। এক, নেত্রীকে সবসময় সিকিউর (নিরাপদ) রাখা। দুই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় নিয়ে আসা।’ আর এই দুইটি কাজও করতেন খুব সন্তর্পণে। নিজের কাজই যেন ব্যহত না হয় সেজন্য নিজের সামনে একটি কৃত্রিম দেয়ালও তিনি দাঁড় করিয়েছিলেন। আমরা অনেকেই শুনেছি, সৈয়দ আশরাফ দুপুর একটা পর্যন্ত ঘুমায়, বিকেল বেলা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বাইরে যায়। নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করার সময় পেতেন না এমনকি অনেক সময় সৈয়দ আশরাফকে মোবাইল ফোনেও পাওয়া যেত না। দপ্তরেও অনুপস্থিত থাকতেন। এই মিথগুলো ছড়ানো হয়েছিল যাতে কোন রকম কোনো নেতা-কর্মী, মন্ত্রী/এমপি কেউ যেন এই দেয়াল ভেদ করে তার কাছে না পৌঁছাতে পারে। এইসব মিথের সবকিছুই ছিল সৈয়দ আশরাফের নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখার কৌশলমাত্র।
লেখক: সদস্য সচিব, প্রগতিশীল লেখক ফোরাম,
সদস্য সচিব, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সীতাকুন্ড উপজেলা শাখা।
আআ/এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।