ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

দেখে আসুন আহসান মঞ্জিল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৫:৫৫, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। স্থাপনাটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে ঢাকার শত বছরের পুরনো ইতিহাস। এটি পুরনো ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। নবাব পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জমিদার শেখ ইনায়েত উল্লাহ রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। ১৮৩০ সালে নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি কিনে নেন। ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গনি সেখানে প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন। দীর্ঘ ১৩ বছর লেগেছিলো প্রাসাদটি নির্মাণ করতে। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল'।

‘আহসান মঞ্জিল’ বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও নবাবি ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে টিকে থাকা এক সমৃদ্ধশালা।

একসময় ঢাকা শহরের সবচেয়ে উঁচু গম্বুজ ছিলো আহসান মঞ্জিলের প্রাসাদের ছাদের ওপরের গম্বুজটি। দোতলা এ ভবনের বারান্দা ও মেঝে তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে খাবার ঘর, লাইব্রেরি, জলসাঘর, দরবার হল এবং বিলিয়ার্ড খেলার জায়গা। আর প্রাসাদের দোতলায় রয়েছে অথিতিদের থাকার কক্ষ, বৈঠকখানা, নাচঘর, গ্রন্থাগার এবং আরো কিছু বসবাসের কক্ষ। প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়ি বারান্দা রয়েছে। দক্ষিণ দিকে দোতলার বারান্দা থেকে একটি খোলা সিঁড়ি সামনের বাগান পর্যন্ত নেমে গেছে। প্রাসাদের ঠিক সামনে রয়েছে চমৎকার ফুলের বাগান ও সবুজ মাঠ।

আহসান মঞ্জিলকে ঢাকা শহরের প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য নিদর্শন হিসাবে মনে করা হয়। আর তৎকালীন নবাবদের হাতে এই ভবনেই প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠে। আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদেরও সমানভাবে আকর্ষণ করেছিলো।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘর

অনেকবার সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, পরিমার্জনের পর ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জাদুঘরের সংগ্রহশালা। মোট ৪ হাজার ৭৭ টি নিদর্শন আহসান মঞ্জিলের ২৩টি কক্ষে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করা আছে। নয়টি কক্ষ সেই নবাবী আমলের মতো করেই সাজানো রয়েছে। প্রতিটি কক্ষ আপনাকে সেই নবাবী আমলের ইতিহাসের কাছে নিয়ে যাবে।

জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য আছে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, নওয়াবদের পরিচিতি ও বংশ তালিকা। নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, বৃহদাকার লোহার সিন্দুক, কাঠের আলমারী, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কাচ ও চিনামাটির থালা-বাসন, হাতির মাথার কঙ্কাল, ঢাল ও তরবারি। নওয়াব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা, ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, সিংহাসন, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, হিন্দুস্থানী রুম, রাজকীয় অতিথিদের বেডরুম ও নাচঘর। আরও আছে সমসাময়িককালের বিখ্যাত ব্যাক্তিদের প্রতিকৃতি ও নওয়াবদের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিল টিকেট মূল্য

আহসান মঞ্জিলের গেইটের বাইরে থেকে প্রবেশ টিকেট কাটতে পারেন ইচ্ছা করলে।

https://www.ahsanmanzilticket.gov.bd/ থেকে অনলাইনেও টিকেট কাটতে পারেন।

বাংলাদেশিদের জন্য ৪০ টাকা, বাচ্চাদের জন্য ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৫০০ টাকা, সার্ক ভুক্তদেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা

আহসান মঞ্জিল কিভাবে যাবেন

বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসার পর ঢাকার সদরঘাটগামী বাসে উঠে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির কাছে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নামতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় যেতে পারবেন আহসান মঞ্জিল। অথবা ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত এসে রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে আহসান মঞ্জিল দেখতে যেতে পারেন। অথবা গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার মোড় হয়ে বাবুবাজার ব্রিজের আগে নেমে রিক্সায় আহসান মঞ্জিল যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে সিএনজিতে করে সরাসরি চলে আসতে পারবেন আহসান মঞ্জিল।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

আহসান মঞ্জিল ঘুরে দেখার পাশাপাশি আপনি চাইলে কাছাকাছি অবস্থিত পুরান ঢাকার আরও কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লালবাগ কেল্লা, তারা মসজিদ, আর্মেনিয়ান চার্চ, হোসেনি দালান, বাহাদুর শাহ পার্ক (ভিক্টোরিয়া পার্ক) ও সদরঘাট লঞ্চঘাট। আর খাবারের জন্যে পুরান ঢাকার বিখ্যাত খাবার হোটেল গুলোতো আছেই।

এসইউএ/এসি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি