দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় সাজতে শুরু করেছে কুষ্টিয়ার মন্দিরগুলো
প্রকাশিত : ২০:২৪, ১০ অক্টোবর ২০২৩
দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। এ বছর কুষ্টিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, গত বছরের চেয়ে মন্ডপের সংখ্যা বেড়ে সর্বমোট ২৫৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। কুষ্টিয়া সদর ৮৩ কুমারখালী ৬০ খোকসা ৬৪ মিরপুর ২৬ ভেড়ামারা ১১ দৌলতপুর ১৪।
মার্কেট শপিং মলসহ সব জায়গায় উৎসবই আমেজ। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ২০ অক্টোবর শুক্রবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজা উপলক্ষে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মন্দিরগুলোতে।
রং তুলির শেষ আঁচড় টেনে দেবী দুর্গাসহ সব প্রতিমা তৈরির কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ করে ফেলেছেন কুষ্টিয়ার প্রতিমা কারিগররা। এখন মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মণ্ডপ ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারী।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে "দুর্গাষষ্ঠী", "দুর্গাসপ্তমী", "মহাষ্টমী", "মহানবমী" ও "বিজয়াদশমী" নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন সনাতনীরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয়।
দুর্গাপূজা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রচলিত একটি সনাতন ধর্মীয় উৎসব। এটি সারা বিশ্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা পালিত হয় তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ (পূর্বাঞ্চল) এবং বাংলাদেশে ঐতিহ্যগত ভাবে উৎসবটি উদযাপিত হয়। উৎসবটি ইতিমধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়।
এদিকে কুষ্টিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জেলার ২৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। স্থানভেদে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন অধিকাংশ মন্ডপের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এছাড়া প্রশাসনের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে।
সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠের আদি-বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। এরপর মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেছিলেন। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শিব বিপদে পড়ে তৃতীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে ইন্দ্র যে পূজার আয়োজন করেছিলেন সেটি ছিল চতুর্থ দুর্গাপূজা। এরপর থেকেই পৃথিবীতে মুনিঋষি, সিদ্ধপুরুষ, দেবতা ও মানুষেরা নানা দেশে নানা সময়ে দুর্গাপূজা করে আসছে।
গজ উপর দেবী দুর্গার আগমন হয়ে
চরণাযুধ উপর দেবী দুর্গা প্রস্থান।
ষষ্ঠীতে থেকে বিজয় দশমী পর্যন্ত দেবী দুর্গার আরাধনায় থাকবেন ভক্তগন আর সবার মনে একটাই প্রার্থনা অসুর বিনাশের মাধ্যমে যেন সৃষ্টি হয় বসবাসের উপযোগী এক পৃথিবী আর ধর্মীয় সম্প্রীতির এই বাংলাদেশ, যেন ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায়ের মধ্য দিয়ে, অসাম্প্রদায়িক চেতনাই উজ্জীবিত হোক সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন