দেশে ইকো ট্যুরিজমের বিশাল সম্ভাবনা
প্রকাশিত : ১১:৪৮, ১৪ জুলাই ২০২১
ইকো-ট্যুরিজমের সম্পদে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। এ খাতে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। শুধু প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনার।
বাংলাদেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ। এসব নিদর্শনসমূহকে ঘিরে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে পারলে অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ।
ইকো ট্যুরিজম হলো একান্ত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রমণের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের উদ্দেশ্যে বন ও বন্যপ্রাণীর সৌন্দর্য অবলোকন। এটা একটি সামগ্রিক অভিজ্ঞতা যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা প্রকৃতির আকর্ষণগুলোকে উপলব্ধি করতে পারেন। ইকো ট্যুরিজম বলতে পরিবেশগত ও সংস্কৃতিগতভাবে টেকসই পর্যটন উন্নয়নকে বোঝায়, যা সমাজের বৃহত্তর অংশ ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের আর্থিক ও সামাজিকভাবে লাভবান হবার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
আমাদের দেশে দিনে দিনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইকো ট্যুরিজম। এটি নিরেট বিনোদনের জন্য ঘুরে বেড়ানো নয়। বরং তার চেয়েও বেশি কিছু। পর্যটনের এই নতুন ধারণায় পর্যটকগণ পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য স্থানীয় পরিবেশ ও মানব সম্প্রদায়ের সাথে দায়িত্বশীল আচরণ করেন। সেই সঙ্গে এখানে সুযোগ থাকে প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে মিশে গিয়ে নতুন কিছু জানার ও উপলব্ধি করার।
পর্যটন এলাকার স্থানীয় জনগণের জন্য ইকো ট্যুরিজম পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নের একটি দীর্ঘস্থায়ী সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এই খাতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে থাকতে হবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের উপাদান আর তার সঠিক উপস্থাপনা।
বর্তমান সময়ে ইকো-ট্যুরিজমের গুরুত্ব অনুধাবন করে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইকো-ট্যুরিজমের বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। যেমন– আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান এবং এশিয়ার কিছু শিল্প উন্নত দেশে ইকো-ট্যুরিজমের যথেষ্ট বিকাশ সাধন ঘটেছে।
অন্যান্য দেশের ন্যায় পর্যটন শিল্প আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। মালদ্বীপ, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডের মতো বহুদেশের অর্থনীতি পর্যটন খাতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
ইকো-ট্যুরিজমের উপাদানের মধ্যে রয়েছে- পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, সাগর-সৈকত, জীববৈচিত্র্য, বৃক্ষ-বনানী, প্রাণীকূল, সংস্কৃতি-সভ্যতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জনগণের আয়-রোজগার ও জীবনধারণ পদ্ধতি। যার সব কিছুই রয়েছে বাংলাদেশের।
পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলা সম্ভব। এটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পৃথিবীব্যাপী সুপরিচিত।
এছাড়া বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত সেন্টমার্টিন বা অনুরূপ দ্বীপকেও ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়। এর ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ইকো-ট্যুরিজমের অনুকূল। দ্বীপে উন্নতমানের কোরাল, বিরল প্রজাতির কচ্ছপ, উপকূলের শান্ত ও নীল জলরাশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
এছাড়া সিলেটের চা বাগান, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো অনন্য প্রাকৃতিক স্থানসমূহ ইকো-ট্যুরিজম এর উৎকৃষ্ট কেন্দ্র হতে পারে। দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাসস্থানকে ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
বাংলাদেশে ইকো-ট্যুরিজম নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর হার আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প ‘ইকো-ট্যুরিজম’ বাংলাদেশে সফল ও বিকশিত করা সম্ভব। আর এটি করতে পারলে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিশ্বের বুকে ইকো-ট্যুরিজমের নতুন মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দেশের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থানে পরিবেশবান্ধব ইকো-রিসোর্ট গড়ে তোলা জরুরী।
বাংলাদেশে ইকো-ট্যুরিজমের সম্ভাবনা উন্মোচনের লক্ষ্যে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত ও যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। দীর্ঘদিন যাবৎ ইকো-ট্যুরিজমসহ গণপর্যটনকে এ দেশে বিকাশের জন্য প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে পর্যটনকে একটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ২০১০ সালে একটি নতুন জাতীয় পর্যটন নীতিমালা ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটনকে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু পাহাড়-পর্বত আর উপকূল-বনানী নয় বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের প্রতিটি গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে।’
শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়, তা উন্নয়নের জন্যও ইকো-ট্যুরিজম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের জনগণ ও সরকারের জীববৈচিত্র্যের প্রতি আছে অসীম মায়া এবং কঠিন প্রতিশ্রুতি। সময়োপযোগী পরিবেশ আইন ও জাতীয় অভিযোজন কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বিলুপ্তির হাত থেকে প্রাণীকূল রক্ষায় গণমানুষের সহযোগিতাই এর প্রমাণ।
বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ইকো-ট্যুরিজম তথা পরিবেশগত পর্যটনের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে এক জন প্রকৃতি প্রেমী মানুষ দায়িত্ব শীল ভ্রমণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছপালা, পশুপাখি ও প্রকৃতির যে ঐশ্বরিক সৌন্দর্য অধ্যয়ন ও উপভোগ করে।
এসএ/
আরও পড়ুন