ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দেশে উৎপাদিত দুধেই মিটবে চাহিদা

প্রকাশিত : ১৮:৩৪, ২৬ জুন ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

এক সময় দেশের বেশিরভাগ দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য নির্ভর করতে হতো আমদানিকৃত গুড়ো দুধের উপর। কিন্তু সেই অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। দেশে বেড়েছে খামারিদের দুধের উৎপাদন। যেখানে আগে একটি গরু দিনে ২ লিটার দুধ দিতো, সেখানে এখন সেই গরু প্রায় ৬ লিটার দুধ দেয়। যার কারণে দুধের খামারিদের আগ্রহও বেড়েছে এ শিল্পে। তবে বিদেশী গুড়ো দুধের আমদানির কারণে প্রকৃত দাম পাচ্ছেনা না খামারীরা।

জানা যায়, গত ১০ বছরে দেশে দুধের উত্পাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষীরা, নাটোর, যশোর, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডেইরি খামার। এসব ব্যক্তি উদ্যোগ ছাড়াও সরকারীভাবেও এ শিল্পের উন্নতির জন্য কাজ করছে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়। তবে এই শিল্পের আরো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের উৎপাদিত দুধ দিয়েই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দেশীয় ডেইরি ও দুগ্ধ খামারীদের সুরক্ষায় সরকার সম্প্রতি প্রস্তাবিত বাজেটেও গুড়োদুধ আমদানি শুল্ক হার ৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। এর মাধ্যমে দেশী দুগ্ধ শিল্প আরো দ্রুত সম্প্রসারিত হবে। দেশে এখন দুধের চাহিদা রয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন। আর দেশে রেজিস্ট্রার্ড ও আনরেজিস্ট্রার্ড মিলিয়ে দুধের খামার আছে ১২ লাখের মত। আর এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি মানুষ জড়িত। সরকারের পক্ষ থেকে দুগ্ধ শিল্পকে এগিয়ে নিতে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এলডিডিপি (লাইভ স্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দুধ উত্পাদনের ক্ষেত্রে যে ঘাটতি আছে তা পূরণ করা সম্ভব। দেশের প্রায় সব জেলায় দুধের খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান বলেন,দেশের মোট জাতীয় আয়ে (জিডিপি) দুগ্ধ শিল্পের অবদান সাড়ে তিন শতাংশ। সম্ভাবনাময়ী এ শিল্পের জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত পরিকল্পনা’।
এখন দুধ উত্পাদনের খামার করতে এগিয়ে আসছেন অনেক শিক্ষিত মানুষও।

সিরাজ আহমেদ পাবনার একজন খামারি। পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের এ ছাত্র পড়াশুনার পাশাপাশি গাভী পালন করছেন। তিনি জানান, মা-বাবা ও এক ভাইকে নিয়ে আগে থেকেই গবাদি পশু পালন করলেও গত তিন বছর ধরে নিজের খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। খামার করে ইতিমধ্যে লাভবানও তিনি।

দেশিয় খামারিদের সঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলো। এ খাতে গড়ে উঠেছে ৮টি বড় কোম্পানি। আগে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী গতানুগতিক পদ্ধতিতে দুগ্ধ উত্পাদনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বতর্মানে তা বাণিজ্যিক আকার ধারণ করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উত্পাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড (মিল্কভিটা) অনেক আগে থেকে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হলেও সম্প্রতি অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। প্রাণ, ব্র্যাক, আকিজের মত প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে।

দুধ প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানিগুলো খামারিদের কাছ থেকে দুধ নেওয়া থেকে শুরু করে গাভীর চিকিত্সা, পরামর্শ দেওয়ার কাজ করছে। এতে দিন দিন খামার ও খামারির সংখ্যা বাড়ছে। আগে বড় একটা সমস্যা ছিল, তা হল দুধ বিক্রি করা যেত না। গোয়ালারা দুধ নিলেও দাম কম পাওয়া যেত আবার সময়মত টাকাও পাওয়া যেত না। এখন বড় কোম্পানিগুলোর দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র গড়ে উঠায় এটা সহজ হয়েছে। কোম্পানিগুলো প্রতি সপ্তাহে খামারিদের টাকা পরিশোধ করে দেয়। দুধের ফ্যাট ও ননীর পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে তুলনামূলক বেশি দামে দুধ বিক্রি করতে পারেন খামারিরা। এছাড়া স্বল্প সুদে খামারিদের ঋণের ব্যবস্থা করে কোম্পানিগুলো।

তবে এখনো প্রায় আড়াইলাখ মেট্রিক টন গুড়া দুধ বাহিরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে । ৫-৭ থেকে সাতটি কোম্পানি এখনো গুড়ো দুধ বাহিরে থেকে আমদানি করছে। তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কোম্পানিগুলো হলো— প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, আবুল খায়ের গ্রুপ, নিউজিল্যান্ড ডেইরি প্রডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মেঘনা ও নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড।

দেশের দুধের চাহিদা নিজেদের ডেইরি ফার্ম থেকে উৎপাদিত দুগ্ধ থেকে মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন খামারিরা। এছাড়া গুড়ো দুধের আমদানির উপর আরো শুল্কও বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবি জানান তারা। দাবিগুলো হলো, নিম্নমানের ভূর্তুকিপ্রাপ্ত গুঁড়া দুধের উপর এন্টি ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ ও আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হোক। এলাকাভিত্তিক খামারিদের দুধ সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হোক। ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকার থেকে দায়িত্ব নিয়ে সচেতনতামূলক টিভিসি প্রোগ্রাম করা হোক। পোলট্রি ও মত্স্য শিল্পের মত দুগ্ধ খামারিদের আগামী ২০ বছরের জন্য আয়কর মুক্ত বা ট্যাক্স হলিডে দেওয়া হোক।

অন্যদিকে সম্প্রতি বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৭টি প্যাকেটজাত দুধের নমুনায় পাওয়া গেছে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এসব পন্যের গুণগত মানের পরীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া পাওয়া গেছে ডিটারজেন্ট ও ফরমালিন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মিল্কভিটা, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগো দুধের প্রায় প্রতিটি নমুনায় পাওয়া গেছে লেভোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও এজিথ্রোমাইসিন নামের অ্যান্টিবায়োটিক। এছাড়া অপাস্তুরিত দুধের নমুনার একটিতে ফরমালিন এবং একটিতে পাওয়া গেছে ডিটারজেন্ট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা একুশে টিভিকে বলেন, আমাদের দুধ সম্পূর্ন নিরাপদ। আমরা সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কিভাবে গরু পালন করতে হয় সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়ে থাকি। আর নিরাপদ দুধই সরবারহ চেষ্টা করি। শুধু বাংলাদেশে না বিদেশেও আমাদের দুধ সরবারহ করা হচ্ছে। একটি মহল সবসময় চায়,আমরা যেন সবসময় আমদানীকৃত দুধের উপরই নির্ভর করি। তাই এসব অপ্রচার চালায়। আর আমরা সবসময় চাই আমাদের দেশের দুগ্ধ শিল্প সমৃদ্ধ হোউক।

এনএম/আরকে

 

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি