ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

দেশে প্রতি বছর জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৮ হাজার নারী

তানভীরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ২১:২১, ১১ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২১:০২, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

দেশে প্রতি বছর জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৬৮ জন নারী। যা নারী ক্যান্সার রোগীর প্রায় ১২ শতাংশ। এছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মারা যান ৫ হাজার ২১৪ জন নারী। এ অবস্থায় জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সরকারের উদ্যোগ কামনা করেছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে চাই সামাজিক আন্দোলন’ শীষর্ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ দাবি জানান।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও ক্যান্সার ইপিডিমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, প্রাথমিক ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য জরুরি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে, অন্যটির আমদানি বেশকিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ কামনা করছি।

হাবিবুল্লাহ রাসকিন বলেন, সরকার আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা (GAVI) এর সহযোগিতায় গাজীপুর জেলার ৩৩০০০ কিশোরীকে বিনামূল্যে এই ভ্যাক্সিন প্রদান করেছেন। এই পাইলট প্রজেক্টটির মূল্যায়নের পর পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সম্প্রসারিত করার কথা –এ বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি আমরা অবগত নই।

তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার স্ক্রিনিং কমসুচী যা প্রায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০০ সরকারি হাসপাতলের ভায়া সেন্টারে চালু আছে, তা অসংগঠিত, হাসপাতালকেন্দ্রিক। একে সমাজভিত্তিক সংগঠিত রূপ না দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের এর আওতায় আনা সুদূরপরাহত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের গাইনী ক্যান্সার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে চাই সামজিক আন্দোলন। এতোদিন আমরা শুধু রিচ ফেক্টর আর স্ক্রিনিং নিয়ে কথা বলেছি। ভ্যাক্সিন নিয়ে আমরা এতোদিন কোন কথা বলিনি। এখন আমাদেরকে এটা নিয়েও ভাবতে হবে। দেশের প্রতিটি মিডিয়াকে ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। টেলিভিশন পত্রিকার মাধ্যমে মানুষকে এ রোগের লক্ষণসহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী ৫ বছরের মধ্যে জরায়ুমুখে ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় ধরনের সফলতা অর্জন করতে পারবো।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী অবসরে বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফাতেমা আশরাফ বলেন, সরকার স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে ক্যান্সার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্যান্সার চিকিৎসায় আমরা সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ক্যান্সারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বিনামূল্যে ক্যন্সারের ভ্যাকসিন দিতে হবে। সারাদেশে ৪০০টি কেন্দ্রে ক্যান্সার স্ক্রিনিং হচ্ছে। এটাকে আরও সহজলভ্য করতে হবে। মানুষের দোরগোড়ায় স্ক্রিনিংটা পৌঁছে দিতে হবে।

তিনি বলেন, ক্যান্সার নিয়ে আমরা খুবই সচেতন। তাই সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে গ্রামাঞ্চলগুলোতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে এনজিওগুলোকে কাজে লাগাতে পারে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, জরায়ুমুখের ক্যান্সার বর্তমানে ব্যাপক আকার ধারন করেছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকদেরকে ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারকেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে, স্কুল কলেজগুলোতে প্রচারণা চালাতে হবে। এমনকি সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রজনন স্বাস্থ্য পাঠকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

তিনি বলেন, ক্যান্সারকে আমরা মরনব্যাধী বললেও কিছুকিছু ক্যান্সার শতভাগ প্রতিরোধ সম্ভব। একটি টিকার মাধ্যমেই তা সম্ভব। আর যদি এই টিকাকে সবধরনের মানুষের জন্য সহজলভ্য করা যায়, তাহলে এ রোগ প্রতিরোধে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাবো। কিন্তু অধিকাংশ জনগনই জানেন না এই টিকা কই পাওয়া যায় বা কি করে পেতে হয়। সরকারকে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনী ক্যান্সার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন, আইসিডিডিআরবির কনসালটেন্ট ডা. তাজুল ইসলাম বারী, সাংবাদিক নাদিরা কিরণ প্রমুখ।

টিআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি