ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজারের বেশি কিডনি অকেজ হয়

প্রকাশিত : ০০:০৫, ১৮ মে ২০১৯ | আপডেট: ০৯:০২, ১৮ মে ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০ হাজারেরও উপরে কিডনি পুরোপুরি অকেজ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে ভোগে। এ ধরনের রোগীর জন্য মাত্র দুরকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। হয় ডায়ালাইসিস অর্থাৎ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিডনির কাজ করানো বা কিডনি প্রতিস্থাপন।

এই দুই ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতিই ব্যয়বহুল। রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বিশেষায়িত ডায়াবেটিক হাসপাতাল বারডেমে দেখা যায়, সেখানেও কিডনি রোগীর অনেক ভিড়। ডায়াবেটিস থাকলে সেটিও একটা পর্যায়ে গিয়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। ফলে ডায়াবেটিক হাসপাতালে কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য বড় ইউনিট রয়েছে। বারডেমে একটি ওয়ার্ডে অসুস্থ এক তরুণীর পাশে থাকা তার অভিভাবক ফাতেমা আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, পাঁচ বছর বয়সে এই তরুণীর ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল। এখন ১০ বছর পর তার কিডনি বিকল হয়ে গেছে। তারা শেষ অবস্থায় চাঁদপুর জেলা শহর থেকে ঢাকায় বারডেমে এসেছেন।

ফাতেমা আমিন বলছিলেন, তরুণীটির বাবা মা অনেক আগে মারা গেছেন। এখন বোনের মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে তিনি চরম সংকটে পড়েছেন। এখন ডায়ালাইসিস করাতে মাসে ৪০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এই টাকা যোগাড় করা তাদের মতো নিম্ন পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। তার স্বামীও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন।

চিকিৎসা সুবিধা: কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রধান অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, ‘ব্যয়ের বিষয়টা যেমন আছে, তেমনি কিডনি রোগের শেষ অবস্থার রোগীদের জন্য দেশে ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধাও এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। বছরে ৪০ হাজার রোগীর যে কিডনি বিকল হচ্ছে। তাদের সবার চিকিৎসা দিতে চাইলে মানসম্মত হানপাতালের পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যাপ্তিটা দরকার। এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে নতুন ৪০ হাজার রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া এবং প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় না।’৮০ভাগ রোগীই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন উল্লেখ করে  অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, ‘আমাদের যে সুযোগ সুবিধা আছে, তাতে আমরা ৪০ হাজার রোগীর মাত্র ২০ভাগকে ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপন করে দিতে পারি। তাতে ৮০ভাগ রোগীই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন।’

নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও প্রকট: পরিবারের সহযোগিতার অভাবে নারীদের একটা বড় অংশ চিকিৎসক পর্যন্তই যেতে পারেন না। অনেক নারী রোগীর সমস্যা দেখে এমন ধারণা হয়েছে বারডেম হাসপাতালের ড: মেহরুবা আলমের। ডাক্তারের কাছে মেয়েদের অ্যাকসেস এখনও পুরুষের তুলনায় কম। মেয়েরা চিকিৎসকের কতটা সাহায্য পেলো, তার অর্থ কতটা আছে বা পরিবার তার চিকিৎসার জন্য কতটা অর্থ বরাদ্দ রাখছে, এসব বিষয় মেয়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বারডেম হাসপাতালের ড: মেহরুবা আলম জানান, নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি আরো প্রকট। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের কিডনির সমস্যা একটা পর্যায়ে তাদের সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি সন্তান এসেও যায়, তাতে অনেক জটিলতা থাকে। আমাদের গত বছর একজন রোগী বাচ্চা ধারণ করলেন, ঝুঁকি থাকলেও হয়তো বাচ্চাটাকে বাঁচানো যেতো।

কিডনি প্রতিস্থাপনের কতটা সুযোগ আছে: প্রতিবার ডায়ালাইসিস করার জন্য বড় অংকের অর্থ গুণতে হয়। এর সাথে তুলনা করলে কিডনি প্রতিস্থাপন বা সংযোজন করার ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা কম বলে চিকিৎসকরা বলছেন। তাদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এখন দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে কিডনি পাওয়াটা বেশ কঠিন।

নারীর জন্য কিডনি পাওয়া আরও কঠিন: চিকিৎসকরা বিশেষভাবে উল্লেখ করছেন যে, পুরুষ রোগীর চাইতে নারী রোগীর জন্য কিডনি পাওয়া অনেক সময় বেশি কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বারডেম হাসপাতালের ডা. মেহরুবা আলম বলেন, ‘আত্বীয় স্বজনের কাছ থেকে পুরুষ রোগীর জন্য কিডনি নেয়ার প্রয়োজন যখন হয়, তখন তার স্ত্রী প্রথমে কিডনি দেয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু নারী রোগীর ক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগিতা সেভাবে থাকে না।’

কী করা উচিৎ: কিডনি রোগের চিকিৎসার ব্যয় এবং সুযোগ সুবিধা কোনোটাই পর্যাপ্ত নয়। ঢাকায় সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কিছু ডায়ালাইসিস সেন্টার গড়ে উঠেছে। ঢাকার বাইরে বড় কয়েকটি শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে সীমিতপর্যায়ে এই চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বেশিরভাগ জেলায় কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা সেভাবে নেই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিডনির চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসার ইউনিট করা এবং চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনার ব্যাপারে বিভিন্ন পরিকল্পনা বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অপ্রতুলতার কথাও তুলে ধরছেন।বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টানোর বিষয়ে চিকিৎসকদের সন্দেহ রয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি