শরণার্থী-অভিবাসী-আশ্রয় প্রার্থী
দেশ ত্যাগ করা মানুষের ভিন্ন নামকরণের কারণ
প্রকাশিত : ১২:৫৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯
এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমানো মানুষদের আমরা বিভিন্ন নাম দিয়ে থাকি। এ সব নাম আপনি প্রায়ই শুনে থাকবেন- অভিবাসী, শরণার্থী বা আশ্রয় প্রার্থী। কিন্তু নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি দেওয়া মানুষকে কীসের ভিত্তিতে ভিন্ন নামকরণ করা হয়?
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন বিষয়ক কেন্দ্রের শিক্ষক শার্লট টাইলরের গবেষণার বিষয় এটিই। সীমান্ত পাড়ি দেওয়া মানুষকে মিডিয়া কেন এবং কী ভিত্তিতে ভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকে- সে বিষয়ে লিখে থাকেন তিনি। ভিনদেশে পাড়ি দেওয়া মানুষের ভিন্ন নামকরণের কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।
অভিবাসী
অভিবাসী সাধারণত এমন কাউকে বলা হয়, যে উন্নত জীবনযাত্রা বা কর্মসংস্থানের খোঁজে স্থান পরিবর্তন করে থাকেন। অর্থাৎ, আপনি যদি বাংলাদেশের অধিবাসী হন এবং বছরে কয়েকমাস কাজের খোঁজে বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ভারত বা নেপালে অবস্থান করেন, তাহলে আপনাকে অভিবাসী বলা যাবে।
শার্লট টাইলরের মতে, অভিবাসী যথেষ্ট নিরাপদ একটি পরিভাষা। এমন নয় যে এটি ভবিষ্যতেও নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হবে, তবে বর্তমানে অভিবাসী বেশ নিরাপদ একটি পরিভাষা। তবে রাজনৈতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। কোনও ব্যক্তি যখন বিশেষ কোনও শাসনাবস্থা থেকে দূরে যেতে চায়, তখন এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
একটি দেশে ক্রমাগত অভিবাসীদের আগমন হতে থাকলে যখন সেই সংক্রান্ত খবরে বা লেখায় ‘ঢল’, ‘জোয়ার’ বা ‘বন্যা’র মত শব্দ ব্যবহার করা হয়, তখন অভিবাসীদের সঙ্গে ‘অমানবিক’ আচরণ করা হয় বলে মনে করেন মিজ টাইলর। কারণ এ রকম শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে অভিবাসীদের ‘পণ্য’ হিসেবে মূল্যায়ণ করা হয় বলে মনে করেন তিনি।
প্রবাসী
ভিনদেশে স্থায়ীভাবে যখন কেউ বসবাস করতে আসে তখন তাদের সাধারণত প্রবাসী বলা হয়ে থাকে। এই ধরণের মানুষ সাধারণত নিজের ইচ্ছাতেই নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমান। কর্মসংস্থান বা উন্নত জীবনের খোঁজের পাশাপাশি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কারণেও অনেকে স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন।
জোর পূর্বক বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে নয়, স্বেচ্ছায় ও স্বতস্ম্ফূর্তভাবে যারা স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি জমান তাদের প্রবাসী বলা হয়ে থাকে।
শরণার্থী
শরণার্থী বলা হয় এমন কোনও ব্যক্তিকে যিনি যুদ্ধ, গণহত্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে দেশান্তরী হন।
শার্লট টাইলর বলেন, এটি সম্পূর্ণ অন্যরকম একটি পরিস্থিতি। যে মুহুর্তে আপনি কাউকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন, তখনই তার নির্দিষ্ট কিছু অধিকারকেও স্বীকৃতি দিতে হবে আপনার। তারা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, যা তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
আশ্রয় প্রার্থী
উপরের সবকটি প্রকারের মিশ্রণ হতে পারে একজন আশ্রয় প্রার্থী। তবে আশ্রয় প্রার্থীর বিশেষত্ব হলো, তিনি নিজ দেশ বাদে অন্য দেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুরক্ষার জন্য আবেদন করেন। ব্যাপক ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে যারা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন তাদেরকেই কেবল আশ্রয় প্রার্থী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে জানান শার্লট টাইলর।
টাইলর বলেন, আজকাল আশ্রয় প্রার্থীদের মধ্যেও আসল-নকল শ্রেণিবিন্যাসের একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে এটি যৌক্তিক হলেও তাদের আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি কিন্তু অস্বীকার করা যায় না।
সূত্র: বিবিসি
একে//