‘দেড় বছরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ৫০ ঋণখেলাপি’
প্রকাশিত : ১৬:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৬:৪৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে যুক্ত আরও ৫০টি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খোন্দকার মো. ইকবাল। গত দেড় বছর অনুসন্ধান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের নাম-পরিচয় মিলেছে। তবে আরও সাতটি প্রতিষ্ঠানের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানান, ওই সময় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে পরিচয় গোপন রেখে ঋণ দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি ও বেসিক ব্যাংকের সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকার বেশি খেলাপি, এমন ৬২৮টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে। গতকাল রোববার সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই দুই ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, এ বি তাজুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপস, শাহানারা বেগম, মে. জে. এ টি এম আবদুল ওয়াহহাব (অব.) এবং ওয়াসিকা আয়শা খান।
বৈঠকে টানা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে লোকসান গুনছে, সোনালী ব্যাংকের এমন সব শাখার একটি হালনাগাদ তালিকা কমিটিতে জমা দিতে বলা হয়েছে। এসব শাখা বন্ধ করে দিতে অথবা এসব শাখায় কর্মরতদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধের জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খোন্দকার মো. ইকবাল কমিটিকে জানান, ওই সময় ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে পরিচয় গোপন রেখে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। গত দেড় বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের পরিচয় পাওয়া গেলেও বাকি সাতটির হদিস এখনও পাওয়া যায়নি।
সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি: ব্যাংকের পক্ষ থেকে কমিটির কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ২৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাওনা ছিল। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ওই প্রতিষ্ঠান ২০টির কাছে বকেয়া পাওনা তিন হাজার ২২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে টি এন ব্রাদার্স গ্রুপ (পাওনা ৪৮১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা), হলমার্ক গ্রুপ (পাওনা ৪৭৯ কোটি ৯ লাখ টাকা), ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স লিমিটেড (পাওনা ৩১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা), মুম্নু ফেব্রিক্স (পাওনা ২৩৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা)। অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পাওনা ২১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা), জিএমজি এয়ারলাইন্স (পাওনা ১৫৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা), লীনা পেপার মিলস -১ ও ২ (পাওনা ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা), মেঘনা কনডেন্স মিল্ক্ক (পাওনা ১৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা), এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং (পাওনা ১২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা), খুলনার সোনালী জুট মিলস লিমিটেড (পাওনা ১২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা), এ. কে. জুট ট্রেডিং লি. ( পাওনা ১১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা), বিশ্বাস গার্মেন্টস ইউনিট-২ (পাওনা ১০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা), রেজা জুট লি. (পাওনা ৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা), ইস্টার্ন ট্রেডার্স (পাওনা ৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা), সাইয়ান করপোরেশন (পাওনা ৭৬ কোটি সাত লাখ টাকা), পদ্মা পলি কটন (পাওনা ৭৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা), এজাক্স জুট মিলস লিমিটেড (পাওনা ৭৩ কোটি আট লাখ টাকা), ক্ল্যাসিক সাপ্লাইস লিমিটেড (পাওনা ৬৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা), মেসার্স নিউজ স্টাইল (পাওনা ৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা) ও চট্টগ্রামের কোস্টাল সি ফুড (পাওনা ৬৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা)।
বেসিক ব্যাংকে ৬২৮টি খেলাপি প্রতিষ্ঠান : বেসিক ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬২৮টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ছয় হাজার ৫৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০০ কোটি বা তার চেয়ে বেশি পাওনা আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১১। তাদের কাছে পাওনা এক হাজার ২৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পাওনা রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০টি। তাদের কাছে মোট পাওনা দুই হাজার ১০৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বেসিক ব্যাংকের খেলাপি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান দি ওয়েলটেক্স লিমিটেড। তাদের কাছে পাওনা ১২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। শীর্ষ ১১টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও রয়েছে ডেল্কল্টা সিস্টেমস লিমিটেড (পাওনা ১২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা), আইজি নেভিগেশন লিমিটেড (পাওনা ১১৯ কোটি ৯৫ লাখ), বে নেভিগেশন লিমিটেড (পাওনা ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ), ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং লিমিটেড (১১৩ কোটি ৮৩ লাখ), ম্যাপ পেপার বোর্ড মিলস লিমিটেড (১১৩ কোটি ৪২ লাখ), প্রফিউশন টেক্সটাইল লিমিটেড (১১১ কোটি ৫৫ লাখ), মা টেক্স (১১১ কোটি ২২ লাখ), কনফিডেন্স সুজ লিমিটেড ( ১০৮ কোটি ২৯ লাখ), এ আর এস এস এন্টারপ্রাইজ ১০২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নিউ অটো ডিফাইন (১০১ কোটি ৮৭ লাখ)।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের যেসব শাখা ধারাবাহিকভাবে পাঁচ বছর লোকসান দিচ্ছে, তাদের তালিকা হালানাগাদ করে প্রয়োজনে এসব শাখা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
আরকে/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন