দ্বন্দ্ব কাটলেও বরফ গলেনি দেবর-ভাবির
প্রকাশিত : ১৫:০৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
সম্প্রতি নানান আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে জাতীয় পার্টি। জুলাইতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেলে তৃতীয়বারের মত দলে সংকট দেখা দেয়। এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের নেতার পদ নিয়ে তার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) ও স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম মাত্রায় পৌঁছে।
যদিও রোববার দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীয় দলীয় নেতার পদ নিয়ে জাতীয় পার্টিতে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান হয়েছে বলে দল থেকে জানানো হয়। তাতে সাময়িক দ্বন্দ্ব নিরসন হলেও তাতে দেবর (জিএম কাদের) ও ভাবির (রওশন এরশাদ) মধ্যে যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে তা নিরসর হবে কি এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রোববার রাজধানীর বনানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, গতকাল শনিবার রাজধানীর বারিধারায় একটি ক্লাবে দলের মহাসচিবের উপস্থিতিতে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধী দলের নেতা ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে কাউন্সিল হওয়া পর্যন্ত জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে সাদ এরশাদকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও জিএম কাদের স্থানীয় এক নেতাকে মনোনয়ন দিতে চেয়েছিলেন।
এতে গেল কয়েকদিনের যে সম্মুখ দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছিল তার সাময়িক নিরসন হলেও এ দ্বন্দ্ব শেষ হবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিষয়টি রাজনৈতিক না হয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব হওয়ায় জাতীয় পার্টির ভবিষৎ ভালো হবে না বলে মনে করেন তারা।
জাতীয় পার্টির ‘নেতৃত্ব’ নিয়ে জি এম কাদের ও বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে বিরোধে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে যে ভাগ দেখা দিয়েছিল তা আগের মতো হবে না বলে জানান খোদ দলটির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, দেবর ও ভাবির এ দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হবে এরশাদের গড়া দলটির নেতাকর্মীদের। স্বার্থের দ্বন্দ্বে দেবর-ভাবির সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার ঘটনাও সমাজে বিরল নয়। অবশ্য আগে থেকেই জিএম কাদের সঙ্গে রওশন এরশাদের দ্বন্দ্ব রয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এরশাদ পত্নি ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ নিজ সমর্থকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও নিজেকে জাতীয় পার্টির বৈধ চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করে রওশনপন্থিদের প্রতি সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন যে, বেগম রওশন এরশাদকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা করেন। এ শ্রদ্ধা যেন শ্রদ্ধাই থাকে অন্য কিছুতে যেন পরিণত না হয় বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন কাদের। ভারত ও পাকিস্তানের মতো অবস্থান নেওয়া এ সম্পর্ক আর কখনও মধুর হবে কিনা তা নিয়ে এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে নিজেকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ জানিয়ে দলীয় প্যাডে চিঠি পাঠিয়েছেন জিএম কাদের। এরপর বুধবার স্পিকারের প্রতি পাল্টা এক চিঠিতে কাদেরের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। এ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতার আসনে জিএম কাদেরকে চায় এক পক্ষ অন্য পক্ষ চায় রওশন এরশাদকে।
রওশন এরশাদের প্যাডে হাতে লেখা ‘জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন।
জানা যায়, স্ত্রী রওশনের সঙ্গে জীবদ্দশায়ই এরশাদের বিরোধ ছিল যা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। এ বিরোধের জেরেই মূলত দেবর জিএম কাদের ও ভাবি রওশানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এমএস/
আরও পড়ুন