ধনী-গরিবের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে, কমেছে দারিদ্রের হার
প্রকাশিত : ১৪:৪৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ০৯:৫৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৭
সামগ্রিকভাবে দেশের দারিদ্রের হার কমেছে। গত ছয় বছরে সার্বিক দারিদ্র্যের হার সাড়ে ৩১ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। মূলত ধনী-গরিব নির্বিশেষে আয় বৃদ্ধির কারণেই দারিদ্র্য কমেছে। তবে এই আয় বৃদ্ধির দৌড়ে ধনীদের চেয়ে অনেক পিঁছিয়ে গরিবরা। দেশের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশই করেন উপরের দিকে থাকা ১০ শতাংশ ধনী। আর মোট আয়ের মাত্র ১ শতাংশ করেন সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬-এর তথ্য বিশ্নেষণ করে দেশের ধনী-গরিবের আয়ের এ ব্যাপক বৈষম্যের চিত্র পাওয়া গেছে। আগারগাঁওয়ের বিবিএস মিলনায়তনে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আয় বৈষম্যের এ চিত্র দেখে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ”দরিদ্র প্রতিবেশীর দিকে খেয়াল রাখতে হবে ধনীদের।”
যথাযথভাবে জাকাত দেওয়ার জন্য ধনীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ”বৈষম্য কমাতে কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হবে। যারা বেশি আয় করছেন, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি কর নেওয়া হবে।”
২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত এই খানা জরিপ চালায় বিবিএস। তার আগের জরিপটি চালানো হয়েছিল ২০১০ সালে।
সর্বশেষ জরিপের ফল বলছে, দেশের দারিদ্র্যহার এখন ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্যহার ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহরের দারিদ্র্যহার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০১০ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। তখন গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।
জরিপের আলোচিত অন্যান্য বিষয়সমূহ:
- সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে দেশে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ পাকা বাড়ি; যা ২০১০ সালে ছিল ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ।
- ২০১০ সালে টিন ও কাঠের বাড়ি ছিল ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ; ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ দশমিক ১২ শতাংশ।
- ২০১০ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে এমন পরিবার ছিল ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে বিদ্যুতের এই হার ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
- ২০১০ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ; ২০১৬ সালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
- সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে উপকারভোগী ২০১০ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ; ২০১৬ সালে তা ২৮ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
- ২০১০ সালে দেশে অক্ষম লোকের হার ছিল ৯ দশমিক ০৭ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে।
- ২০১০ সালে ৩২ শতাংশ মানুষ ছিল ঋণগ্রস্ত; ২০১৬ সালে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশে।
খাদ্যগ্রহণ কমেছে
২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের মোট খাদ্য গ্রহণের হার আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ২০১০ সালে দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ছিল এক হাজার গ্রাম, যা ২০১৬ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ গ্রাম। নতুন জরিপে চাল ও আটা গ্রহণের হার কমলেও ডাল, শাক-সবজি, মাংস ও ডিম খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে।
২০১০ সালে চাল ও আটা গ্রহণের পরিমাণ ছিল দৈনিক ৪১৬ দশমিক ০১ গ্রাম ও ২৬ দশমিক ০৯ গ্রাম; ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬৭ দশমিক ১৯ গ্রাম ও ১৯ দশমিক ৮৩ গ্রাম।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “দেশের মানুষের ভাত, আটা খাওয়ার পরিমাণ কমেছে, এটা ভালো খবর।”
২০১০ সালে দৈনিক ২ হাজার ৩১৮ কিলোক্যালরি গ্রহণ করা হলেও ২০১৬ সালে গ্রহণ করা হচ্ছে ২ হাজার ২১০ কিলোক্যালরি। প্রোটিন গ্রহণের হার ২০১০ সালে ছিল ৬৬ দশমিক ২৬ গ্রাম এবং ২০১৬ সালে কমে হয়েছে ৬৩ দশমিক ৮০ গ্রাম।
মৌলিক চাহিদার ব্যয় (কস্ট অব বেসিক নিডস) পদ্ধতির মাধ্যমে দারিদ্র্য পরিস্থিতি পরিমাপ করেছে বিবিএস। জরিপ করে খানা বা পরিবারের আয়-ব্যয়, ভোগ, পুষ্টিমান, জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদির তথ্য নেওয়া হয়। কোনো ব্যক্তি যদি দিনে ২ হাজার ১২২ কিলোক্যালরির খাবার কেনার সামর্থ্যের পরও কিছু টাকা খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে খরচ করতে পারেন, তাহলে তাঁরা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন বলে ধরে নেওয়া হয়। আর যাঁদের দৈনিক মোট খরচ করার সামর্থ্য ২ হাজার ১২২ কিলোক্যালরি খাদ্য কেনার সমান, তারা হতদরিদ্র।
এমআর/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন