ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ধূমপান থেকে ক্যান্সার-হৃদরোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪৯, ১৬ আগস্ট ২০২০

Ekushey Television Ltd.

সিগারেট-এর তামাক পাতায় এমন সমস্ত বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যে, যারা ধূমপান করেন তারা অধূমপায়ীদের তুলনায় নাকের ঘ্রাণ ও জিহবার স্বাদ কম অনুভব করেন। যতই তারা ধূমপানে আসক্ত হতে থাকেন ততই ধূমপায়ীদের ঘ্রাণ ও স্বাদ গ্রহণের স্বাভাবিক শক্তি হারাতে থাকেন এবং তিতে, নোন্‌তা ও মিষ্টি খাবারের স্বাদ কম অনুভব করেন। ফলশ্রুতিতে ধূমপায়ীরা অধিক লবন খেতে শুরু করেন এবং উচ্চ রক্তচাপ বা 'হাইপারটেনশন'-এর শিকার হন।

তবে খুশির খবর হচ্ছে, যতদিন ধূমপায়ীরা সিগারেট গ্রহণ করেন না কেন, যে মুহূর্তে তারা ধূমপান বন্ধ করবেন তার কিছুদিনের মধ্যেই হারানো স্বাদ ফিরে পাবেন। কারণ মুখের টেষ্ট রিসেপটরের ক্ষয়ক্ষতি ফিরানো সম্ভব। বিজ্ঞানের দীর্ঘদিনের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মাড়ির রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে তামাক বা সিগারেট যার ফলশ্রুতিতে একটি দাঁত বা অনেকগুলো দাঁত হারাতে হয়। মাড়ির রোগের অন্যান্য যেসব কারণ রয়েছে তা হচ্ছে ডেন্টাল প্লাক বা খাদ্যকণা, মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ও অন্যান্য রোগের উপস্থিতি যেমন ডায়াবেটিস।

স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল বয়সের ধূমপায়ীদের মাড়ির বিভিন্ন রোগ অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেক মাত্রায় বেশি। যারা ধূমপান করেন তাদের দাঁতের মাড়ির সংলগ্ন স্থানে অধূমপায়ীদের চাইতে বেশি ক্যালকুলাস বা খাদ্য আবরণ জমাতে পারে। ধূমপায়ীদের মুখের দুর্গন্ধ বিশেষত ঐ ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের থেকেই সৃষ্টি হয়, ফলে ধূমপায়ীর শ্বাস-প্রশ্বাসে ঐ বিশেষ ব্রান্ড বা সিগারেট-এর গন্ধ সনাক্ত করা যায়। তাদের মুখে অতিরিক্ত ভিন্ন ধরনের তামাকের গন্ধ পাওয়া যায়। ধূমপায়ীদের মত যাদের মুখের এই দুর্গন্ধ থাকে তাদের সঙ্গে অনেকেরই সুসম্পর্ক স্থাপিত হয় না। মুখের স্বাস্থ্যকর অবস্থা, সজিব নিঃশ্বাস, সুন্দর মুখশ্রী ও ঝকঝকে দাঁত মানুষের ব্যক্তিত্বকে আরও সমৃদ্ধ করে সেই সাথে তাদের সঙ্গে সকল মানুষের সম্পর্কও দৃঢ় হয়, মজবুত হয়। সবচেয়ে দুঃখজনক অপ্রিয় সত্য কথা হলো ধূমপায়ীরা বুঝতেই পারে না যে, তাদের মুখের এই বিশ্রী গন্ধ বা রঞ্জিত দাঁত তাদের প্রিয়জন থেকে তাকে প্রতিদিন দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ধূমপান মরণঘাতী 'লিউকোপ্লাকিয়া' নামক এক ধরনের সাদা ঘন আবরণ টিস্যুর সঙ্গে থাকা অবস্থায় মুখের ভেতরে অবস্থান করতে দেখা যায়। এটা সাধারণতঃ গালের ভিতরের অংশে বিস্তৃত হয়। এই ক্ষত স্থায়ীভাবে সংঘটিত ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট হয় যেমন তামাক বা ধূমপান জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণে। এর বিস্তৃতি ও নির্ভর করে তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহারের স্থায়িত্বের উপর। এই ক্ষত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন-মসৃণ, অস্বচ্ছ পুরু সাদা ভঙ্গুর শক্ত আকারের। বেশিরভাগ লিউকোপ্লাকিয়া বেনাইন, অনুভূতিহীন এবং বিপজ্জনক নয়। তবে প্রতিটি লিইকোপ্লাকিয়া ব্যবচ্ছেদ বা বায়োপসি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ, তামাকজাত অনেক ক্যান্সার উৎপাদক উপাদান রয়েছে। তামাকজাত সৃষ্ট লিউকোপ্লাকিয়া সাধারণত শতকরা ২ থেকে ৬ শতাংশ ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে, সুতরাং এই ধরণের ক্ষতের সঠিক সময়ে চিকিৎসা দরকার। 
তামাক ছাড়া মুখের আরও যে সমস্ত এই ধরণের ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে সেগুলো হচ্ছে- মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা (যারা নিয়মিত দাঁত ও মাড়ি পরিষ্কার করেন না)। 

অপুষ্টি এবং এ্যালকহল বা মদ জাতীয় পানীয়। যাদের মুখের ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার সাথে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের অভ্যাস ছেড়ে দিতে পারেন তাদের জীবনের মৃত্যুর ঝুঁকির মাত্রাও কমে আসে এবং যারা লিউকোপ্লাকিয়ায় আক্রান্ত তারাও যদি তামাক ব্যবহার বন্ধ করেন তবে সেই জাতীয় ক্ষত সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়।

মুখের ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে শল্য চিকিৎসা (সার্জারী), তাপ বিকিরণ (রেডিয়েশন) ও কেমোথেরাপি। তীব্র মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর পাঁচ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ শতাংশ, কিন্তু যদিও বা বেঁচে থাকেন তার শল্য চিকিৎসার কারণে স্বাভাবিক মুখাকৃতির পরিবর্তন, শব্দ উচ্চারণ এবং খাদ্য গ্রহণের অসুবিধা নিয়ে বাকি জীবন কাটাতে বাধ্য হন। সেই সাথে মানসিকভাবেও ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারেন। অতএব, তামাক ও ধূমপান দুই-ই বিষপান।

আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি