ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

নকল পেট লাগিয়ে ‘গর্ভবতী’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৩, ৪ মে ২০১৭ | আপডেট: ১৭:৪৭, ৪ মে ২০১৭

‘কহানি’ ছবিতে বিদ্যা বালান নকল পেট লাগিয়ে গর্ভবতী সেজেছিলেন স্বামীর খুনিকে পাকড়াও করার জন্য। তবে ইদানীং ভারতে বহু ঘরে এমন নকল পেটের চাহিদা এখন তুঙ্গে। সারোগেসি বা গর্ভদাত্রী মায়ের মাধ্যমে  সন্তান লাভ করছেন যেসব দম্পতি, সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রী নকল পেটের সাহায্যে নিজেকে গর্ভবতী বলে পরিচয় দিচ্ছেন জনসমাজে।

‘কহানি’র বিদ্যার চেয়েও এ সব ক্ষেত্রে তাঁরা বরং ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’-র রানি মুখার্জির সাথে মিল অনেক বেশি।চিরকালের জন্য সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারানো রানি ছবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকের সামনে পেটে বালিশ বেঁধে ঘুরতেন। এখন অবশ্য বালিশ বাঁধার দরকার হচ্ছে না। ‘সিলিকন প্রেগন্যান্সি বেলি’ বা সিলিকনের পেট শরীরে বেঁধে নেওয়া যাচ্ছে। এক থেকে আট মাস পর্যন্ত গর্ভাবস্থার বিভিন্ন মাপের সিলিকন-পেট বাজারে মেলে। হাত দিলেও আসল-নকল বোঝার সাধ্য নেই।

কিন্তু এই লুকোচুরির দরকার হচ্ছে কেন? শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার দরুণ যারা নিজের গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারেন না, সারোগেসি বা গর্ভদাত্রী মায়ের মাধ্যমে সন্তান পাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাদের অনেককে এই নকল পেট বা লাগাতে হচ্ছে সামাজিক ছুতমার্গের আতঙ্কে আর পারিবারিক গোঁড়ামিকে পাশ কাটাতে।

লিলুয়ার অফিসে বসে পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষস্থানীয় প্রস্থেটিস্ট সুমিত্রা অগ্রবাল জানাচ্ছেন, যেদিন থেকে সারোগেট বা গর্ভদাত্রী মা সন্তান ধারণ শুরু করেন সেই সময় থেকে প্রকৃত মা সিলিকনের পেট নিজের শরীরে লাগিয়ে নেন। শুধু ২০১৬ সালেই সুমিত্রা দেশে-বিদেশে এমন ৫৫ জনকে নকল পেট সরবরাহ করেছেন। দাম ১২ হাজার টাকা থেকে শুরু। তাঁর খদ্দেরদের মধ্যে অবাঙালি বেশি, তবে বাঙালিও আছেন। অধিকাংশই ব্যবসায়ী পরিবারের। আছেন ডাক্তার, শিক্ষক, আমলা, ব্যাঙ্ককর্মীও।

যেমন সম্প্রতি সাত-আট মাস গর্ভাবস্থার মতো ‘পেট’ চেয়েছেন চন্দননগরের বছর বত্রিশের এক শিক্ষিকা। তাঁর চার-পাঁচ মাসের পেট খুলে এই নতুন পেট লাগানো হবে! সল্টলেকের এক ডাক্তারের স্ত্রী বললেন, ‘‘প্রতি তিন মাস অন্তর পেট বদলানোর সময়ে দিন দশেকের জন্য কোথাও ঘুরে আসতাম। যাতে বাড়ির লোকের মনে না হয় যে, পেটটা হঠাৎ বেশি উঁচু হয়ে গিয়েছে।’’ নাইজেরিয়ায় প্রবাসী এক মহিলার আবার দরকার এক মাসের পেট। সেই পেট লাগিয়ে স্কাইপে তিনি দিল্লিতে থাকা শাশুড়িকে দেখাবেন। বালিগঞ্জের এক গৃহবধূর কথায়, ‘‘আমি আর আমার বাচ্চার সারোগেট মা একই সময়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হই। ওঁর ডেলিভারি হল, আর আমি পেটটা এমনি কাটিয়ে সেলাই করে নিলাম।’’

বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ রোহিত ঘুটঘুটিয়ার কথায়, ‘‘সমাজ পি‌ছিয়ে আছে বলেই এমন লুকোচুরি খেলা।’’ আর এক বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রাণী লোধও মানলেন, ‘‘সমাজের মানসিকতা কিছুতেই পাল্টানো যাচ্ছে না।’’ 

সূত্র: আনন্দবাজার


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি