সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত
নক্ষত্র পতনের এক বছর
প্রকাশিত : ১১:৪৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৩:১২, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আজকের এই দিনে বাংলার রাজনীতির আকাশ থেকে পতন ঘটে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আজকের এই দিনে কেবল রাজনীতি থেকেই নয় বরং পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরতরে বিদায় নেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও বার বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। সুদূর সুনামগঞ্জের মাটি পেরিয়ে তুখোড় এই রাজনীতিক হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় এক নেতায়।
মৃত্যুর আগে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভাটিবাংলার সিংহপুরুষ ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান খ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনৈতিক জীবনে সব মহলের কাছে সমান জনপ্রিয় ছিলেন। এদিকে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ , ছাত্রলীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এদিকে তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিলেটেও স্মরণসভার আয়োজন করা হবে। উক্ত সভায় উপস্থিত থাকবেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও উপস্থিতি কামনা করেছেন আয়োজকেরা।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৪৬ সালের ৫ই মে, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা চিকিৎসক দেবেন্দ্র দাস সেনগুপ্ত ও মাতা সুমতিবালা সেনগুপ্ত। তিনি দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং সিলেট এম.এস কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ে ঘটান সিলেটের ওই নেতা। বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সাবেক তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রাজনীতি শুরু হয় বামপন্থি সংগঠনের মধ্য দিয়ে। সাম্যবাদী দর্শনের দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবাস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করা এই নেতা দৃঢ় ৫৯ বছর দাপটের সঙ্গে চলেছেন।
সত্তরের ঐতিহাসিক প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মোজাফফর ন্যাপ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে পুরো দেশ জুড়েই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন সিলেটের এই সূর্যসন্তান। সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য। তিনি ছিলেন তেজদীপ্ত, বক্তৃতার জাদুকর। সুতরাং তিনি একাই মাতিয়ে রাখতেন সংসদ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধিন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে অকুতোভয়ে সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর বিরুদ্ধে কথাবলা, সর্বোপরি নতুন সংবিধানে স্বাক্ষর না করা প্রভৃতি কারণে তিনি বিশ্ব মিডিয়ারও আলোচনায় চলে আসেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মোট ৭ বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে প্রথম বারের মত ন্যাপ থেকে, ১৯৭৩ সালে একতা পার্টি থেকে এবং ১৯৭৯ সালে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে সাংসদ হন। আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার পর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে সেই সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব প্রদান করেন।
তুখোড় এই রাজনীতিক কেবল বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়া-ই নয়, একজন রসিক মানুষও ছিলেন বটে। ২০১৬ সালের জনসভায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সিলেটের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, `সিলেটের হলো ছয় জেলা। এইখানে চারটা। আর একটা লন্ডন, আরেকটা নিউইয়র্ক। ফলে এই এলাকার উন্নয়ন করতে হবে।` উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাঁর মৃত্যুতে রাজনীতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এমজে/
আরও পড়ুন