ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

৩৬তম বিসিএস

নন-ক্যাডার পদ থাকলেও সুপারিশ নেই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১১, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

পদ শূন্য। পদের বিপরীতে বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ যোগ্য প্রার্থীও আছে, কিন্তু সুপারিশ নাই, এই দায় কার? এ প্রশ্ন রেখেছেন ৩৬ তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীরা। শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জের ২য় তলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  তারা এ প্রশ্ন তুলেন।

এ সময় তারা, ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দেন সে ভাষণের একটি উক্তি তুলে ধরেন। উক্তিটি হলো- “এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না, যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে, তারা চাকুরী না পায় বা কাজ না পায়।”

ওই সংবাদ সম্মেলনে ৩৬ তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীরা দাবি করেন, আমরা বিগত প্রায় ৩ বছর যাবৎ কঠোর সাধনার মাধ্যমে বিসিএস এর মতো তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েও আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছি।

তারা জানান, ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি)  প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০১৫ সালের ৩১ মে। এতে  প্রিলিমিনারী পরীক্ষার্থীর  অংশ গ্রহণ করে  ২ লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন চাকরিপ্রার্থী। প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক এই তিনটি ধাপ শেষ করে পিএসসি চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে গত বছরের ১৭ অক্টোবর। অর্থাৎ ২ বছর ৪ মাস ১৬ দিন পর।

এতে মোট ৫ হাজার ৬৩৩ জন পরিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে এবং ক্যাডারে পদ স্বল্পতার জন্য ৩ হাজার ৩০৮ জনকে নন-ক্যাডার তালিকায় অপেক্ষমান রাখা হয়। যার মধ্যে ২ হাজার ৭০০ জন প্রার্থী নন-ক্যাডারে চাকুরীর জন্য পিএসসিতে আবেদন করে।

উল্লেখ্য ক্যাডারে ফলাফল মেধাক্রম অনুসারে প্রকাশ করা হলেও নন-ক্যাডারের কোন মেধাক্রম প্রকাশ করা হয় না। অর্থাৎ নন-ক্যাডারের একজন প্রার্থী কখনই তার প্রকৃত মেধাক্রম জানতে পারে না। যারা সুপারিশ পেয়েছে তাদের মেধাক্রম কত এবং যে সুপারিশ পায় নাই তার মেধাক্রম কত? নন-ক্যাডারে আবেদন করা ২ হাজার ৭০০ জন প্রার্থীকে চাকুরীতে সুপারিশ করার জন্য পিএসসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে শূন্য পদের চাহিদা চায়।

 ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক ১ম ও ২য় শ্রেণির শূন্য পদের চাহিদা পিএসসিতে আসে। অনেক মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদ থাকা সত্বেও রিকুইজিশন পিএসসিতে পাঠায়নি এবং অনেকে বিলম্ব করে পাঠিয়েছে, যা ৩৬তম বিসিএস নন ক্যাডারের জন্য বরাদ্দকৃত হলেও সেগুলোতে সুপারিশ করা হয় নি।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের জন্য ৪ হাজার ৩২০ টি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক পদে ৭৭৮টি পদের চাহিদা আসে। যার শতভাগ ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে পূরণের তাগিদ দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা অবহিত হয়েছি সব মিলিয়ে ১ম শ্রেণির প্রায় ৬০০ এবং ২য় শ্রেণির প্রায় ৬ হাজার শূন্য পদের চাহিদা পিএসসিতে আসে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শূন্য পদ আসায় পিএসসির চেয়ারম্যান একাধিক বার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে ৩৫তম বিসিএস নন-ক্যাডারের ন্যায় শতভাগ নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন। যা দলিল হিসাবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংরক্ষিত আছে।

কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, চলতি বছরের ৫ মার্চ  ১ম শ্রেণীতে মাত্র ২৮৪ টি পদে এবং মাত্র ৬ দিন পর ২২ মার্চ  ২য় শ্রেণিতে ৯৮৫ টি পদে  সুপারিশ করে। অর্থাৎ ২ হাজার ৭০০ জন যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে মাত্র  এক হাজার ২৬৯ জনকে সুপারিশ করে সুপারিশ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।  প্রায় ৩ বছর সাধনা করে ১ হাজার ৫০০ (বোথ) এবং ১ হাজার ৩০০ (সাধারণ/পেশাগত) নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ১ হাজার ৪৩১ জন প্রার্থী চাকুরিতে সুপারিশ বঞ্চিত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার জন প্রার্থী সম্পূর্ণ বেকার এবং বেশিরভাগ প্রার্থীর সরকারি চাকুরীর বয়স শেষ।

পদবঞ্চিতরা অভিযোগ করে আরও বলেন, কিছু মন্ত্রণালয় থেকে ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের জন্য বরাদ্দকৃত পদ পিএসসিতে পৌঁছালেও বিলম্বের কারণ দেখিয়ে উক্ত পদগুলোতে যোগ্য প্রার্থী থাকার পরেও সুপারিশ করা হয় নি। যেমন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ১ম শ্রেণির ১৭ টি এবং ২য় শ্রেণির ১৩৫ টি সহ মোট ১৫২ টি পদের রিকুইজিশন ৩৬তম বিসিএস ননক্যাডার থেকে পূরণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ২২মার্চ পিএসসিতে যায়। কিন্তু পিএসসি সে পদগুলোতে সুপারিশ করেনি।

উল্লিখিত মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যমান পদগুলো যাতে ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডারদের থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয় এ ব্যাপারে পিএসসির  সাথে যোগাযোগ করা হলেও পিএসসি থেকে আশানুরূপ কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও জানান তারা। যারা আগে থেকেই নন-ক্যাডার থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরীতে আছে তাদেরকে সমান গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হবে না-এই মর্মে পিএসসি  কর্তৃক বলা হলেও চাকুরীরত অনেক প্রার্থী পুনরায় একই গ্রেডে নিয়োগ পেয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

পদবঞ্চিতদের অভিযোগ অনেক প্রার্থী নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য আবেদন ফরম জমা না দিয়েও  সুপারিশ বিভিন্ন পদে সুপারিশ পেয়েছে।  যা অনেকের মাঝে সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। সাধারণত পিএসসির নিয়ম হলো পূর্বের বিসিএস এর নন-ক্যাডারের সুপারিশ অব্যাহত রাখা হয় পরবর্তী বিসিএস এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত যা আমরা ৩৪ ও ৩৫তম বিসিএস এর নন-ক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখেছি। কিন্তু ৩৬তম বিসিএস এর প্রায় ১ হাজার যোগ্য প্রার্থীকে পদ থাকা সত্ত্বেও চাকুরীতে সুপারিশ না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৩৭তম বিসিএস এর চূড়ান্ত  ফল  পিএসসি প্রকাশ করতে চাচ্ছে। যা পূর্ববর্তী বিসিএস গুলো থেকে ননক্যাডার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত রেওয়াজের সম্পূর্ণ বিপরীত।

বিগত ৩৪তম এবং ৩৫তম বিসিএস এর নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ প্রাপ্ত মোট সংখ্যা এবং সময়ের ব্যবধানের সাথে ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের সংখ্যা এবং সময়ের ব্যবধানের তুলনামূলক তথ্য থেকে এটা সম্পূর্ণ স্পষ্ট যে, ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডারে থাকা সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীরা সম্পূর্ণ অমানবিক ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন  তারা।

এমএইচ/টিকে


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি