নিজের জন্য দান
প্রকাশিত : ১৪:২৯, ১৪ এপ্রিল ২০২১
নিয়মিত দান করুন। নিঃস্বার্থ দানে সাধ্যমতো নিশ্চিত করুন আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্থতা ও সার্বিক কল্যাণ। থাকুন সব ধরনের আতঙ্ক-অস্থিরতামুক্ত। হোন টেনশনমুক্ত প্রশান্ত জীবনের অধিকারী।
প্রতিটি ধর্মের মৌলিক শিক্ষা দান। উদ্দেশ্য সমাজের কল্যাণ, সেইসাথে নিজেরও বালা-মুসিবত-পেরেশানিমুক্তি। একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান-গবেষণাগুলোও বলছে একই কথা—অন্যের যতটা, তার চেয়ে বেশি নিজেরই কল্যাণ হয় নিয়মিত দানে।
পৃথিবীব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, নিঃস্বার্থভাবে দানের ফলে দেহ-মনে সৃষ্টি হয় এক ধরনের প্রশান্তি, যা দেয় সত্যিকার সুখের অনুভূতি ও আশাবাদ।
নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এটি সবচেয়ে কার্যকর। এতে সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়ে। সৃষ্টি হয় নতুন কর্মোদ্দীপনা। সাফল্য আসে সহজ স্বতঃস্ফূর্ততায়। পাশাপাশি দানের বরকতে প্রাকৃতিক নিয়মেই সৃষ্টি হয় নিরাপত্তাবোধ।
দান আপনাকে রাখবে সুস্থ
২০০৬ সালে যৌথভাবে একটি গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর র্যাচেল পিফেরি এবং টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ক্যাথলিন লওলার। তারা দেখেন—যারা নিয়মিত দান করেন, তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তারা তুলনামূলক বেশি সুস্থ। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এলিজাবেথ ডান গবেষণায় দেখেন, যখন কেউ দান করে তার রক্তচাপ হ্রাস পায় উল্লেখযোগ্য হারে। অথচ যখন সে নিজের জন্যে ব্যয় করে, রক্তচাপে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
তথ্যসূত্র : মেডিকেল নিউজ টুডে, ১৬ জুলাই ২০১৭
টাইম ম্যাগাজিন, ১৪ জুলাই ২০১৭
রয়টার্স, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
দান করলে মস্তিষ্ক হবে ইতিবাচক
সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ফিলিপ টবলার ও প্রফেসর আর্নস্ট ফার ২০১৬ সালে ব্যতিক্রমী একটি গবেষণার সূত্রপাত করেন—কেউ যখন অন্যের প্রয়োজনে নিঃস্বার্থ কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তার মস্তিষ্কে আদৌ কোনো পরিবর্তন ঘটে কিনা। ৪৮ জন ব্যক্তির ওপর এ পরীক্ষাটি চালানো হয়। দেখা যায়, ভালো খাবার বা অত্যন্ত আনন্দদায়ক কোনো ঘটনা ঘটলে মস্তিষ্কের যে অংশ উদ্দীপ্ত হয়, সেই একই অংশ উদ্দীপ্ত হয় যখন আমরা দান করি, অসহায় কারো উপকার করি। প্রফেসর টবলারের মতে, ‘প্রতিদিনের জীবনে আপনি আরেকটু বেশি সমমর্মী আচরণ করতে শিখুন, দেখবেন আপনার সুখের পরিমাণ বাড়বে অনেক বেশি।’
তথ্যসূত্র : মেডিকেল নিউজ টুডে, ১৬ জুলাই ২০১৭
টাইম ম্যাগাজিন, ১৪ জুলাই ২০১৭
রয়টার্স, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ধর্মবাণীতে দান
আল্লাহ-সচেতনদের বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ-সচেতনরা গায়েবে (মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে বোধগম্য না হওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য বাস্তবতায়) বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে, প্রাপ্ত রিজিক থেকে অন্যের জন্যে ব্যয় করে (অর্থাৎ নিয়মিত দান করে)। ২ : ৩
ভয় ও দুঃখ থেকে মুক্তি
দানের কথা প্রচার না করে যারা আল্লাহর পথে ধনসম্পত্তি ব্যয় করে এবং গ্রহীতাকে কোনো কষ্ট দেয় না, তাদের পুরস্কার প্রতিপালকের কাছে জমা থাকবে। তাদের কোনো ভয় থাকবে না। তারা দুঃখিতও হবে না। ২ : ২৬২
পাপমোচন ও ক্ষমা
তোমরা প্রকাশ্যে দান করলে তা-ও ভালো। আর যদি গোপনে অভাবীকে দাও, তা আরো ভালো। দানের কারণে তোমাদের অনেক পাপমোচন হবে। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন। ২ : ২৭১
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও (সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করো)। তিনি এর বহুগুণ প্রতিদান দেবেন আর তোমাদের ক্ষমা করবেন। ৬৪ : ১৭
সময় থাকতে দান
আমি তোমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, সময় থাকতেই তা থেকে অন্যের জন্যে ব্যয় করো, যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে একথা বলতে না হয়, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরেকটু সময় দাও, আমি দান করে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হই।’ কিন্তু মৃত্যুর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে আল্লাহ কাউকেই অবকাশ দেন না। ৬৩ : ১০-১১
সাফল্যের সরলপথ
কেউ যদি দান করে, আল্লাহ-সচেতন হয় এবং ভালো ও কল্যাণকর বিষয়গুলোকে জীবনের সত্য হিসেবে গ্রহণ করে, তবে আমি সাফল্যের সরলপথে চলাকে তার জন্যে সহজ করে দেবো। ৯২ : ৫-৭
প্রিয় জিনিস থেকে দান
(হে বিশ্বাসীগণ!) তোমার প্রিয় ও পছন্দের জিনিস থেকে দান করতে না পারলে তুমি কখনো সত্যিকারের ধার্মিক হতে পারবে না। ৩ : ৯২
দান নিজেরই কল্যাণে
(হে মানুষ!) যে অর্থবিত্ত তোমরা দান করো, সে দান তো তোমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যেই। তোমরা তো -আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করো। অতএব দানের পুরোপুরি -প্রতিদান তোমাদেরকে অবশ্যই দেয়া হবে। তোমাদের হক -কখনো নষ্ট করা হবে না। ২ : ২৭২
হে বিশ্বাসীগণ! তাই যথাসম্ভব আল্লাহ-সচেতন থেকো। তাঁর সত্যবাণী -শোনো ও অনুসরণ করো এবং নিজের কল্যাণার্থেই দান করো। -যাদের অন্তর কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। ৬৪ : ১৬
দানে প্রবৃদ্ধি বহুগুণ
আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্যে শুদ্ধচিত্তে (যাকাত হিসেবেও) -যা দান করো, তা-ই বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ৩০ : ৩৯
বেদ
সমাজকে ভালবাসো। ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও। দুর্গতকে সাহায্য করো। সত্য-ন্যায়ের সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রাখার শক্তি অর্জন করো। ঋগ্বেদ : ৬.৭৫.৯
নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব। ঋগ্বেদ : ১.১২৫.৬
এসো প্রভুর সেবক হই! গরিব ও অভাবীদের দান করি। ঋগ্বেদ : ১.১৫.৮
বাইবেল
যখন দান করো গোপনে দান করো। ডান হাত কী দিচ্ছে বাম হাত যেন জানতে না পারে। তোমার নীরব দান সদাপ্রভু দেখছেন। তিনি তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। মথি ৬ : ৩-৪
অভাবীদের সাহায্য করো। ঈশ্বরের সন্তুষ্টিমূলক কাজে অগ্রগামী থাকো। রোমীয় ১২ : ৯-১৩
সার্থক তাদের জীবন যারা দানশীল, কারণ তারা দয়া পাবে। সার্থক তাদের জীবন যাদের অন্তর নির্মল, কারণ তারা ঈশ্বরের দর্শন পাবে। মথি ৫:৬-৮
শ্রীমদ্ভগবদগীতা
স্থান কাল বিবেচনা করে কোনো প্রত্যাশা না করে উপযুক্ত পাত্রে প্রদত্ত দান সাত্ত্বিক বা উত্তম দান। প্রতিদানের প্রত্যাশায় অনিচ্ছাসত্ত্বে প্রদত্ত দানকে রাজসিক দান বলা হয়। অযোগ্য পাত্রে অনাদরে এবং অবজ্ঞা সহকারে যে দান, তা হচ্ছে তামসিক। শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগযোগ : ২০-২২
বুদ্ধবাণী
দানের অনন্ত কল্যাণ সম্পর্কে আমি যা জানি, যদি মানুষ তা জানত, তাহলে কাউকে না দিয়ে সে অন্ন গ্রহণ করত না। স্বার্থপরতার কালিমা তাকে বশীভ‚ত করতে পারত না। তার মনের গভীরে নীচতার কালিমা প্রবেশ করতে পারত না। ইতিবুত্তক : ২৬
প্রকৃত নিরন্ন মানুষকে যে অন্ন দান করে, সে পরলোকে স্বর্গে গমন করবে। ইতিবুত্তক : ২৬