নির্বাচন নিয়ে ফখরুলের হুঁশিয়ারি, ড. কামালের চাওয়া
প্রকাশিত : ২৩:৫১, ১ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ০০:০২, ২ ডিসেম্বর ২০১৮
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ না করলে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই স্থানে সংবিধান অনুযায়ী অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করলেন ড. কামাল হোসেন।
আজ শনিবার বেলা তিনটায় রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক কামাল হোসেন এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানেই তারা এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছি, উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনেও বলা হয়েছে। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। উল্টো গ্রেপ্তার করাই হচ্ছে। আমরা আশা করব কামাল হোসেনের সংবাদ সম্মেলনের পর এই গ্রেপ্তার বন্ধ হবে। অন্যথায় পরিবেশকে সুষ্ঠু করার জন্য ও নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনা হবে কি না এমন প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেয় না। ১৯৯৬ সালে আমরা দাবি তুলেছিলাম, বিএনপি ক্ষমতায় ছিলেন, তারা আমাদের সাথে বসে সংবিধান সংশোধন করল। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে প্রথম উপকার পেল যে, আওয়ামী লীগ ২১ বছর পরে ক্ষমতায় ফিরে আসল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
২০০৭ সালে আপনারা দেখেছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী থেকে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্যগুলো আসল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এটা কোনো বিতর্কিত বিষয় না। কোর্ট থেকে একটা রায় দিয়েছে যে, এটা সংবিধান সম্মত নয়। সেই রায়েও প্রথম লেখা ছিল, আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে।
এখন বলছি যে, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হওয়া- এটা সংবিধানের একটা বিধান। এটা খেয়াল খুশির ব্যাপার না। ১৯৯৬ সালে সংবিধান সংশোধনীর কারণে বিশেষ করে ২০০৮ সালে পুরো উপকার মহাজোট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল নির্বাচনে যে ফলাফল পেল তাতে অবশ্যই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। এটা কোনো বিরোধের ব্যাপার নয়, এটা সংবিধানের ব্যাখ্যার ব্যাপার।
বাংলাদেশের রাজনীতি হচ্ছে হিংসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি। কয়েক দশক ধরে এই হিংসা-প্রতিহিংসা চলে আসছে। যদি ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে তাহলে কি আপনারা ধারাবাহিক রাজনীতি অনুসরণ করবেন না কি নতুন কোনো রাজনীতি উপহার দেবেন এমন প্রশ্নে ড. কামাল বলেন, “আমাদের নতুন রাজনীতি না। সংবিধানে যেটা লেখা আছে, যে রাজনীতি আমরা তখন সংবিধানে যে নীতিগুলো লিখেছি। মৌলিক অধিকার সেখানে সংরক্ষিত হবে লেখা আছে, রাষ্ট্র হবে গণতন্ত্র, শাসন ব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক। এগুলো আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামো, যার মধ্যে আমরা রাজনীতি করতে চাই।”
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, তার নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনকার নয়, এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন ২০০৮ সালে। “আমার বয়স হলো ৮০। আমার সমবয়সী বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন তাদের মধ্যে আর একজনই মাত্র বেঁচে আছেন। এই অবস্থায় আছেন যে, উনি না থাকার মতো। ওই মন্ত্রিসভার শেষ আমি এখনো বেঁচে আছি। এটা আল্লাহর রহমত, আমার কোনো কৃতিত্ব নাই।
“আমি রাজনীতি করে আসছি ৫৫ বছর ধরে। এখন এতোগুলো যোগ্য ব্যক্তিরা রাজনীতি করে বেরিয়ে এসেছেন আমি তো মনে করি যে, এটা ভুল ধারণা যে নেতৃত্বের কোনো ঘাটতি আছে। অতীতে দেখেছি যে, বয়স হয়ে গেলে সরে যেতে চান না। আমি ওই অর্থে সরে যাচ্ছি না, আমি কাজ-কর্ম থেকে সরে যাচ্ছি না। ২০০৮ সালে আমাকে বলা হয়েছিল, নির্বাচন করুন। আমার এই ‘না’ করাটা আজকের সিদ্ধান্ত না , ২০০৮ সালে আমি নির্বাচন করি নাই।”
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মনটু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুস সালাম, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এসএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরকে//
আরও পড়ুন