ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

নৌকায় ভোট চাইলেন ব্যবসায়ীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৪৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ০৮:১২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়ে আগামী নির্বাচনে নোকায় ভোট চাইলেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তারা উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন। ব্যবসায়ীরা দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে শেখ হাসিনার দূর-দর্শী নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন।

বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবসায়ী সম্মেলন-২০১৮’তে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরে ব্যবসায়ী নেতারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রতি তাদের এই সমর্থন জানান।

সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ‘আশার প্রতীক’আখ্যায়িত করে পুনরায় তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।

এসময় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির প্রতি শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সমর্থন করে ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শান্তি সমৃদ্ধির দেশ গড়ার মাইলফলক।

দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা, সিইও, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আমদানী-রপ্তানী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, তথ্য প্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন সেবাখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরাসহ সারাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা সম্মেলনে যোগ দেন।

সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা চাই দেশের চলমান উন্নয়নের গতিধারা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য বিদ্যমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দেশে বজায় থাকুক।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এমন নেতৃত্ব চায় যে কিনা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, সাহসী এবং যার দুয়ার সবসময় ব্যবসায়ীদের জন্য অবারিত থাকবে। শেখ হাসিনা এমনই একজন ব্যক্তিত্ব তিনি যে কোন সমস্যায় ব্যবসায়ীদের শেষ ভরসাস্থল।

মহিউদ্দিন আরও বলেন, আমার সামনে যারা বসে আছেন। আপনারাই বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারেন। আর এর দিক নির্দেশনা দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে কোন জ্বালাও পোড়াও নৈরাজ্য দেখতে চাই না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমার কোন লোভ নেই। আমি আমার বাচ্চাদের ট্রেনিং দিয়েছি, আমি তাদেরকে বলেছি- তোমাদের আমি একটা সম্পদ করে দিয়েছি- সেটা হল শিক্ষা। এডুকেশন দিয়েছি। আপনারা দেখেছেন।

তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, দশ বছর আগে সজীব ওয়াজেদ জয় কে আপা দায়িত্ব দিলেন বাংলাদেশকে ডিজিটাল করা হোক। আমাদের মধ্যে অনেক লোকজন হাসাহাসি করেছে। বাংলাদেশ কীভাবে ডিজিটাল হবে?

দশ বছর আগে বাংলাদেশের যে অবস্থা ছিল। আজকে কি অবস্থা আছে। আমাদের প্রত্যেকের মোবাইল ফোন আছে, সাথে ইন্টারনেট কানেকশন আছে। বাংলাদেশ এখন কানেকটেড হয়ে গেছে। আমরা টু-জি দিয়ে শুরু করেছিলাম এরপর থ্রি-জি, ফোর-জি, ফাইভ-জি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম ফাইভ জি হতে যাচ্ছে। এখন ইনফো সরকার ১ হতে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই তিন প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার হয়েছে। গত কোরবানি ঈদে গরুর হাটে না  গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে গরু কিনতে পেরেছি।

এফবিসিসিআই’র সাবেক এই সভাপতি বলেন,  বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা আকাশে পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও বাংলাদেশকে ডিজিটাল করে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। তার দরজা সকলের জন্য সব সময় খোলা থাকে। ব্যবসায়ীরা যে কোন প্রয়োজনেই তাকে কাছে পেয়ে থাকেন। কেউ বলতে পারবেন না, এই সরকারের সময়ে ব্যবসা করতে গিয়ে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন বা হাওয়া ভবনের মত চাঁদা গুণতে হয়েছে।

এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, আমরা দেশের এ উন্নয়ন অগ্রগতির ধারার ব্যপকতা চাই। যে সমস্যাগুলো আমাদের রয়েছে তা আমরা চিহ্নিত করেছি। আপনিও (প্রধানমন্ত্রী) তা অবগত হয়েছেন। আমরা একত্রে এ সমস্যাগুলোর সমাধান চাই।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আইনের শাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। দক্ষ সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক  প্রশাসন নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আমরা এ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করতে পারলে উন্নয়নে খুব দ্রুত এগিয়ে যাব। আর সে  অগ্রগতির জন্য আমরা আপনাকে (শেখ হাসিনা) আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। বিজয়ের মাসে  জাতি আর একবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে বলে আমার বিশ্বাস।

তৈরি পোশাক শিল্প সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা রাত-দিন যখনই ডাকি প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পায়। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়ন ও অগ্রগতির এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই।

সম্মেলনে পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান গানে গানে সরকারের চলমান উন্নয়ন ও দেশের নেতৃত্বে আবারও শেখ হাসিনার সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

তার গাওয়া ‘ এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা- আমরা তোমাদের ভুলবো না’…….গানের সুরে সুর মিলান সারাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, গত দশ বছরে সরকার উন্নয়নের যে অর্জন আমাদের দেখিয়েছে। তা দেশে-বিদেশে সবার কাছে স্পষ্ট। বাংলাদেশ হিসেবে আজ আমরা গর্ব করতে পারি যে আমরা আজ তলাবিহীন ঝুঁড়ি নয়। অভাব-অনটন, ঝড় জলচ্ছাসের মঙ্গায় না খেয়ে থাকা দেশ নয়।

বিশেষ করে বর্তমান সরকারের যে জ্বালানী নীতি, সেটা প্রশংসনীয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে জ্বালীর উৎপাদন যেটুকু প্রয়োজন বর্তমান সরকারের সেটুকু দৃষ্টি আছে। জ্বালানী উৎপাদনের ব্যাপারে আমি যদি বলি না কিছু হয় নাই। তবে আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।  আমাদের বিদ্যুতের যে লোডশেডিং ছিল সেটা এখন আর দেখা যায় না।

তিনি আরো বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন বলে বর্তমান সরকার আবারও সরকার গঠন করবে। তবে কোন একটা মহল সরকারকে বিপদে ফেলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় মহলটির সব চক্রান্ত রুখে দিয়ে সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে। তাদের চক্রান্ত তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (শাহ আলম) বলেন, দেশের সব শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এক পতাকা তলে আসতে পেরে আনন্দিত। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার কন্যা সোনার বাংলার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তিনি ২০লাখ রোহিঙ্গাকে দেশে ঢুকতে দিয়ে মানবতার নজীর সৃষ্টি করেছেন। তাদের খাওয়াসহ সব চাহিদা মেটাচ্ছেন।সারা বিশ্ব আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি কিভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ এ নিয়ে গেলেন? দেশের সব ব্যবসায়ীকে একটা কথা বলবো- এ সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনেন, আমরা এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

এফবিসিসিআই সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মির আক্তার হোসেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির হোসেন বলেন, আমরা আজ একটি যুগ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা এগিয়ে যাব। নাকি পিছনের দিকে তাকাবো। আমার মনে হয় পিছনের দিকে তাকানোর আর কোন সুযোগ আমাদের নেই। কারণ বিগত দশটি বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রজ্ঞা, আপনার অভিজ্ঞতা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে যে পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন   পৃথিবীর একটি   রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র পীড়িত। অন্ন-বস্ত্রের সংস্থানহীন একটি দেশ। আজ বাংলাদেশে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে।

এরপর একে একে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে ফুটে উঠে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশা।

অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে আনিসুর রহমান সিনহা, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, এ কে আজাদ, আতিকুল ইসলাম, টিপু মুন্সি, প্রকৌশলি কুতুব উদ্দিন আহমেদ, রুবানা হক, সাইফুল ইসলাম, ফজলুর রহমান, আবদুল মুক্তাদির, মাইকেল পলি, মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে গত ১০ বছরে দেশের বিভন্ন সেক্টরে উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হয়।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি