ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ন্যায্য বাণিজ্যের অঙ্গীকারে যাত্রা শুরু করলো ‘আউড়ি’

প্রকাশিত : ২১:৪৩, ১১ এপ্রিল ২০১৯

ন্যায্য বাণিজ্যের অঙ্গীকার নিয়ে ঢাকার গুলশানে যাত্রা শুরু করলো বিক্রয় কেন্দ্র ‘আউড়ি’। যেখানে প্রান্তিক নারী কৃষক ও নারী উদ্যোক্তাগণ তাদের উৎপাদিত পণ্য জাতীয় পর্যায়ে সরাসরি বিক্রয়ের সুযোগ পাবেন। আউড়িতে থাকছে নিরাপদ খাদ্য ও গ্রামীণ পণ্য কেনার নিশ্চয়তা।

আউড়ির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা বললেন, কৃষিতে, উৎপাদনে এবং ব্যবসায় নারীর অবদান থাকলেও তার মূল্যায়ন নেই। নেই বাজার ব্যবস্থাপনায় তাদের উপস্থিতি। সে কারণে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা একদিকে ব্যবসা প্রসার করতে পারেন না, অন্যদিকে তার ক্ষমতায়নের পথ রুদ্ধ হয়। এজন্যই নারী বান্ধব বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার গুলশানে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আউড়ি’র পথচলা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র, অভিনয় শিল্পী, পরিচালক, ব্যবসায়ী, ফ্যাশন ডিজাইনার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাগণসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের ধারণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে কৃষিজ উৎপাদনে নারীরা সরাসরিভাবে যুক্ত থেকে কাজ করে। বিশেষ করে উপকরণ সংগ্রহ, জমি তৈরী, সার দেওয়া, নিড়ানি এবং কীটনাশকের প্রয়োগ হতে শুরু করে ফসল কাটা, বাছাই, মাড়াই ও পরবর্তী চাষের জন্য বীজ রাখা পর্যন্ত। কিন্তু পণ্য বিক্রির সময় তারা আর দৃশ্যপটে থাকে না। আবার বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায়া প্রচলিত নিয়ম-কানুন, আচরন আর চর্চা তাদেরকে বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বাধা দেয়, তাদের আয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ব্যাহত করে। নারীরা বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, যেমন ক্রেতা ও হোলসেলারদের অসম আচরণ, নারীদের ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকা, যৌন হয়রানির শিকার এবং অবকাঠামোগত সুবিধার অভাব ইত্যাদি। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই আউড়ি’র যাত্রা শুরু।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের নারী কৃষকেরা পণ্য উৎপাদন করলেও বিক্রির সুযোগ পান না। আউড়িতে তারা ন্যায্য মূল্য পাবেন। বাজার ব্যবস্থাপনা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। ভেজালহীন ও নিরাপদ পণ্যের এই বিক্রয় কেন্দ্রের প্রসংসা করে সিটি মেয়র এ ধরনের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সিটি কর্পোরেশন কজ করবে বলে জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা আছে যারা তাদের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এই জাতীয় বিক্রয় কেন্দ্র নারী উৎপাদকদের বাজারের মূলধারার ব্যবসার সাথে তাদের পণ্যগুলির সংযোগের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের পথ প্রসারিত হবে।

পরিচালক এবং অভিনেতা আফজাল হোসেন বলেন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে চাই নারীর ক্ষমতায়ন, যেন নারীরা নিজেদের রক্ষা করতে পারে, সাবলম্বী করতে পারে। আউড়ি নারীদের পথ দেখাবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে কৃষি ও অকৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনের সাথে নারীরা সরাসরিভাবে যুক্ত থেকে কাজ করে। কিন্তু জমি, উৎপাদিত পণ্য এবং উপার্জিত অর্থের উপর নারীর অধিকার থাকে না। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে এসকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমার বিশ্বাস আউড়ির মাধ্যমে ক্ষুদ্র নারী কৃষকরা সামনে এগিয়ে যাবেন।

অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, এই জাতীয় বিক্রয় কেন্দ্র নারী উৎপাদকদের বাজারের মূলধারার ব্যবসার সাথে তাদের পণ্যগুলির সংযোগের মাধ্যমে নারী উদ্দ্যোক্তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আউড়ি থেকে নারীরা সরাসরি তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ পাবে এবং এটি কমিউনিটির সাথে জাতীয় বাজারের সরাসরি সংযোগ হিসেবে কাজ করবে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি সাজেদা বেগম বলেন, এই প্রথম সংগঠনের নারীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ঢাকায় এসে বিক্রি করতে পারছেন। এটা আমাদের জন্য একটা বড় অর্জন। এতে নারী কৃষক ও উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন।

কৃষক এবং উদ্যোক্তাদের জাতীয় পর্যায়ের বাজারে যুক্ত করার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডস দুতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি- ফুড সিকিউরিটি, আদেমা ডার্ক বলেন, এই ধরনের উদ্যোগকে আরো প্রসারিত করা জরুরি নারী ক্ষমতায়নের জন্য।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুর নূর তুষার বলেন, মুনাফাভিত্তিক বাজার ব্যবস্থায় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পান না। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই উৎপাদনকারীরা যেন তাদের পণ্যের মূল্য নিজেরাই পান এবং উপকৃত হন।

অভিনেত্রী আফসানা মিমি বলেন, “নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠান বেশি বেশি দরকার। আমি নিজে এখানের পণ্য নিয়মিত কিনব। অন্য সবাইকেও আউরিতে-এসে পণ্য কিনতে অনুরোধ করব।”

মূলত: কৃষকদের সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী (কেকেএম)’ এই বিক্রয় কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে। যার সার্বিক সহযোগিতা করছে একশনএইড বাংলাদেশ। নারী উৎপাদনকারীরা একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের বিক্রয় কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করবেন। ঢাকার গুলশান-১ এর ৮ নম্বর রোডে অবস্থিত এই কেন্দ্রে ক্রেতাদের জন্য রয়েছে ভেজাল ও বিষমুক্ত শাকসবজি, খাদ্য ও কৃষি পণ্য। আছে হস্তশিল্প ও তাঁত শিল্পের পণ্য। কফি কর্নারে থাকছে গ্রামীণ খাবার। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে আউড়ি।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি