ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৩ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : এক লড়াকু নক্ষত্র

শেখ রফিক 

প্রকাশিত : ২০:৪০, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

আমার প্রথম প্রেমের নাম চট্টগ্রাম। মাটি-মা। অপরূপ রূপ-বৈভবে মরুবাসী আরবীয় পর্যটক ও ব্যবসায়ীর চোখে ‘শহরে সব্জ’ বা ‘সবুজের শহর’, অপরূপ/যেন সদা-সজ্জিত। নিসর্গ-প্রকৃতির অনন্য যুগলবন্দী এক অপরূপ রূপ চট্টগ্রাম।’শুনেছি মা, মাসী, ঠাকুরমার মুখে ধরাধামে এই অধমের আগমন ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায়। 

তখন চট্টগ্রাম শহরে জাপানী বোমা পড়ছে-হতাহত হচ্ছে নরনারী শিশু। মানুষ প্রাণ-ভয়ে আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছে গ্রামাঞ্চলে জীবন বাঁচাতে। এসময়ে পাথরঘাটার পিতামহের দ্বিতল দালানটি সেনাছাউনী বানাতে তৎকালীন সরকার রিকুইজিশন করে। ফলে শুধু ভয়-আতঙ্কে নয়, বাস্তুহারা হয়েই গ্রামের পথে ছুটি আমরাও। প্রাণের ভয়ে শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ছুটে-চলা ভয়চকিত মানবস্রোতে আমি সেদিন ভেসেছিলাম মায়ের কোলে সাম্পানে চড়ে। উত্তাল কর্ণফুলী পাড়ি দিয়ে হালদা নদীর ধার ঘেঁষে এসে পৌঁছেছিলাম রাউজান থানার নয়াপাড়া গ্রামে। ফিরলাম শান্তি ধামে।’ আমার জন্মভূমি গ্রামের নাম নোয়াপাড়া। গ্রামটি দু’জন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের জন্মভূমি। এক জন ‘পলাশীর যুদ্ধ’ মহাকাব্যের রচয়িতা মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন, অপর জন অগ্নিযুদ্ধের মহাবিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন। দুনিয়া-কাঁপানো চট্টগ্রাম বিদ্রোহের পথ ধরে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল, ডাক-তার কার্যালয় ও ইউরোপীয় ক্লাব দখলের মাধ্যমে ব্রিটিশ সৈন্যদের পরাজিত করে ৪ দিন চট্টগ্রামকে স্বাধীন রাখেন বিপ্লবীরা।’

পঙ্কজ ভট্টাচার্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে পাথরঘাটার পিতামহের দ্বিতল বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতামহ রমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন চট্টগ্রামের একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ও সমাজ সংস্কারক। তার পিতা প্রফুল্ল কুমার ভট্টাচার্য, একজন আদর্শ শিক্ষক ও স্বদেশী আন্দোলনের নিবেদিত প্রাণ। মা মনিকুন্তলা দেবী ছেলে-মেয়েদের মানুষ করার পাশাপাশি অগ্নিযুগের বিপ্লবী দেশসেবকদের আশ্রয় ও নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন।পাঁচ ভাই আট বোনের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র হলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম শহরে এসে স্কুলে ভর্তি হন তিনি। 

এই সময়টি ছিল স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল ভারত। সারাভারতে ডাক ও তার ধর্মঘট, তেভাগা লড়াই, টংক আন্দোলন ও নানকার প্রথা বন্ধের দাবিতে আলোড়িত বাংলার ঢেউ স্বাভাবিক ভাবে বিপ্লবী চট্টগ্রাম শহরের কিশোর পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মনেও এই আবহের ছাপ পড়েছিল গভীরভাবে। পঙ্কজ ভট্টাচার্য নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট হাই স্কুলে। কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অপরাধে তার পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করা হয়। অতঃপর তিনি মিউনিসিপাল হাইস্কুলে ভর্তি হন। ফুটবল ক্যাপ্টেন হিসাবে মিউনিসিপাল স্কুলকে প্রাদেশিক স্কুল ফাইনালে রানার্স আপ মর্যাদা অর্জন করতে ভূমিকা রাখেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মুসলিম স্কুলে। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। তারপর ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। শুরু হয় সামরিক শাসন। তখন ছাত্র ইউনিয়ন ইউএসপিপি নামে বেনামীতে শিক্ষাঙ্গনে সচল ছিল। 

নবীনবরণ, রবীন্দ্র, নজরুল জয়ন্তী, সুকান্ত জয়ন্তী সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলতো বেনামীতে। দু’পাতা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো। বেলাল বেগের সম্পাদনায় দু’পাতা-র প্রসিদ্ধ কলাম ছিল রম্য লেখক আবদুস শাকুরের ‘সিধারাস্তা গিধুবন্দর’-যা জনপ্রিয়তা পায়। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ড. ইউনুস ‘দু’পাতায়’ লিখতেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্যও মাঝে মধ্যে কবিতা লিখতেন ওই পত্রিকায়। উচ্চ মাধ্যমিক শেষে তিনি ১৯৬০ সালে ঢাকা এসে ভর্তি হলেন বাংলায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উঠলেন জগন্নাথ হলে। ওই বছরই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ পান। শুরু হলো পুরোদমে রাজনীতি। তখন অপ্রকাশ্যে ‘অগ্রদূত’ নামে ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত হলেন। ক্রমে গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সাথেও যোগাযোগ শুরু হলো। ‘গণবিরোধী শরিফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু হয়। 
কমরেড মো. ফরহাদ ছিলেন এই আন্দোলনের স্থপতি। তাঁর ও ফজলুল হক মনির মধ্যে নিয়মিত বৈঠকে এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে প্রস্তুতির কাজে সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক, বদরুল হক, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মতিয়া চৌধুরী, মুর্তুজা খান, রেজা আলী, আবুল কাসেম, ডা. সারোয়ার আলী, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, প্রকৌশলী আবুল কাসেম, সামসুদ্দোহা, মাহাবুবউল্লাহ, মান্নান ভূঁইয়া, মোস্তফা জামাল হায়দার, দীপা দত্ত, শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ, পরিতোষ দাশ, নুরুর রহমান- প্রমুখরা। পরবর্তীতে মতিউর রহমান ও আবুল হাসনাত প্রমুখ যুক্ত হন। ছাত্রলীগের আব্দুর রাজ্জাক, খালেদ মো. আলী, আবদুর রউফ, ছাত্র শক্তির মোজাফফর হোসেন পল্টু, সাহেদ আলী প্রমুখ ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। একথাও ঠিক সামরিক শাসন বিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার মূল সিদ্ধান্তটি শেখ মুজিবÑ মণি সিংহের মধ্যকার ১৯৬১ সালের শেষের দিকে মানিক মিয়ার বাসভবনে নেয়া হয়। ঐ বৈঠকে খোকা রায়ও ছিলেন। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারী ’৬২ সালে সোহরাওয়ার্দী সাহেব গ্রেফতার হলে ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় সামরিক শাসন বিরোধী রক্তঝরা ফেব্রুয়ারি আন্দোলন।’

পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৬৩ সালে ৮ম জাতীয় সম্মেলনে (১৭-১৯ অক্টোবর) তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এরপূর্বে তিনি সহ-সভাপতি ছিলেন। এসময় এ কে বদরুল হক ছিলেন সভাপতি ও হায়দার আকবর খান রনো সাধারণ সম্পাদক এবং কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নুরুর রহমান। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গা লাগার শুরু থেকে তা মোকাবেলায় ছাত্র ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। ওই বছর ২১ জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল মিলে “কপ” গঠন করে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কপের মনোনয়ন নিয়ে ফাতেমা জিন্নাহ নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। স্বৈরশাসক আইয়ুবের বিরুদ্ধে এই নির্বাচনকে পূর্ব বাংলার জনগণের বৈষম্য-বঞ্চনা-অবিচারের বিরুদ্ধে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার কাজে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এবং ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন ও তৎকালীন গোপন কমিউনিস্ট পার্টিও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। 

৬৪-র সেপ্টেম্বর নীলফামারীতে ১০ হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে সভা করি, সভা শেষে গ্রেফতার হই। দৌঁড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করি এক গেরস্থ বাড়ির উঠানে গোবরের গর্তে পড়ে যাই। পুলিশ জাপটে ধরে কিলগুতা দিয়ে বলে ‘কই পালাও দেখি? আমি হেসে বললাম “তোমার কাজ ধরা” “আমার কাজ পালানো” “তুমি জিতেছ আমি হেরেছি।’’ থানায় ওসির কিশোরী কন্যা ছুটে এলো, বড় ডাকাত ধরা পড়েছে শুনেছে সে। জিজ্ঞাসা করলো, “কোথায় ডাকাতি করতে গিয়েছিলে?” জবাবে বললাম, “আইয়ুব খান আর মোনায়েম খানের বাড়িতে।” খিলখিল হেসে কিশোরী চলে গেল-ফিরলো দু’টো পেয়ারা নিয়ে; খেলাম-পেলাম অমৃতের স্বাদ। রাতে কারাগারে আমার জায়গা হলো জেনানা ফাটকে-অবশ্য কোনো জেনানা ছিল না সেখানে। পরদিন ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর ’৬৪। ২২দফা শিক্ষা সনদের দাবিতে পূর্ববঙ্গব্যাপী ধর্মঘট। সকল স্কুল ও কলেজ থেকে ছেলে মেয়েরা সারা শহরে মিছিল করে। মিছিল শেষে জেল ঘেরাও করে কয়েকহাজার ছাত্র ছাত্রী এবং পঙ্কজের মুক্তির দাবিতে শ্লোগানমুখর থাকে। মাত্র আটজন পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন বিধায় ওসি সাহেব আমার সাহায্য কামনা করে হাত চেপে ধরলেন। জবাবে আমি শর্ত দিলাম এই মর্মে যে, টেবিলে দাঁড়িয়ে আমি বক্তব্য দেবো ছাত্রছাত্রীদের ফিরে যেতে অনুরোধ করবো। ভীতিগ্রস্থ ওসি সাহেব আমার শর্ত মেনে নেয় এবং আমি জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানাই। 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক সাথে ৪২ জন পর্যন্ত একটি ব্যারাকে এক সাথে ছিলাম ’৬৪ সালে, এক দুই খাতাÑ এই ব্যারাকের নাম।’- পঙ্কজ ভট্টাচার্য রাজনীতির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পলাতক থাকা ও কারাবাস কারণে বাংলা অনার্স ফাইনালে পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা হারান তিনি। ক্লাসে অনুপস্থিতি জনিত কারণে, বাধ্য হয়ে তিনি এবং সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক পাস কোর্স পরীক্ষা দিয়ে বি.এ. পাশ করেন। এম.এ. বাংলা পরীক্ষায় ভর্তির লিখিত পরীক্ষায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৬৬ সালে পঙ্কজ ভট্টাচার্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন। এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি সাধিত হলে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে সংখ্যালঘু এলাকায় পাহারা ও ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। 

১৯৬৭ সালে স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলার পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পূর্বেই স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলার তাকে তিনমাস কারাবাসে নির্যাতিত হতে হয়। স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা একই সুত্রে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা করা হলে পাকিস্তান ন্যাপ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়বে এই বিবেচনায় স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে সরকার। স্বৈরাচার আইয়ুব-ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রে সাড়ে ৩ বছরের অধিক সময় তাকে জেল খাটতে হয়। ১৯৬৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পার্টির কাজে নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শীতা এবং সাংগঠনিক যোগ্যতার কারণে ১৯৭০ সালে কমউিনিস্ট পার্টি তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক নির্বাচিত করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সংগঠক হিসেবে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত তিনি সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অন্যতম নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা তৈরিতে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। 

১৯৯৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ত্যাগ করে দেশের রাজনীতি এবং শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। কিন্তু তার কাঙ্খিত স্বপ্ন ব্যর্থ হয়। অবশেষে গণফোরাম থেকে বেরিয়ে প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির প্লাটফর্ম হিসেবে ২০১০ সালে গণঐক্য গঠন করেন। তারপর গণঐক্য বিলুপ্ত করে ২০১৩ সালে ঐক্য ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমৃত্যু ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন মনে-প্রাণে বিশুদ্ধ রাজনীতিক। বাঙালির শাশ্বত অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জাতীয়তাবাদী চেতনা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের চেতনায় মানবমুক্তির দিশা খুজলেও তিনি বিশ্বাস করতেন সমাজ বিপ্লবের মধ্য দিয়েই মানুষের প্রকৃত মুক্তি সম্ভব। রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের প্রতি তার আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ অতুলনীয়। সহযোদ্ধা-সহকর্মীদের খোঁজ-খবর রাখা, তাদের সন্তানদের পড়ালেখা, তাদের কর্মজীবন এবং বিয়ে-শাদির বিষয়েও তিনি দায়িত্ব আছে বলে মনে করতেন এবং তা পালন করতেন। 

তার রাজনৈতিক সহকর্মী এবং সতীর্থের জগৎ বিশাল ও বিস্তীর্ণ। যেখানে তিনি আপন আলোয় জ্বলে থাকা এক নক্ষত্র। “দেশ ভাগের বেশ পরে যেদিন বাবা-মা এদেশ ছেড়ে চলে যায় সেদিন আমি বাবা-মাকে বলেছিলাম, তোমরা চলে যাও, আমাকে দেশের জন্য রেখে যাও। বাবা-মাকে ছেড়েছি, কিন্তু দেশ ছাড়িনি।” সেই দেশমাতার পঙ্কজ’দা আজ দেশ ছেড়ে চলে গেলেন এক না ফেরার দেশে। জয়তু পঙ্কজ ভট্টাচার্য, রেড স্যালুট আপনাকে।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি