পবিত্র শবেমেরাজ আজ
প্রকাশিত : ০৮:৩০, ১১ মার্চ ২০২১
আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র শবেমেরাজ। মহিমান্বিত এই রাতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সশরীরে ঊর্ধ্বাকাশে গমন করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। তাই পবিত্র এই দিনে জিকির-আজকার, নফল নামাজ, দোয়ার মধ্য দিয়ে শবেমেরাজের রাত অতিবাহিত করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা।
হাদিস ও সাহাবিদের বর্ণনা অনুযায়ী, মেরাজের রাতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.) নিয়ে কাবা শরিফের হাতিমে যান। জমজমের পানিতে অজুর পর বোরাক নামক বাহনে জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। এরপর প্রথম আকাশে পৌঁছান মহানবী (সা.)। সেখানে হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এভাবে সাত আকাশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সাক্ষাৎ করেন হজরত ঈসা (আ.), হজরত ইয়াহইয়া (আ.), হজরত ইদ্রিস (আ.), হজরত হারুন (আ.), হজরত মুসা (আ.) এবং হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গে।
সপ্তম আকাশ থেকে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন মহানবী (সা.)। সেখান থেকে আরশে আজিম যান। এক ধনুক দূরত্ব থেকে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন হয়। এই সাক্ষাতে মহানবী (সা.)-এর উম্মতদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যে জায়গার আশপাশে তিনি বরকত দান করেছেন-ভ্রমণ করালেন, যাতে তিনি তাকে তাঁর নিদর্শনগুলো দেখাতে পারেন, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’। (সূরা বনি ইসরাইল : ১)
আল্লাহপাক তাঁর হাবিব (সা.)কে বিশেষ অভ্যর্থনায় মেরাজে নিয়ে যে সম্মাননা দিয়েছেন তার বর্ণনা কালামে পাকে বিবৃত হয়েছে এভাবে : ‘তখন তিনি ঊর্ধ্ব জগতে। তারপর তিনি তাঁর কাছাকাছি হলেন, আরও অনেক কাছে। তখন তাদের মধ্যে দুই ধনুক পরিমাণ বা এর চেয়েও কম পরিমাণ ব্যবধান ছিল। তখন আল্লাহপাক তাঁর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার করলেন।
‘তিনি যা দেখেছেন তা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেননি। তিনি যা দেখেছেন, তোমরা কি তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে তর্ক করবে? নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন। প্রান্তবর্তী সিদরা গাছের কাছে। যার কাছে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। যখন গাছটি আচ্ছাদিত ছিল যা দিয়ে তা আচ্ছাদিত হওয়ার ছিল। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি, তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যবিচ্যুত হয়নি। তিনি তাঁর রবের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছেন।’ (সূরা আন নাজম)
বিভিন্ন বর্ণনা মতে, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়াত লাভের একাদশ বর্ষে ২৬ রজব দিবাগত রাতে চান্দ্র মাস বিবেচনায় ২৭ রজব মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল। আরবি ভাষায় মেরাজ অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি। আর ফারসি ভাষায় এর অর্থ ঊর্ধ্ব জগতে আরোহণ। পবিত্র কুরআনে আরবের মক্কা নগরী থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস (মসজিদে আকসা) পর্যন্ত ভ্রমণকে পবিত্র ‘ইসরা’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উপনীত হওয়া ও আরশে আজিমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহিমান্বিত ঘটনাকে মেরাজ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র এ রাতটি পালন করে থাকেন। কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল নামাজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও বাড়িতে মিলাদ এবং গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে থাকেন।
পবিত্র শবেমেরাজ উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রতিটি মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘লাইলাতুল মেরাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এএইচ/এসএ/