ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পাঁচশ’ বছরের প্রাচীন স্থাপত্য ছুটি খাঁ মসজিদ

ইকবাল হোসেন জীবন, মিরসরাই থেকে

প্রকাশিত : ১৩:১৮, ১২ জুন ২০২১ | আপডেট: ১৩:১৯, ১২ জুন ২০২১

গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের আমলে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উত্তর চট্টগ্রামের শাসনকর্তা লস্কর পরাগল খাঁ ও তার ছেলে ছুটি খাঁর আমলে তৈরি মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ছুটি খাঁ মসজিদ। এটি প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে স্থান পেয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এ মসজিদের অবস্থান। ইউনিয়নের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে মাত্র পাঁচশ’ গজ উত্তরে। স্থানীয় ছুটি খাঁ দীঘির পূর্ব পাড়ে মসজিদটি অবস্থিত।
  
বাংলা একাডেমীর সহকারি পরিচালক আহমদ মমতাজের মিরসরাইর ইতিহাস সমাজ ও সংস্কৃতি গ্রন্থ থেকে জানা যায়, গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের আমলে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে উত্তর চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন লস্কর পরাগল খাঁ ও পরবর্তীতে তার ছেলে ছুটি খাঁ। পরাগল খাঁর পিতা রাস্তি খাঁও গৌড়ের শাসনকর্তা রুকুনুদ্দীন বরবাক শাহের শাসনামলে চট্টগ্রামের শাসনকর্তা ছিলেন। পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁর শাসনামলে চট্টগ্রামের শাসন কেন্দ্র ছিল পরাগলপুর। এসময় এখানে বেশ কিছু দীঘি ও কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জানা গেছে, ছুটি খাঁ মসজিদের মূল নকশা বহুদিন পূর্বে ভেঙ্গে গেছে। যা পরবর্তীতে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়। তবে মূল মসজিদের বেশকিছু ছোট বড় পাথর ও শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়। পুরানো মসজিদের কিছু নিদর্শন (ধ্বংসাবশেষ) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর কর্তৃক সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সরেমজিন গিয়ে দেখা যায়, কৃষ্ণবর্ণের নানা নকশা ও আকৃতির পাথরগুলো মসজিদ প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখনও। মসজিদের ভেতরে একাধিক শিলালিপি রয়েছে। যার মধ্যে একটি শিলালিপিতে পবিত্র কোরআন শরীফের আয়াতুল কুরসি লেখা আছে।

দেখা গেছে, ছুটি খাঁ মসজিদ লিপি খোদিত পাথরের ব্লক দিয়ে নির্মিত ছিল। সেগুলো এখনও পড়ে আছে বর্তমান মসজিদের আঙিনায়। এসব লিপি তোগরা হরফে কোরআনের নানা আয়াত ও আরবি দোয়া। তবে ঐতিহাসিক মূল্যবিশিষ্ট কোন লিপি পাওয়া যায়নি এখানে। 

জানা যায়, ছুটি খাঁ কর্তৃক এ মসজিদ স্থাপন করা হয় ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে। তবে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা পরাগল খাঁ নাকি ছুটি খাঁ, তার কোন লিখিত সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। নির্মাতা যেই হোন, এ মসজিদটি অদ্যাবধি পাঁচশ’ বছর ধরে এ অঞ্চলের শাসক, পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা ও আরাকানী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিক ছুটি খাঁর স্মৃতি হিসেবে টিকে আছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি শুক্রবার ও ঈদের সময় বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদ ও মসজিদ প্রাঙ্গণে। শত শত মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন।

মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, ছুটি খাঁ মসজিদ দেশের একটি প্রাচীনতম স্থাপত্য। এটি সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিভিন্ন সময় সাধারণ নির্মাণ শ্রমিকদের দিয়ে মেরামতের কারণে এটির মূল নকশা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনও সময় আছে এটি আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার।

জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকসুদ আহম্মদ চৌধুরী একুশে টিভির অনলাইনকে বলেন, ‘মসজিদটি দেশের প্রত্নতত্ত্ব ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিৎ পুরোপুরি বিনষ্ট হওয়ার পূর্বে এটিকে সংরক্ষণ করা।’

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি