‘পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে হবে’
প্রকাশিত : ১৭:২২, ৪ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৩৩, ৪ মার্চ ২০১৮
আগামী ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস। এই দিনটিকে ঘিরে সংশ্লিষ্টরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সোনালী আশঁ খ্যাত এই পণ্যটির সুদিন ফেরে এসেছে। এর উৎপাদন, বহুমুখী ব্যবহার ও রফতানি বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী পণ্যটির চাহিদাও বেড়েছে। বলা যায়, পাটের সুদিন ফেরে এসেছে। পাট দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘সোনালী আশেঁর সোনার দেশ পাটপণ্যের বাংলাদেশ’। পাটের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হয় পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সহ-সম্পাদক শামসুল হক।
একুশে টেলিভিশন: কেমন আছেন?
মাহমুদুল হাসান: ভালো আছি।
একুশে টেলিভিশন: পাটের বর্তমান এবং অতীত নিয়ে সংক্ষেপে যদি একটু বলেন?
মাহমুদুল হাসান: পাকিস্তান আমলে পাটের একটি জমজমাট ব্যবসা ছিল। সে সময় গ্রামে অনেক পাট উৎপাদন হতো। বাংলাদেশ হওয়ার পর মাঝে পাটের উৎপাদন কমে যায়। তবে সম্প্রতি পাটের উৎপাদন বেড়েছে। তবে ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে পাটের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে পাটের উৎপাদন ছিল ৫১ লক্ষ মেট্রিক টন। এই অর্থ বছরে অর্থাৎ সর্বশেষ অর্থ বছরে পাটের উৎপাদন হয়েছে ৯২ লক্ষ মেট্রিক টন। এতে দেখা যাচ্ছে প্রতি বছর পাটের উৎপান বাড়ছে। পাটের রফতানিও বেড়েছে। যেমন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পাট রফতানি হয়েছে ৪১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আগের বছর একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেড়েছে।
একুশে টেলিভিশন: পাট দিবসকে ঘিরে রাজধানীতে ব্যানার ফেস্টুন বেস চোখে পড়ছে। আসলে এর মূলত উদ্দেশ্য কি?
মাহমুদুল হাসান: ঠিকই বলেছেন। পাট দিবসকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে ব্যানার ফেস্টু লাগানো হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর হাতিরঝিলে নৌকা বাইচ এর আয়োজন করা হয়। পাট দিবস গত বছর প্রথম পালন করা হয়। এবার দ্বিতীয়বার পালন করা হবে। এর কারণ হলো যারা মূলত রাজধানীতে থাকেন তারা অনেকেই পাট সম্পর্কে জানেন না। পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য এটা করা হয়। এতে আমরা ভালো ফল পাচ্ছি। এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার কারণে পাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়াও পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে ক্রমান্বয়ে পাটের উৎপাদন বাড়ছে।
একুশে টেলিভিশন: পাটের বহুমুখীকরণ সম্পর্কে যদি বলেন?
মাহমুদুল হাসান: পাট নানাভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাট ব্যাগজাতকরণসহ পাটের জুতা, পাটের আসবাবপত্রও তৈরি হচ্ছে। এবার মেলায় ২৩৫টি পাট পণ্য থাকবে। পাট জাত পণ্য বহুমুখীকরণে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: পাট চাষে কৃষকরা কেনো আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বা আগের চেয়ে পাট কেনো কম উৎপাদন করছে?
মাহমুদুল হাসান: এর কারণ কয়েকটি। এদের মধ্যে অন্যতম হলো দাম কম হওয়া। আর পাটের চেয়ে যদি ধান বা অন্য পণ্য উৎপাদন করে মুনাফা বেশি পায় তাহলে কৃষক সেদিকেই ঝুঁকবে এটাই স্বাভাবিক।
একুশে টেলিভিশন: কৃষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ভালো মানের বীজ তারা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে কি বলেন?
মাহমুদুল হাসান: ভালো মানের বীজের অভাব আমাদের রয়েছে। কারণ বীজের জন্য আমাদের ভারতের ওপর নির্ভর করতে হয়। ভারত থেকে এই বীজ আমদানি করতে হয়। আমরা এখনও নিজস্বভাবে ভালো মানের পর্যাপ্ত পরিমানে বীজ উৎপাদন করতে পারি না। আর বীজ সরবরাহ করেন আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
একুশে টেলিভিশন: কৃষকরা পাটের ভালো দাম পান না এমন অভিযোগ প্রায় ওঠে। আরেকটা অভিযোগ হলো কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করা হয় না। এ বিষয়ে কি বলেন?
মাহমুদুল হাসান: হ্যাঁ অভিযোগের সত্যতা আছে। বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করার কথা পাটকল করপোরেশনের। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনতে পারলে কৃষকরা ভালো বা ন্যায়্য মূল্য পেতো। কিন্তু সেটা করতে আমরা পারি না। এর কারণ হলো করপোরেশনের অর্থ সংকট। আমরা বাকিতে পাট কিনি। আর টাকা পেয়ে পরিশোধ করি। এখন পর্যন্ত অধিদফতরের পাট ক্রয়ের দেনা রয়েছে ৫২৯ কোটি টাকা। আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনও বকেয়া আছে। ফলে দেখা যায় সরাসরি পাট কিনতে না পারায় মধ্যস্বত্বভোগীরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। অপর দিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
একুশে টেলিভিশন: পাটে সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কোনো ভতুর্কি দিচ্ছে কি?
মাহমুদুল হাসান: হ্যাঁ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদনের জন্য কাজ করছে। সরকার বিনা মূল্যে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার কৃষককে বীজ ও সার সরবরাহ করছে। দেশে মোট পাট উৎপাদনকারী রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ।
একুশে টেলিভিশন: আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহমুদুল হাসান: একুশে টেলিভিশন পরিবারকে ধন্যবাদ।
এসএইচ/
আরও পড়ুন