পাপারাজ্জি কী? তারকাদের পেছনে তারা লেগে থাকে কেন?
প্রকাশিত : ১৭:৫৬, ২৫ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ০০:১৭, ২৬ আগস্ট ২০১৮
ইতালীয় শব্দ paparazzo থেকেই এসেছে ‘পাপারাজ্জি’ বা ‘পাপারাৎসি’ শব্দটি। এই শব্দ দিয়ে এমন সব আলোকচিত্রীদের বোঝানো হয়, যারা নির্দিষ্ট কোনো মঞ্চ বা অনুষ্ঠান ছাড়া তারকাদের অসচেতন ও ব্যক্তিগত মুহুর্তের ছবি তোলেন।
পাপারাজ্জিরা সারাক্ষণ তারকাদের পেছনে ঘুর ঘুর করতে থাকেন। তাদের হাত থেকে বাঁচতে তারকারা নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। পাপারাজ্জিরা একদিকে তারকাদের জীবনে এক উৎপাতের নাম হলেও অন্যদিকে প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে তাদেরই খুব কাজে লাগে।
কোন তারকা কোথায় গেলেন, কার সঙ্গে গেলেন, কী পোশাক পরলেন, সব ঘটনাই ক্যামেরাবন্দী করে পাপারাজ্জির দল। ইতালিয়ান শব্দ ‘পাপারাজ্জো’–র বাংলা অর্থ ভোঁ ভোঁ শব্দ করে ঘুরে বেড়ানো পতঙ্গ।
সেখান থেকেই এই ‘পাপারাজ্জি’ শব্দের আগমন। পাপারাজ্জি আলোকচিত্রীদের কাজের ধরনও অনেকটা সেই পতঙ্গের মতোই। তারকাদের ছবি দেখার সময় মাঝেমধ্যে নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা হয়।
তাঁরা এমন সময় ছবি তোলেন যখন, তারকারা চান না এই ছবিগুলো কেউ তুলুক বা বাইরের জীবনে প্রকাশ হোক। যেমন: তাঁরা যখন দোকানে বা মার্কেটে যান, কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া করেন, বা সমুদ্রসৈকতে অবকাশযাপন করেন ইত্যাদি।
এটি কোনো সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব আলোকচিত্র গ্রহণের স্থান নয়, যেমনটা হয়ে থাকে কোনো প্রেস কনফারেন্স বা লাল গালিচা সংম্বর্ধনার ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে তারকারাও চান যে, তাঁদের ছবি সেখানে তোলা হোক।
কিন্তু কোন তারকা কখন কোথায় যাবেন, আলোকচিত্রীরা তা জানেন কীভাবে? বেশির ভাগ সময় আগে থেকে কিছু জানা থাকে না। কিন্তু যেসব জায়গায় তারকাদের আনাগোনা বেশি, সেসব জায়গায় প্রতিদিন আট থেকে দশজন পাপারাজ্জি ঘোরাফেরা করেন।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে হয়তো কোনো বড় তারকাকে পেয়ে যান। আর বেশির ভাগ সময় তাঁরা তারকাদের অনুসরণ করেন তাঁদের গাড়ির নম্বর দিয়ে। মোটরসাইকেলে চড়ে তারকাদের গাড়ি অনুসরণ করতে হয় পাপারাজ্জিদের।
তাই মোটরবাইক চালাতে না জানলে পাপারাজ্জির কাজ করা প্রায় অসম্ভব। হলিউডেও একই উপায়ে ছবি ‘শিকার’ করেন পাপারাজ্জিরা। এর সঙ্গে তারকাদের প্রিয় অবকাশ যাপন কেন্দ্রের আশপাশেও তাঁদের খেয়াল রাখতে হয়।
কারণ, তারকাদের গোপন প্রেম আর রোমান্টিক ছবিগুলো বেশির ভাগ সময় সেখান থেকেই মেলে।
পাপারাৎসিরা সচারচর স্বাধীন কর্মজীবি এবং তাঁরা মূলধারার গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট নন। কিন্তু তাঁরা যেহেতু তারকাদের নিয়ে কাজ করেন এবং একই কাজটি করে তারকা সংশ্লিষ্ট ম্যাগাজিন ও পত্রিকাগুলোও, তাই মাঝে মাঝে পাপারাৎসিদের সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য করা দুষ্কর হয়ে পড়ে।
পাপারাজ্জি এমন কাউকেই বলা হয় যে শুধুই অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে চুরি করে অনুপ্রবেশ করে তথ্য এবং জীবন ধারনের শৈলী উন্মুক্ত করে মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। সহজ ভাষায় আলোকচিত্রী। যাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বই হচ্ছে কোথায় কোন সেলেব্রিটি কি করছেন সেটার গন্ধ শুঁকে এক্কেবারে জায়গামাফিক পৌঁছে যাওয়া। অতঃপর ক্লিকের পর ক্লিক। ফ্ল্যাশের আলোয় সেই সেলেব্রিটি মানুষটার ব্যক্তিগত জীবনের বারোটা বাজিয়ে দেয়া।
তথ্যানুসন্ধানের ভাষায় কাজটা যৌক্তিক বটে। দর্শক তার পছন্দের নায়িকা কোন বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কী দিয়ে নৈশভোজ সারছেন কিংবা স্বপ্নপুরুষ কোন নারীকে নিয়ে ডিনার ডেটে গেল, সেটা জানতে চাইবে নিতান্ত মনের খোরাক জোটানোর জন্য।
কিন্তু সেই তারকা ব্যক্তিটিও যে মানুষ, আর তার একান্ত ব্যক্তিগত বলেও যে জীবনের কিছুটা সময় বরাদ্দ থাকে সে সীমানার প্রাচীর ভেঙে ফেলাটাই আজকালকার তথাকথিত পাপারাজ্জিদের সিদ্ধহস্ত ক্ষমতা। বাজারে অবশ্য গুজব আছে, আলোচনায় থাকার জন্য তারকারা নিজে থেকেই পাপারাজ্জির শরণাপন্ন হন—এ কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তবে সেই তর্ক পরে হবে। আগে জেনে নেওয়া যাক, একজন পাপারাজ্জি কীভাবে তারকাদের ছবি তোলেন।
বিশ্বে এই ধারণার প্রচলন শুরু হয় ১৯৬০ সালে। আর বলিউডে এই চল শুরু হয়েছে গত শতকের নব্বইয়ের দশকে। ভারতের সবচেয়ে পুরোনো পাপারাজ্জিদের মধ্যে একজন যোগেন শাহ। নব্বই দশকের শুরুর দিকে নির্মাতা সুভাষ ঘাইয়ের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে তারকাদের কিছু ক্যান্ডিড বা অপ্রস্তুত ছবি তুলে আনেন যোগেন।
মানে সেই ছবিগুলো ঠিক পোজ দেওয়া ছিল না। পরে দেখতে পেলেন, ট্যাবলয়েডগুলোয় এ ধরনের ছবির কদর বেশি। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান তো আর রোজ হবে না। তারকাদের নিয়মিত ক্যামেরায় ধরতে হবে অন্য কোনো উপায়ে।
যেমন মুম্বাইয়ের জুহু, বান্দ্রা ও বিমানবন্দর এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো তারকার দেখা মেলে। আজকাল জিমের বাইরেও ওত পেতে থাকে পাপারাজ্জির দল। বড় রেস্তোরাঁগুলোর বাইরে সব সময়ই ঘোরাফেরা করতে থাকেন তাঁরা।
কোনো তারকাকে দেখতে পেলেই শুরু হয়ে যায় ‘ক্লিক ক্লিক ক্লিক’। আর এই যে ‘এয়ারপোর্ট লুক’, ‘জিম লুক’—এসবও কিন্তু পাপারাজ্জিদেরই সৃষ্টি।
এসব ভাবনা কীভাবে মাথায় এলো? যোগেন বলেন, ‘খুব যে ভেবেচিন্তে এই চল শুরু করা হয়েছে, তা নয়। সমস্যা হচ্ছে রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার পর গাড়িতে উঠতে যে সময় লাগে, সেই অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে খুব একটা স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায় না।
আর বিমানবন্দরের গেট থেকে ভেতরে ঢোকার আগ পর্যন্ত কোনো তারকার দিকে ক্যামেরা তাক করে অনবরত ক্লিক করতে থাকলে তাঁর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো ছবি পাওয়া যায়।’
পাঠকদের শুধু ছবি দেখালেই তো আর হবে না। তাই এর সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে তারকাদের ফ্যাশনও। কোথাও বেড়াতে গেলে তাঁরা কী পোশাক পরছেন, ব্যাগটি কেমন নিলেন, জিমে কী ধরনের পোশাক পরে শরীরচর্চা করেন—সবকিছু এখন যুক্ত করা হচ্ছে এর সঙ্গে।
আর যদি মূল্যবান মুহূর্তের কোনো ছবি পেয়ে যান, তাহলে সেই পাপারাজ্জিকে পায় কে? তখন অনেক টাকার বিনিময়ে সেই ছবি কিনে নেয় গণমাধ্যম। আবার এই কথিত পাপারাজ্জি পেশার কারণে কেউ কেউ রাতারাতি সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন এমন উদাহরণও পাওয়া যায়।
এসি